বেইজিংয়ে চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণাসংশ্লিষ্ট পাণ্ডুলিপির প্রদর্শনী প্রসঙ্গ
2022-10-31 17:56:02

সম্প্রতি চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণাসংশ্লিষ্ট পাণ্ডুলিপির প্রদর্শনী আয়োজিত হয়। তাতে চীনের শতাধিক বিজ্ঞানীর ১৫০টিরও বেশি গবেষণাপত্র বা পাণ্ডুলিপি, নোটবুক, চিঠি, গবেষণা-নোট, ইত্যাদি স্থান পায়। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণাসংশ্লিষ্ট পাণ্ডুলিপি থেকে চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করবো।

গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমের সংগ্রামী ইতিহাস। গত ৭০ বছরে, প্রযুক্তি খাতে বিদেশি নিষেধাজ্ঞা ও অসহযোগিতার মধ্যেও, চীনের বিভিন্ন প্রজন্মের বিজ্ঞানীরা দেশ ও জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের উন্নয়নের সাথে জড়িত কেন্দ্রীয় ও গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির গবেষণায় নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে উদ্ভাবন সকল দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। উদ্ভাবন একটি দেশের স্বাধীন উন্নয়নের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।

প্রদর্শনী হলে প্রবেশ করলে একটি দিনলিপি দেখা যায়। সেটি চীনের আবহাওয়াবিদ্যা ও ভুগোলবিদ্যার প্রতিষ্ঠাতা চু খ্য চেনের।  জীবনে তিনি প্রায় এক কোটি চীনা অক্ষরের দিনলিপি রচনা করে গেছেন। ১৯৫৬ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি চীনের দশ বছরের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন-পরিকল্পনা প্রণয়নের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত দিনলিপিতে লিখে গেছেন। ১৯৫৬ সালের শুরুতে চীনের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট মাও সে তুং এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একাডেমির বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের রিপোর্ট শুনেছেন।

শিক্ষাবিদ চু খ্য চেন জীববিজ্ঞানের প্রতিনিধি হিসেবে মেজর উন্নয়ন-প্রস্তাব পেশ করেন। দিনলিপিতে তিনি লিখেছেন: সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ওপর এতোটা গুরুত্ব দেবে, কখনও ভাবিনি।’

তাদের বৈঠকের এক সপ্তাহ পর চীনের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন-পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। পরিকল্পনা অনুসারে, বিজ্ঞানের উন্নয়নের পথে যাত্রার শুরু থেকে বিশ্বের উন্নত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মানে পৌঁছাতে চেষ্টা করতে থাকে চীন।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টি বরাবরই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। সিপিসি সবসময় বিভিন্ন খাতের দক্ষ বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণে সময়, মেধা ও অর্থ ব্যয় করে আসছে ও করছে। বিভিন্ন সুবিধাজনক নীতির ফলে, চীনের বিভিন্ন প্রজন্মের বিজ্ঞানীরা দেশপ্রেমের আবেগ নিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতের গবেষণায় তাঁদের নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন এবং চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে অগ্রগতি অর্জন করেছেন। এতে জনগণের জীবনমান উন্নত হয়েছে। তাঁরা চীনা জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

প্রদর্শনী হলে শাংহাই কীটতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের দুটি কাগজ দেখা যায়। সেগুলো কীটতত্ত্ববিদ ইন ওয়েন ইংয়ের পাণ্ডুলিপি। ১৯৭৮ সালের মার্চ মাসে চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্মেলন বেইজিংয়ে আয়োজিত হয়। শিক্ষাবিদ ইন ওয়েন ইং এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এবং সম্মেলনের বিস্তারিত আলোচনার ভিত্তিতে দুই পৃষ্ঠার পাণ্ডুলিপি লেখেন। তাতে তিনি লিখেছেন: ‘চীনের আধুনিক উন্নয়নের জন্য অনেক বিজ্ঞানী প্রয়োজন। আমরা যুদ্ধক্ষেত্রের সৈন্যদের মতো দেশের উন্নয়নে নিজেদের অবদান রাখবো। নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে!’

