মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি: প্রেসিডেন্ট সি’র অসামান্য তাত্ত্বিক অবদান
2022-10-30 19:43:30

২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের জেনভিায় জাতিসংঘ কার্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক আলোচনায় ‘মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি গঠন করা’ শিরোনামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং। ওই ভাষণে তিনি মানব জাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটির ধারনা ও এ বিষয়ে চীনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

প্রেসিডেন্ট সি তাঁর ভাষণে বলেন, মানবজাতি বড় আকারের উন্নয়ন, সংস্কার ও সমন্বয়ের পর্যায়ে রয়েছে। পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে চীনের প্রেসিডেন্ট তাঁর পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন বিশ্ববাসীর সামনে।   

পরবর্তীতে বিভিন্ন ফোরামে প্রেসিডেন্ট সি তাঁর এ ধারনা বহুবার গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। গত ৫ বছরে অস্থিতিশীল বিশ্বপরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট সি উপস্থাপিত মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটির ধারনা জোরালো ভিত্তি পেয়েছে এবং বিশ্বের নিরাপত্তা ও উন্নয়নে দিকনির্দেশনা দিচ্ছে।

সবশেষ গত ১৬ অক্টোবর চীনের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিসির ২০তম জাতীয় কংগ্রেসে প্রতিবেদনেও মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি প্রতিষ্ঠার জোর প্রচেষ্টা চালানোর কথা বলেছেন সিপিসি সাধারণ সম্পাদক। সি বলেন, চীন সর্বদা বিশ্বশান্তি বজায় রাখার এবং অভিন্ন উন্নয়ন প্রচারের বৈদেশিক নীতি মেনে চলবে, মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাবে।   

গত ২৫ অক্টোবর চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া ‘নতুন যাত্রার পথনির্দেশক সি চিনপিং’ শিরোনামে ২০ হাজার শব্দের একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে- যেখানে চীনের সর্বোচ্চ নেতা সি চিনপিংয়ের রাজনীতি ও জীবনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে এবং তাঁর দেশ-প্রশাসনের চিন্তাধারা ও তাত্ত্বিক ভিত্তি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রবন্ধে বলা হয়েছে, সি চিন পিং মানবসভ্যতার বৈচিত্রের প্রশংসা করেন। তাঁর উত্থাপিত মানবজাতির অভিন্ন ভাগ্যের কমিউনিটি চেতনা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সনদ এবং সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি জাতিসংঘ সনদেও গৃহীত   হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট সির মানবজাতির অভিন্ন ভবিষ্যতের কমিউনিটির এ ধারণাটি বিশ্বের নানা প্রান্তের জ্ঞানী-গুণী মহলে প্রশংসিত হয়েছে। ২৯ অক্টোবর চীনের রাষ্ট্রীয় বেতার সিনহুয়ার এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সমাজবিজ্ঞানী  মার্টিন অ্যালব্রো প্রেসিডেন্ট সি’র এ ধারণাটিকে ‘অসামান্য তাত্ত্বিক অর্জন’ বলে অভিহিত করেছেন।

ব্রিটিশ একাডেমি অফ সোশ্যাল সায়েন্সেসের ফেলো অ্যালব্রো বলছেন, ‘যখন আপনি মানুষের একটি অভিন্ন ভবিষ্যতের কথা বলেন, তখন আপনি সেই জিনিসগুলি নিয়ে কথা বলেন যা আমরা ভবিষ্যতে একসাথে করতে পারি, এমন একটি ভবিষ্যৎ নয় যেখানে আমরা সবাই একই রকম।

অ্যালব্রো ১৯৮০’র দশক থেকে চীনে একাধিক সফর করেছেন এবং চীনের উন্নয়ন ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। পশ্চিমে বিশ্বায়ন অধ্যয়নের অন্যতম পাইওনিয়ার অ্যালব্রো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের উন্নয়ন, ব্যবস্থা এবং শাসনের ওপর ব্যাপক গবেষণা করেছেন।

