চীনের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়ন উপাখ্যান
2022-11-02 11:22:23

নভেম্বর ৩: সিপিসি’র ২০তম জাতীয় কংগ্রেস সাফল্যের সঙ্গে আয়োজনের পরপর কংগ্রেসকে উপজীব্য করে টিভি সিরিজ ‘আমাদের দশ বছর’ দেশের কেন্দ্রীয় মিডিয়া, স্থানীয় প্ল্যাটফর্ম এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে সম্প্রচার করা হয়েছে। চীনা চলচ্চিত্রের বাজারে ‘আমাদের দশ বছর’ গত দশ বছরের পরীক্ষা অতিক্রম করেছে এবং কষ্টের সম্মুখীন হয়ে শক্তিশালী জীবনীশক্তি দেখিয়েছে ও চিত্তাকর্ষক ফলাফল অর্জন করেছে।

 

আজকের অনুষ্ঠানে আমরা চীনা চলচ্চিত্রের বাজার গত দশ বছরে  কেমন ছিল – তার ওপর দৃষ্টি দেব।

 

২০২১ সালের শেষ পর্যন্ত গত দশ বছরে চীনা চলচ্চিত্রের মোট বক্স অফিস আয় ছিল ৪০৭.০৯ বিলিয়ন ইউয়ান। শহরের প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত সিনেমার দর্শক সংখ্যা ছিল ১১.৩ বিলিয়নের বেশি। চীনা চলচ্চিত্রের মোট বক্স অফিস আয় ছিল ২০২০ এবং ২০২১ সালে সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি।

 

২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে ‘লস্ট ইন থাইল্যান্ড’ কমেডি চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পর বক্স অফিস আয় অপ্রত্যাশিতভাবে এক বিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়। চীনা চলচ্চিত্রের উন্নয়নের দশ বছরে বক্স অফিসে দেশীয় চলচ্চিত্রের অনুপাত অনেক বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।

 

২০২১ সাল নাগাদ দেশীয় বক্স অফিস মার্কেট শেয়ারের ৮৪.৪৯ শতাংশ দখল করেছিল।

 

গত দশ বছরে চীনের ফিল্ম অবকাঠামো নির্মাণ দৃঢ়ভাবে এগিয়ে গেছে। থিয়েটার নির্মাণ চীনের বক্স অফিসের দ্রুত প্রবৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে। ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত চীনের থিয়েটারের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। চীনের প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা ২০১৩ সালে ছিলো ৩৬২২টি এবং  ২০২১ সালে ১৪২০১টিতে  দাঁড়িয়েছে।

 

তা ছাড়া, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিনেমার পর্দার সংখ্যাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১২ সালে দেশব্যাপী সিনেমার পর্দার সংখ্যা ছিল ১৩১১৮টি; তবে, ২০২১ সালে তা ৮২,২৪৮টিতে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬ সালের পর থেকে চীনের মূল-ভূখণ্ডে মোট পর্দার সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষস্থান দখল করে আছে। ‘চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনার চীনা চলচ্চিত্রের উন্নয়ন-বিষয়ক পরিকল্পনায়’ নির্ধারিত প্রত্যাশিত লক্ষ্য অনুসারে ২০২৫ সালের মধ্যে চীনে প্রেক্ষাগৃহে পর্দার মোট সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যাবে।

 

বর্তমান দশকে চলচ্চিত্রের সংস্কারও একই সাথে এগিয়ে চলেছে। চীনের জাতীয় বেতার, ফিল্ম এবং টেলিভিশন সাধারণ ব্যুরো ২০১৪ সালে চলচ্চিত্রের বাজার খুলে দিয়েছে এবং  চলচ্চিত্র উন্নয়নের জন্য ব্যক্তিগত তহবিলের প্রবেশাধিকার দিয়েছে। অতীতে প্রতিটি চলচ্চিত্রের প্রযোজক বলতে কেবলমাত্র কয়েকটি নিয়মিত প্রতিষ্ঠান ছিল। বর্তমানে চলচ্চিত্র প্রযোজক, সহ-প্রযোজক এবং বেসরকারি চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমাগত প্রযোজনা করছে। তারা সবাই ফিল্মের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় উপাদান এবং আর্থিক সম্পদ যোগিয়েছে।

 

বেসরকারি পুঁজি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করেছে। ফিল্ম মার্কেটকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করেছে এবং বাজারকে বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, চীনা দেশীয় চলচ্চিত্রগুলো মাত্র ১০ বছরে বিশাল উন্নত হয়েছে। তৃপ্তিদায়ক পরিমাণ ছাড়াও, দেশীয় চলচ্চিত্রগুলোর থিমও আরও বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে। সামরিক, যুদ্ধ, অ্যাকশন, কমেডি, অ্যানিমেশন, বিজ্ঞান এবং কথাসাহিত্য-নির্ভর দুর্দান্ত চলচ্চিত্রগুলো ক্রমাগত তৈরি হচ্ছে। বৃদ্ধ, মধ্য-বয়সী এবং তরুণ তিন প্রজন্মের চলচ্চিত্র নির্মাতারা একসঙ্গে কাজ করে সময়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র তৈরি করছেন।

