নভেম্বর ২: সিপিসির সাধারণ সম্পাদক ও দেশের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আমন্ত্রণে ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিভি) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নগুয়েন ফু ট্রং ৩০ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত চীন সফর করেন। গত ৩১ অক্টোবর দুই নেতা বেইজিংয়ে গণমহাভবনে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দু’পক্ষ মতৈক্যে পৌঁছায় যে, নতুন যুগের চীন-ভিয়েতনাম সার্বিক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারি সম্পর্ককে নতুন ধাপে উন্নীত করা হবে।
সিপিসির বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসের পর নগুয়েন ফু ট্রং হচ্ছেন সি চিন পিং-এর সঙ্গে বৈঠককারী প্রথম বিদেশি নেতা। এটি সিপিভির ১৩তম জাতীয় কংগ্রেসের পর নগুয়েনেরও প্রথম বিদেশ সফর। দু’দেশের সমাজতন্ত্রের উন্নয়ন একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করার সময়ে, দু’পার্টির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এক মত হয়েছেন যে, ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব আরও মজবুত করা হবে, কৌশলগত আদানপ্রদান জোরদার করা হবে, রাজনৈতিক আস্থা উন্নত হবে, এবং বিতর্ক সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তাঁরা কৌশলগত উচ্চতায় দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
বৈঠকে সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং বলেন, চীন ও ভিয়েতনামসহ সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহ নিজ নিজ দেশের আসল পরিস্থিতির আলোকে যুগের প্রবণতা অনুসারে সাফল্যের সঙ্গে তাদের নিজেদের বৈশিষ্ট্যের আধুনিকায়নের পথ অনুসন্ধান করেছে। সমাজতন্ত্রে আরও প্রাণশক্তি দেখা যাচ্ছে।
সিপিসির বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয় যে, চীন আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ সার্বিকভাবে নির্মাণের নতুন যাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। শতবার্ষিক লক্ষ্য বাস্তবায়ন করছে এবং চীনা বৈশিষ্ট্যের আধুনিকায়নের মাধ্যমে চীন তার জাতীয় পুনরুত্থানকে তরান্বিত করছে।
বর্তমানে বিশ্ব নতুন পরিবর্তনশীল সময়ে প্রবেশ করেছে। চীন-ভিয়েতনাম সম্পর্ক কীভাবে আরও উন্নত করা যেতে পারে? এ ব্যাপারে সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং তিনটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। তা হচ্ছে: দু’পক্ষের উচিত সমাজতন্ত্রের অগ্রগতির দিক বজায় রাখা, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত করা এবং ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বকে এগিয়ে নেয়া।
সিপিভির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নগুয়েন ফু ট্রং জানান, সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবের সঙ্গে তিনি সম্পূর্ণরূপে একমত।
চীন ও ভিয়েতনাম উভয় হচ্ছে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে পরিচালিত সমাজতান্ত্রিক দেশ। দু’দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা এক, ধারণা কাছাকাছি, উন্নয়নের পথেরও মিল রয়েছে। সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং জানান, ‘সমাজতন্ত্রের উন্নয়ন ও চীন-ভিয়েতনাম সম্পর্কের জন্য, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সঠিক রাজনৈতিক দিক বজায় রাখা।’ নতুন পরিস্থিতিতে পার্টি ও দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা নিয়ে মত বিনিময়ে দু’পার্টি জোরদার করবে এবং দু’দেশের সম্পর্ক ও উন্নয়নের দিকও দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে। সমাজতন্ত্র আরও প্রাণশক্তি দেখাবে।
অর্থনৈতিক খাতে চীন ও ভিয়েতনাম হচ্ছে পরস্পরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সহযোগিতামূলক অংশীদার। বৈঠকে সি চিন পিং জোর দিয়ে জানান, ‘চিকিৎসা, সবুজ উন্নয়ন, ডিজিটাল অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা-সহ নানা খাতে দু’দেশের সহযোগিতা জোরদার করবে’। তাঁর এ কথা দু’দেশের বাস্তব সহযোগিতায় দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছে।
চীন ও ভিয়েতনাম হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ। দু’দেশের মধ্যে ‘কমরেডশিপ ও ভ্রাতৃত্বের’ ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব রয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী দেখা দেয়ার পর, ভিয়েতনাম সবার আগে চীনকে চিকিৎসা সামগ্রী প্রদানকারী অন্যতম দেশ। পাশাপাশি, চীনও ভিয়েতনামকে সবচেয়ে বেশি কোভিড-১৯ টিকা সরবরাহকারী অন্যতম দেশ। নতুন পরিস্থিতিতে দু’দেশ ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব এগিয়ে নিয়ে দু’দেশের সম্পর্কের উন্নয়নে প্রাণশক্তি যোগাবে।
দুই পার্টির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কৌশলগত দিক-নির্দেশনার আলোকে ভবিষ্যতে দু’দেশের সম্পর্ক অবশ্যই নতুন উচ্চতায় উন্নীত হবে।
(আকাশ/এনাম/ফেইফেই)