অ্যালব্রো বলেন যে তিনি প্রথম ‘সি চিনপিংয়: দ্য গভর্ন্যান্স অফ চায়না’ বইটিতে একটি অভিন্ন ভবিষ্যতের মানব সম্প্রদায়ের ধারণাটি পেয়েছিলেন এবং তিনি সি’র ‘ধারণার যৌক্তিক এবং তাত্ত্বিক অনুসন্ধান’ দ্বারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছিলেন।

অ্যালব্রো বলেন, ভবিষ্যতের জন্য, আপনার সর্বদা বিকাশশীল ধারণা থাকতে হবে, এবং সি চিনপিং এটিই করেন। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে, তিনি একেবারে অসামান্য।

এ ভাবেই তিনি এ ধারণা নিয়ে বছরের পর বছর গবেষণা চালিয়ে যান।  সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ‘চায়নাস রোল ইন অ্যা শেয়ার্ড হিউম্যান ফিউচার: টুওয়ার্ডস থিওরি ফর গ্লোবাল লিডারশিপ’ এবং ‘চায়না এন্ড শেয়ার্ড হিউম্যান ফিউচার: এক্সপ্লোরিং কমন ভ্যালুস এন্ড গোলস’ শিরোনামে দুটি বই প্রকাশ করেছেন তিনি।

গত এপ্রিলে তার নতুন বইয়ের উদ্বোধনের সময়, অ্যালব্রো বলেন যে অভিন্ন ভবিষ্যত নিয়ে একটি মানব সম্প্রদায় গড়ে তোলার ধারণাটি ছিল সমস্ত মানুষসহ সংস্কৃতির মধ্যে অভিন্নতা ছাড়াই সম্প্রীতির প্রাচীন চীনা ধারণাকে নতুন করে তুলে ধরা।

নিজের নতুন বইতে, ব্রিটিশ পণ্ডিত লিখেছেন, কোভিড-১৯ পরিপূর্ণতা দেখিয়েছে যে বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য এবং একটি অভিন্ন ভবিষ্যতের মানব সম্প্রদায় গড়ে তুলতে মানুষের জন্য একসাথে কাজ করা অপরিহার্য।

অ্যালব্রো বলছেন, চীন এখন, তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ –বিআরআইয়ের মাধ্যমে তার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঐতিহ্যগত সীমানা ছাড়িয়ে একটি বিস্তৃত বিশ্বে তার অনন্য জাতীয় অভিজ্ঞতা নিয়ে যাচ্ছে। শাসনের পশ্চিমা-অনুপ্রাণিত মডেলগুলির থেকে প্রস্তাবটির প্রধান পার্থক্য হল যে এটি নিয়ম আরোপ করার পরিবর্তে ভাগ করা লক্ষ্যগুলির দিকে নজর দেয় এবং এটি সাধারণ লক্ষ্য এবং ভাগ করা প্রকল্পগুলি খুঁজে পাওয়ার চেতনায় অন্যান্য সংস্কৃতির সাথে যোগাযোগ করে।

অ্যালব্রো বলেন, মানব প্রজাতির বৈশ্বিক ভবিষ্যত- এমন একটি বিষয় যা বিশ্বের সর্বত্র মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সেখানে অনেক কিছু করা দরকার। তাই চীন এতে নেতৃত্ব দিতে পারে।

ব্রিটিশ সমাজবিজ্ঞানী যথার্থই বলেছেন, চীন মানব জাতির অভিন্ন ভবিষ্যৎ কমিউনিটি প্রতিষ্ঠায় সত্যিই নেতৃত্ব দিতে পারে। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এরই মধ্যে তার এ ধারণাকে সম্প্রসারিত করেছেন এবং গত ২১ এপ্রিল বোআও এশিয়া ফোরামে প্রথমবারের মতো বিশ্ব নিরাপত্তা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন।

এটি এক অঞ্চল এক পথ প্রস্তাব ও বিশ্ব উন্নয়ন প্রস্তাবের পর বিশ্বকে দেওয়া আরেকটি যুগান্তকারী প্রস্তাব। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি ধারণার প্রতিফলন হিসেবে প্রেসিডেন্ট সি’র সবশেষ এ প্রস্তাবটিকে দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল। 

মাহমুদ হাশিম

ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।