 

গত দশ বছরে চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশের অর্জন এবং অভিজ্ঞতার দিকে ফিরে তাকালে আমরা দেখতে পাব যে, চলচ্চিত্রের শিল্পকর্ম আরও প্রচুর এবং বৈচিত্র্যময়, এবং নির্মাণ ব্যবস্থা আরও বহু-মাত্রিক এবং বহু-স্তরীয় হয়েছে। সমসাময়িক চীনা চলচ্চিত্র নির্মাতারা তাদের নিজস্ব উপায়ে সময় এবং সামাজিক জীবনের পরিবর্তনগুলোকে চিত্রিত করার ওপর জোর দেন এবং মানুষের কণ্ঠস্বর প্রকাশ করতে আবেগে পরিপূর্ণ ও সময়োপযোগী চীনা গল্প বলে থাকেন। চলচ্চিত্র শিল্পের সৃজনশীলতা ক্রমাগত নতুন অলৌকিক ঘটনা তৈরি করছে।

 

প্রিয় বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে আমরা গত এক দশকে চীনা ডকুমেন্টারি এবং সাই-ফাই চলচ্চিত্রের বিকাশ নিয়ে কথা বলব।

 

প্রথমে চীনা প্রামাণ্যচিত্রের দিকে তাকানো যেতে পারে।

 

সংশ্লিষ্ট নীতির সমর্থনে এবং বাজারের উত্সাহে দেশীয় প্রামাণ্যচিত্রের উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। ২০২১ সালে দেশীয় প্রামাণ্যচিত্রের বক্স অফিস আয় ছিল ২০১২ সালের ৩৪ গুণ। গত দশ বছরে এক গুচ্ছ প্রশংসনীয় প্রামাণ্যচিত্র দেখা গেছে।

 

২০১৭ সালে ‘টুয়েন্টি টু’ প্রামাণ্যচিত্রের দর্শক সংখ্যা ৫৬ লাখ ছাড়িয়ে যায় এবং বক্স অফিসের আয় ছিল ১৭ কোটি ইউয়ানের বেশি, যা দেশীয় প্রামাণ্যচিত্রের বক্স অফিসে রেকর্ড সৃষ্টি করে।

 

২০২১ সালে মহামারী প্রতিরোধ সংক্রান্ত চীনের প্রথম তথ্যচিত্র ‘উহানের দিনরাত্রি’ ২৫৭ জন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এটি ৭০টি শহরে ৩৫৮ বার প্রদর্শিত হয়েছে।

 

চীনের প্রামাণ্যচিত্রের বিষয় ধাপে ধাপে বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে এবং যুগ ও সমাজের আলোচিত বিষয়ের ওপর দৃষ্টিপাত করছে। এসবে মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেয়াসহ আরও ভালোভাবে চীনা গল্প বলা হচ্ছে।

 

এবার সাই-ফাই মুভির ওপর দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে।

 

২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ডোমেস্টিক সায়েন্স ফিকশন ফিল্ম ‘ওয়ান্ডারিং আর্থ’ মুভিটি ভালো আয় করেছে। সে সঙ্গে দর্শকদের সমাদরও পেয়েছে। এর মোট আয় ছিল ৪৬৯ কোটি ইউয়ানের বেশি। দর্শক সংখ্যা ১১ কোটিতে দাঁড়ায়। মুভিটি দেশীয় সাই-ফাই মুভির দরজা খুলে দিয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

 

গত দশ বছরের মধ্যে অনেক সাই-ফাই মুভি একের পর এক দেখা গেছে। তারা বাজারের স্বীকৃতিও পেয়েছে। ২০২০ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র ব্যুরো ‘সাই-ফাই মুভির উন্নয়ন বেগবান সংক্রান্ত প্রস্তাব’ প্রকাশ করেছে। এতে সাই-ফাই মুভি তৈরি, প্রকাশনা, প্রদর্শন, বিশেষ প্রভাব প্রযুক্তি এবং ধীশক্তির প্রশিক্ষণসহ নানা বিষয়ে সমর্থনসহ নির্দেশনা-সংক্রান্ত ১০টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। ফলে এ প্রস্তাব সাই-ফাই মুভির উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ নতুন চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে।

 

চলতি বছরের জুলাই মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মুন ম্যান’ সাই-ফাই মুভির বক্স অফিস আয় ছিল ৩০৯ কোটি ইউয়ানের বেশি। এতে আমরা আরেকবার দেশীয় সাই-ফাই মুভি’র প্রাণবন্ত শক্তি দেখতে পাই। ভবিষ্যতেও এমন আরও অনেক দেশী সায়েন্স-ফাই ফিল্ম আসবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।

 

চাইনিজ সাই-ফাই ফিল্মের উত্থান চীনের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত শক্তির দ্রুত উন্নতি এবং গত এক দশকে মহাকাশ শিল্পের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর প্রতিফলন।

 

লিলি/এনাম/রুবি