প্রদর্শনী হলে আরেকজন শিক্ষাবিদের একটি চিঠি রয়েছে। সেটি পরমাণু বিজ্ঞানী ওয়ান চিন ছাংয়ের। ১৯৭৯ সালে তাঁর বয়স প্রায় ৭২ বছর। তখন তিনি সিপিসি’র সদস্য হিসেবে পার্টিতে যোগ দেন। এ চিঠিতে তিনি সিপিসি’র সদস্যদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা শেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং সিপিসি’র নতুন সদস্য হিসেবে আরও বেশি প্রচেষ্টা চালাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। জনাব ওয়াং গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার আগে জন্মগ্রহণ করেন। অতীতের দুর্বল চীন নিয়ে তাঁর দুঃখবোধ ছিল। তিনি জাতীয় যুদ্ধের স্বাক্ষীও বটে। তাঁর কাছে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য বিশেষ তাত্পর্যবহ। তিনি বলেন: ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর দেশ প্রকৃত স্বাধীনতা পেয়েছে। সিপিসি’র নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক দেশ গঠনে সবাই একসাথে পরিশ্রম করছে। একই লক্ষ্য নিয়ে শক্তিশালী দেশ গঠন করাও সম্ভব হয়েছে।’

গত কয়েক দশকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে চীনের ওপর পশ্চিমারা নানান নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাখে এবং অসযোগিতা চালায়। এ পরিস্থিতিতে চীনাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে উন্নয়নের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বরং জোরদার হয়। বিভিন্ন খাতের চীনা বিজ্ঞানীরা নানান উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে নতুন অগ্রগতি অর্জনের চেষ্টা করতে থাকেন। চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতের দ্রুত উন্নয়নের এটা মূল কারণ।

প্রদর্শনী হলে চীনের আণবিক বোমার পিতা ছিয়ান সান ছিয়াংয়ের একটি চিঠিও স্থান পেয়েছে। ১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে বিশ্ব শান্তি রক্ষা সম্মেলন চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাগে আয়োজিত হয়। সম্মেলন চলাকালে শিক্ষাবিদ ছিয়ান সান ছিয়াং মার্কিন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ধাতু ইনস্টিটিউটে কর্মরত চীনা গবেষক ক্য থিং সুইয়ের কাছে চিঠি লেখেন। তিনি গবেষক ক্য-কে লেখেন: ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, দেশের গঠনকাজে আপনাকে স্বাগত জানাই।’

মে মাসে যখন গবেষক ক্য চিঠি পান, তখন তিনি আরেক জন শিক্ষাবিদ ছিয়ান স্যুয়ে সেনকে চিঠি লেখেন। তাতে তিনি লিখেছেন: ‘চীনা কমিউনিস্ট পার্টি দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ ব্যক্তিদের খুঁজছে। যদি আপনার মতো দক্ষ বিজ্ঞানী চীনে ফিরে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত সব চীনা বিজ্ঞানী দেশে ফিরতে উত্সাহিত হবেন। তাঁরাও তখন আপনার মতো চীনে ফিরে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবেন।’

সেই সময় সিপিসি’র নেতৃবৃন্দ শিক্ষাবিদ ছিয়ান স্যুয়ে সেনের সুনাম সম্পর্কে জানতেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তাঁর সাথে যোগাযোগ করেন। প্রায় ৫০ বছর পর, শিক্ষাবিদ ছিয়ান স্যু সেন গবেষক ক্য থিং সুই’র ৮০তম জন্মবার্ষিকীর উদযাপনী অনুষ্ঠানে পাঠানো চিঠিতে লেখেন: ‘৫০ বছর আগে আমাকে লেখা আপনার চিঠির কথা সবসময় মনে করি। আপনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমি চীনে ফিরে এসেছিলাম। সেটি ছিল আমার জন্য গর্বের ব্যাপার।’

