নভেম্বর ১: গতকাল (সোমবার) সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও দেশের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেইজিং গণমহাভবনে ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিভি) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নগুয়েন ফু ট্রং-এর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। এ সময় দুপক্ষ ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব আরও মজবুত ও কৌশলগত যোগাযোগ জোরদার করে রাজনৈতিক আস্থা উন্নত করা এবং সুষ্ঠুভাবে বিতর্ক নিয়ন্ত্রণ করে নতুন যুগের চীন-ভিয়েতনাম সার্বিক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে নতুন পর্যায়ে উন্নত করার বিষয়ে একমত হয়।
সিপিসির বিংশতম জাতীয় কংগ্রেস শেষে নগুয়েন ফু ট্রং চীন সফর করেছেন। এ জন্য সি চিন পিং তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।
প্রেসিডেন্ট সি বলেন, ‘কমরেড নগুয়েন ফু ট্রং হচ্ছেন প্রথম বিদেশি নেতা যার সঙ্গে সিপিসির বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসের পর আমি সাক্ষাত করেছি। এবারের সফর সিপিভির ১৩তম জাতীয় কংগ্রেসের পর আপনার প্রথম বিদেশ সফর। তাতে প্রতিফলিত হয় যে, দু’দেশ ও দু’পার্টির সম্পর্কের উন্নয়নকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিই। বর্তমানে সমাজতন্ত্রের উন্নয়ন এবং দু’পার্টি ও দু’দেশের সম্পর্কের উন্নয়নের খাতে চীন ও ভিয়েতনাম যথাক্রমে নতুন সুযোগ ও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আমি ‘কমরেড নগুয়েন ফু ট্রং’র সঙ্গে একযোগে দু’দেশের সমাজতন্ত্রের নির্মাণকাজ এবং দু’পার্টি ও দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে গভীরভাবে মত বিনিময় করতে ইচ্ছুক।’
সি চিন পিং জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমি কমরেড নগুয়েন ফু ট্রং’র সাথে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রেখে আসছি। দু’পার্টির নেতৃবৃন্দ দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মতৈক্যে পৌঁছেছেন। এসব মতৈক্য সার্বিকভাবে বাস্তবায়িত হয়ে অনেক সুফল অর্জিত হয়েছে।
সিপিসির বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসের মূল পরিস্থিতি নগুয়েন ফু ট্রং’র নিকট তুলে ধরে চীনা প্রেসিডেন্ট জানান, নতুন যুগে সিপিসি ও চীন ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, চীনা বৈশিষ্ট্যের সমাজতান্ত্রিক পথ চীনের বাস্তব পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তাতে চীনা জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়। যুগের উন্নয়নের দাবীর সাথেও এটি সঙ্গতিপূর্ণ। এ অগ্রযাত্রা স্থিতিশীল এবং সুষ্ঠুভাবে সঠিক দিকে এগিয়ে চলছে।
সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, বিশ্ব এখন নতুন পরিবর্তনশীল সময়ে প্রবেশ করেছে। চীন ও ভিয়েতনামসহ সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহ নিজ নিজ দেশের আসল পরিস্থিতির আলোকে যুগের প্রবণতা অনুসারে সাফল্যের সঙ্গে তাদের নিজেদের বৈশিষ্ট্যের আধুনিকায়নের পথ অনুসন্ধান করেছে।
দু’দেশের সম্পর্ক আরও উন্নয়নের ব্যাপারে সি চিন পিং জানান, দু’পক্ষের উচিত সমাজতন্ত্রের অগ্রগতির দিক বজায় রাখা। সমাজতন্ত্রের উন্নয়ন ও দু’দেশের সম্পর্কের জন্য সঠিক রাজনৈতিক দিক বজায় রাখা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দুই পার্টির নেতৃবৃন্দের উচিত যোগাযোগ ও বিনিময় জোরদার এবং সময় মত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মত বিনিময় করা। দু’পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ও বিভিন্ন অঞ্চলের বিভাগের উচিত দু’দেশের নেতৃবৃন্দের মতৈক্য বাস্তবায়ন ও আদানপ্রদান এবং বিনিময় উন্নত করা এবং সহযোগিতার সুফল এগিয়ে নেয়া। নতুন পরিস্থিতিতে দু’পার্টির উচিত পার্টি ও দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা আরও বেশি আদানপ্রদান ও মত বিনিময় করা এবং দু’দেশের বাহিনীর উচ্চ মানের যোগাযোগ ও কৌশলগত সংলাপ বজায় রাখা।
সি চিন পিং আরও বলেন, দু’দেশের উচিত চিকিৎসা, সবুজ উন্নয়ন, ডিজিটাল অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা খাতসহ নানা খাতে সহযোগিতা জোরদার করা। দু’পক্ষের উচিত ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব আরও এগিয়ে নেয়া। নতুন পরিস্থিতিতে দু’পক্ষের উচিত ‘কমরেডশিপ ও ভ্রাতৃত্বে’র ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব আরও এগিয়ে নেয়া। বেসরকারি বন্ধুত্বপূর্ণ আদানপ্রদান জোরদার করা এবং দু’দেশের তরুণ প্রজন্মের আদানপ্রদান উন্নত করা।
সি চিন পিং বলেন, আঞ্চলিক কূটনীতি ও ‘এক অঞ্চল এক পথ” উদ্যোগের আওতায় উচ্চ গুণগত মানের সহযোগিতায় আসিয়ানকে অগ্রাধিকার দেয় চীন। আসিয়ানের মধ্যে ভিয়েতনামের অবস্থান ও ভূমিকাকে গুরুত্ব দেয় বেইজিং। ভিয়েতনামের হাতে হাত রেখে শান্তি, উত্তেজনাহীনতা, সমৃদ্ধি, সুন্দর, বন্ধুত্বের ‘ফাইভ হোমসে’র নির্মাণকাজ আরও এগিয়ে নেয়ার প্রত্যাশা করে চীন। প্রকৃত বহুপক্ষবাদকে এগিয়ে নেয়া, আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক শান্তি, শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা, ন্যায্যতা, ও যুক্তিসঙ্গত উপায়ের উন্নয়নে কাজ করা এবং ইতিবাচকভাবে মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি প্রতিষ্ঠাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আসিয়ানের সাথে একযোগে কাজ করতে ইচ্ছুক চীন।
সাক্ষাতের পর, দুই নেতার উপস্থিতিতে দুই দেশ বাণিজ্য, পরিবেশ সুরক্ষা, পর্যটনসহ নানা খাতের সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
(আকাশ/এনাম/ফেইফেই)