বিশ্বের জন্য নিরাপত্তা প্রস্তাব কেন দরকার?
2022-10-31 16:03:34

বিশ্বের জন্য নিরাপত্তা প্রস্তাব কেন দরকার? এ বিষয়ে আলোচনার আগে আমি আপনাদের জিজ্ঞেস করতে চাই যে, আপনারা কেমন নিরাপদ বোধ করেন? আপনাদের উত্তর কি হবে- তা জানি না। তবে আমার মনে হয়, সারা বিশ্বে নিরাপত্তা দিন দিন কমে যাচ্ছে। যুদ্ধ, সন্ত্রাসী হামলা এবং সংঘাত আমাদেরকে অনিরাপদ করে তুলছে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের বিষয়টি বলার আর দরকার নেই, কারণ তা সবাই জানেন। মধ্য এশিয়ায় আর্মেনিয়া-আজারবাইজান গত বছর যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষর করেছে। সম্প্রতি দু’দেশের মধ্যে আবারও যুদ্ধ শুরুর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আফ্রিকার ইথিওপিয়ার অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ, লিবিয়ার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি, মধ্য প্রাচ্যের সিরিয়া ও ইয়েমেনের যুদ্ধ, বলকান অঞ্চলের সার্বিয়া ও কসভোর মধ্যে সংঘাত চলছে।

 

   রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে ব্যাপক ক্ষতি

জাতিসংঘ উন্নয়ন পরিকল্পনা সদরদপ্তর গত ফেব্রুয়ারি ও সেপ্টেম্বরে পৃথক ‘পৃথিবীর সর্বশেষ ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে মানব জাতির নিরাপত্তার নতুন হুমকি’ এবং ‘২০২১-২০২২ সালে মানব জাতির উন্নয়ন প্রতিবেদন’ প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, মানব জাতির নিরাপত্তা বোধ ইতিহাসে সর্বনিম্নে নেমেছে। করোনা মহামারির আগে থেকেই বিশ্বে সাত জনের মধ্যে ৬ জন নিরাপত্তাহীন বোধ করে আসছে। মহামারি সে ভয়টা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভয়, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং  ভয়াবহ জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা হুমকির মিশ্রণে কয়েক দশক ধরে উন্নয়নের সাফল্য ম্লান হয়ে আসছে। টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নের অগ্রযাত্রার পথ থেকে ছিটকে পড়েছে বিশ্ব। তাতে মানব জাতির নিরাপত্তাহীনতার বোধ বৃদ্ধি পাবে।

 

বিভিন্ন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়ে বিশ্বের জনগণ একটি নিরাপদ বিশ্ব গঠনের প্রত্যাশা করছে। এমন প্রেক্ষাপটে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং’র উত্থাপিত বিশ্ব নিরাপত্তা প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা খুব জরুরি ও প্রয়োজন।  বিশ্ব নিরাপত্তা প্রস্তাব আন্তর্জাতিক সমাজের বিশ্ব শান্তি রক্ষা এবং অভিন্ন উন্নয়ন সাধনের আশাআকাঙ্খার প্রতিফলন, যা বিভিন্ন দেশের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও উন্নত বিশ্ব গঠনে নির্দেশনা দিয়েছে।

 

মানব জাতির উন্নয়নের ইতিহাস ও বাস্তবতা বরাবরই প্রমাণ করেছে যে, স্নায়ুযুদ্ধের চিন্তা বিশ্ব শান্তির কাঠামোর লঙ্ঘন। আধিপত্যবাদ ও শক্তির রাজনীতি কেবল বিশ্ব শান্তির ক্ষতি করে। দলীয় বৈরিতা কেবল মানব জাতির সভ্যতা নষ্ট করে। বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, দুটি বিশ্বযুদ্ধে মানব জাতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ২ কোটি এবং দ্বিতীয়টিতে ৭ কোটি মানুষ নিহত হয়েছে।

 


রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কুপ্রভাব স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে। রয়টার্সের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ সংঘাতে ৪৬ হাজার মানুষ নিহত এবং ১ কোটি ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় গৃহহীন হয়েছে, এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৫৬,৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। এ সংঘাত ইঙ্গিত দেয় যে, বড় দেশগুলো ইরাক, আফগানিস্তান ও লিবিয়া যুদ্ধ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে নি। যার ফলে সে সব স্থানের লোকজন এখনও দুর্যোগ পোহাচ্ছে এবং পুনর্বাসনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বিশ্বের এ অস্থিতিশীলতা মোকাবিলা করে টেকসই শান্তি বাস্তবায়ন করতে চাইলে আন্তর্জাতিক সমাজের উচিত বিশ্ব নিরাপত্তা প্রস্তাব  বাস্তবায়ন করা। তাতে পারস্পরিক সমঝোতা ও সম্মান করাসহ নানা বাস্তব কর্মকাণ্ড খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা করতে হবে এবং অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা উচিত। সংলাপ ও বৈঠকের মাধ্যমে বিতর্ক ও মতভেদ দূর করতে হবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে সংকট মোকাবিলার যে কোনো প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে হবে। বিভিন্ন দেশের উচিত একই নৌকায় চলে বিশ্ব ব্যবস্থা সুবিন্যস্ত করা এবং জিরো-সাম খেলা বাদ দেওয়ার পাশাপাশি বহুপক্ষবাদ এবং জাতিসংঘ-কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক আইন-ভিত্তিক শৃঙ্খলা মেনে চলা।

 

বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এ প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য উপযোগী এ প্রস্তাব। এ প্রস্তাব অবশ্যই আরও আন্তর্জাতিক শক্তিকে একত্রিত করে অস্থিতিশীল বিশ্বকে বিরল শান্তিপূর্ণ শক্তি যোগাবে এবং আরও নিরাপদ বিশ্ব গঠনে চীনের অবদান নিশ্চিত করবে।

 

(রুবি/এনাম)