১৯৫৭ সালের নভেম্বর মাসে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বাধীন একটি গবেষণা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষাবিদ ছেন চিং সিয়োং চীনের প্রথম প্রজন্মের মহাশূন্য-গবেষক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁদের প্রথম কাজ ছিল ‘১০৫৯ ক্ষেপণাস্ত্র অ্যান্টেনা’ নিয়ে গবেষণা করা। সেটি ছিল চীনে উত্পাদিত ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম অ্যান্টেনা। এই অ্যান্টেনা ক্ষেপণাস্ত্রের চোখের মতো। এটি ঠিক না থাকলে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রের গতিপথ ঠিক থাকবে না।

সেই সময় চীনে রুশ বিশেষজ্ঞদের ডিজাইনকৃত খসড়া ছিল অসম্পূর্ণ। তাই অ্যান্টেনার কেন্দ্রীয় প্রযুক্তি সম্পর্কে কিছু জানা ছিল না। গবেষক ছেন চিং সিয়োং প্রায় শূন্য থেকে গবেষণা-কাজ শুরু করেন। তিনি তাঁর দল নিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রের অ্যান্টেনা ডিজাইনের তত্ত্ব গবেষণা করেন। তিনি কেবল রুশ ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের অভিজ্ঞতা অনুসরণ করেননি, বরং নিজের গবেষণা ও বিজ্ঞানের তত্ত্ব থেকে নতুন কিছু উদ্ভাবনের চেষ্টা করেন। ফলে তিনি সাফল্যের সঙ্গে চীনের নিজস্ব ডিজাইনের অ্যানটেনা তৈরি করতে সক্ষম হন।

নতুন যুগে বিজ্ঞানীদের গবেষণা-কাজ দেশের উন্নয়নে আরও বেশি ভুমিকা পালন করেছে। চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একাডেমির শিক্ষাবিদ ওয়াং ইয়াং ইউয়ান চীনা চিপস তৈরিতে আজীবন প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। প্রদর্শনী হলে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১২০তম বার্ষিকী এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠার ৪০তম বার্ষিকীতে শিক্ষাবিদ ওয়াংয়ের দেওয়া ভাষণ তুলে ধরা হয়েছে। তাতে তিনি লিখেছেন: ‘যদি আমরা এই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে না-পারি, তাহলে অন্যরা সবসময় আমাদের দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করবে। তাই আমি অবশ্যই এ সমস্যা সমাধান করবো। এটি দেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ও এ খাতে বিজ্ঞানীদের অবদান রাখার শ্রেষ্ঠ সুযোগ।’

তিনি উদাহরণ দিয়ে লিখেছেন: ‘আমাদের দেশ রেশম পোকা পালনের মতো আমাদের প্রশিক্ষণ দেয়। এখন আমাদেরকে বিভিন্ন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে রেশম তৈরি করতে হবে।’

চীনের রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ওয়াং চেন ই’র একটি লিউকেমিয়া শ্রেণিবিন্যাস পাণ্ডুলিপি প্রদর্শনীতে ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান তীব্র লিউকেমিয়া রোগের প্রতিরোধক ওষুধ গবেষণা আবিষ্কার। সেটি বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ওষুধ। এটি অনেক রোগীর চিকিত্সায় ব্যবহৃত হয়েছে ও হচ্ছে। এ পাণ্ডুলিপির মাধ্যমে আমরা একজন বিজ্ঞানীর চিন্তাভাবনা কিছুটা বুঝতে পারি।

তাঁর চিকিত্সার মূল লক্ষ্য ছিল ক্যান্সার সেলগুলো সংশোধন করা। যখন তীব্র লিউকেমিয়া রোগের প্রতিরোধক ওষুধ আবিষ্কার করেন, তখন তিনি তা পেটেন্ট করে টাকা আয়ের চেষ্টা করেননি। তিনি ওষুধের মূল্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করেন। ফলে বহু রোগী এ ওষুধ ব্যবহারের সুযোগ পায়। এ আবিষ্কারের কারণে তিনি চীনের সর্বোচ্চ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পুরস্কার লাভ করেন। এ সম্পর্কে চিকিত্সক ওয়াং বলেন, ‘আমি খেয়াল করি যে, আমার এ আবিষ্কার মাত্র একটি নির্দিষ্ট ধরনের তীব্র লিওকেমিয়া রোগের চিকিত্সায় কার্যকর। অথচ তীব্র লিওকেনিয়ার ধরণ অনেকগুলো। অন্য সব ধরনের লিউকেমিয়ায় আক্রান্তদের চিকিত্সায় এ ওষুধ অকার্যকর। সেটি ছিল আমার জন্য দুঃখের ব্যাপার। কারণ, টানা কয়েক দশক কাজ করে আমরা কেবল এক ধরনের তীব্র লিওকেমিয়া সমস্যার সমাধান করতে পেরেছি মাত্র।’

