গত ৩১ অক্টোবর বেইজিং সময় বিকেল ৩টা ৩৭ মিনিটে ওয়েনছাং উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে নিজস্ব মহাকাশ কেন্দ্রের দ্বিতীয় গবেষণাগার ‘মেংথিয়ান’ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে চীন। নির্দিষ্ট সময় পর এটি মহাকাশ কেন্দ্রের মূল অংশ থিয়েনহ্য’র সঙ্গে যুক্ত হবে; সম্পূর্ণ হবে মহাকাশ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ।
এর আগে, গত ২৪ জুলাই ‘ওয়েনথিয়েন’ নামক প্রথম মহাকাশ গবেষণাগারটি মহাকাশ কেন্দ্রে পাঠায় চীন।
থিয়ান কুং স্পেস স্টেশন ‘টি’ আকারের এবং থিয়ান হ্য মডিউল, ওয়েন থিয়ান ও মেং থিয়ান দুটি পরীক্ষা মডিউল, মনুষ্যবাহী মহাকাশযান ও পণ্যবাহী মহাকাশযানসহ বিভিন্ন অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছে।
মহাকাশে চীন কী কী পরীক্ষা করবে? তিনটি মডিউলে মোট ১৪টি পরীক্ষা ক্যাবিনেট আছে। এসব ক্যাবিনেটের সরঞ্জাম দিয়ে মহাকাশে জীব বিজ্ঞান এবং মানবদেহ গবেষণা, মাইক্রোগ্রাভিটি পদার্থবিদ্যা, মহাকাশ জ্যোতির্বিদ্যা, পৃথিবী বিজ্ঞান এবং নতুন মহাকাশ প্রযুক্তিসহ ৩২টি বিষয়ে পরীক্ষা করবে চীন। এর মধ্যে মেং থিয়ান পরীক্ষা মডিউলে রয়েছে ৮টি ক্যাবিনেট এবং সেখানে মূলত মাইক্রোগ্রাভিটি পদার্থবিদ্যা-বিষয়ক পরীক্ষা করা যাবে।
তিনটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করতে চীন স্পেস স্টেশন নির্মাণ করছে: প্রথমত, বড় আকারের মহাকাশ স্থাপনার নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি এবং কক্ষপথে দীর্ঘসময়ে থাকা। দ্বিতীয়ত, নভোচারীদের জীবনযাপন এবং স্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা আয়ত্ত করা। তৃতীয়ত, জাতীয় মহাকাশ পরীক্ষাগার নির্মাণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীদের জন্য উচ্চ পর্যায়ের গবেষণা প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করা।
এখানে আরেকটি মজার তথ্য আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করি।
আপনারা জানের যে, চীনের আছে চারটি উৎক্ষেপণ কেন্দ্র: চিউ ছুয়ান, থাই ইউয়ান, সি ছাং এবং ওয়েন ছাং উৎক্ষেপণ কেন্দ্র। তবে, থিয়ান হ্য, ওয়েন থিয়ান এবং মেং থিয়ান নামের মডিউলগুলো ওয়েন ছাং উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন জাগে--কেন?
চারটি কেন্দ্রের মধ্যে ওয়েন ছাং একমাত্র সমুদ্রতীরবর্তী কেন্দ্র। বাকি তিনটি কেন্দ্রে কেবিন রেলের মাধ্যমে পাঠানো লাগে। তবে, ট্রেনে বহন করা জিনিসপত্রের মাত্রা ও ওজনের সীমা থাকে। স্পেস স্টেশনের ওজন অনেক বেশি। প্রতিটি অংশের ওজন ২০ টনের বেশি; তাই নৌ পরিবহনের মাধ্যমে এসব কেন্দ্রে পাঠাতে হয়। তা ছাড়া, ওয়েন ছাং চীনের প্রথম নিম্ন-অক্ষাংশ উপকূলীয় লঞ্চ সাইট। এটি শক্তিশালী উৎক্ষেপণে সক্ষম।
চীনা স্পেস স্টেশনের নির্মাণ সম্পন্ন হবার পর চীনের দ্বিতীয় দলের মহাকাশচারীও সেখানে যাবেন। তার মানে তখন স্টেশনে দুটি গ্রুপের মহাকাশচারীকে দেখা যাবে। তাঁরা একসঙ্গে মহাকাশে ৫-১০ দিনের মতো থাকবেন, যা নতুন এক ঐতিহাসিক সাফল্য হবে।
মহাকাশ ক্ষেত্রে এখন চীন যা করতে চায়-তা নিজের দক্ষতার উপর নির্ভর করেই করতে পারে। এটি দেশ শক্তিশালী হবার একটি প্রতীক।
সিপিসির বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গেল দশ বছরে চীনের মৌলিক গবেষণা ও মূল উদ্ভাবন দিন দিন জোরদার হচ্ছে। মনুষ্যবাহী মহাকাশযান, চন্দ্র ও মঙ্গল অনুসন্ধান, সুপার কম্পিউটার, বিমান তৈরি এবং বায়োমেডিসিনসহ নানা ক্ষেত্রে বড় সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
মহাকাশযান ক্ষেত্রে চীন বড় একটি দেশ এবং এখন শক্তিশালী দেশ হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র মহাকাশ প্রকৌশল এবং মহাকাশ বিজ্ঞান উন্নত হলে শক্তিশালী দেশ হতে পারবে চীন। তাই মেং থিয়ানের সফল উৎক্ষেপণের সাথে চীনের স্পেস স্টেশন নির্মাণের সম্পন্ন হওয়াটা চীনের জন্য খুবই অর্থবহ।
শিশির/এনাম/রুবি