এ লেখার মাধ্যমে আমরা চিকিত্সক ওয়াংয়ের মনের কষ্ট উপলব্ধি করেত পারি, রোগীদের জন্য তাঁর আন্তরিকতা টের পাই।

প্রদর্শনী হলে বিরল ধাতু, ধাতুবিদ্যা ও উপাদান বিশেষজ্ঞ লি তুং ইংয়ের দিনলিপিও অনেক দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ১৯৪৯ সালের জুলাই মাসে তিনি শেনইয়াং শহরের একটি খনি সম্পদ কারখানার মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান এবং স্থানীয় খনি উত্পাদন কাজের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ১৯৫১ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে তিনি টানা কয়েক দশক ধরে দিনলিপি লিখে গেছেন।

তাঁর দিনলিপিতে কেবল তিনি দৈনন্দিন জীবন রেকর্ড করেননি, বরং কর্মপরিকল্পনা ও কাজের দৈনিক অগ্রগতিসহ বিভিন্ন বিষয় লিপিবদ্ধ করেছেন। প্রতি পৃষ্ঠার দিনলিপিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণায় তাঁর গভীর মনোভাব দেখা যায়। বহু বছর ধরে তাঁর নেতৃত্বে চীনে ৩০ ধরনের বেশি বিরল ধাতু উত্পাদিত হয়েছে। এভাবে ‘দুই ক্ষেপণাস্ত্র, এক উপগ্রহ’-সহ অনেক সামরিক ও শিল্প প্রকল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়েছে।

কেবল গবেষণার পাণ্ডুলিপি নয়, প্রদর্শনী হলে বিজ্ঞানীদের বাড়ির চিঠিও সংগ্রহ করা হয়েছে। এমন চিঠিতে বিজ্ঞানীদের দেশপ্রেম ও দেশের জন্য অবদান রাখার আকাঙ্খা প্রকাশ পেয়েছে। যেমন, কৃষিবিজ্ঞানী তিং ইং তাঁর মেয়েকে লেখা চিঠিতে মেয়েকে স্কুলে যত বেশি সম্ভব জ্ঞান অর্জনের উত্সাহ দেন। তিনি চান তাঁর মেয়ে বড় হয়ে দেশের উন্নয়নে নিজের অবদান রাখবে। তাঁর দুই মেয়েকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতেও উত্সাহ দেন তিনি। তাদের জন্মস্থান দক্ষিণ চীনে। ছোটবেলায় তারা উষ্ণ আবহাওয়াতে বড় হয়েছে। তবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর তারা উত্তর চীনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। তিনি তাদের ভালো করে কাজ করার জন্য বলেন। তিনি সবসময় মেয়েদের বলতেন: ‘তোমরা আমার মেয়ে, তবে দেশের সম্পদ। তাই দেশের উন্নয়নে তোমাদের আরো বেশি পরিশ্রম করতে হবে। কখনও অলসতা দেখানো চলবে না।’

বস্তুত, নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে যেসব সাফল্য অর্জিত হয়েছে, তা বিভিন্ন প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের পরিশ্রমের ফল। তাদের দেশপ্রেম ও দেশের জন্য কাজ এসব সাফল্যের ভিত্তি। চীনের উন্নয়ন ও চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের চীনা স্বপ্ন বাস্তবায়নের চাবিকাঠিও বটে। তাদের আচরণ ও চেতনা যুব বিজ্ঞানীদের ওপর ইতিবাচক প্রভাবও ফেলবে ও ফেলছে। তরুণ বিজ্ঞানীরাও চীনের উন্নয়নে নিজেদের ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে।

 (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)