রোববারের আলাপন- চীন ২০৩১ সালে নারী ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের আবেদন করবে
2022-10-30 06:36:36

আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আকাশ এবং ... 


আকাশ: তৌহিদ ভাই, আমরা আগে একবার ক্রিকেট নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করেছিলাম, মনে আছে? আমাদের শ্রোতাদের মধ্যে অবশ্যই অনেকে ফুটবল ভালবাসেন, এজন্য আমরা আজ ফুটবল নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করব, কেমন?


বন্ধুরা, চীনে ফুটবল অনেক জনপ্রিয়। এর প্রতি জনগণের বিশেষ ভালোবাসা আছে। আমার হাই স্কুলে পড়ার সময়, আমাদের স্কুলে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হতো প্রতি বছর। প্রত্যেক ক্লাসে একটি ফুটবল দল ছিল। আমিও সেই ক্লাসের দলে অংশগ্রহণ করতাম। আমি মূলত গোলকিপার ছিলাম। তখন আমরা একসঙ্গে প্রশিক্ষণ নিতাম এবং ফুটবল খেলতাম। যা একটি অবিস্মরণীয় কৈশোরের স্মৃতি।


ভাই, আমি বাংলাদেশে যাবার পর, আমি আবিষ্কার করেছি যে, বাংলাদেশের বন্ধুরাও ফুটবল খুব পছন্দ করে। আমি একবার মাঠে তাদের সঙ্গে ফুটবল খেলেছিলাম। অনেক আনন্দ পেয়েছিলাম আমরা সবাই। ফুটবল আমাদের খেলাধুলা জগতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভাই, বাংলাদেশের ফুটবল খেলাধুলা ইতিহাস, উন্নয়ন বা আপনার ও আপনার বন্ধুদের কিছু মজার গল্প ও স্মৃতি কিছু আছে কি? 

তৌহিদ:...


সংগীত 

বন্ধুরা, আমরা এখন চীনের নারী ফুটবল নিয়ে একটি খবর জানাবো।


চীনের ক্রীড়া সাধারণ প্রশাসনের খবরে বলা হয়, সম্প্রতি ‘চীনের নারী ফুটবল সংস্কার ও উন্নয়ন পরিকল্পনা (২০২২ সাল-২০৩৫ সাল) প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, চীন ইতিবাচকভাবে ২০৩১ সাল নারী ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের আবেদন করবে।


পরিকল্পনা অনুযায়ী চীনের নারী ফুটবল উন্নয়নের জন্য নানা ব্যবস্থা নির্দিষ্ট করা হয়। এতে পরিকল্পনা করা হয়, ২০৩৫ সাল পর্যন্ত, চীনের নারী ফুটবলের সার্বিক উন্নয়ন বাস্তবায়িত হবে। ফুটবল নারীদের মাঝে মাঝে অংশগ্রহণের ক্রীড়া পরিণত হবে। চীন ইতিবাচকভাবে ২০৩১ সাল নারী ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজনের আবেদন করবে। চীনের নারী ফুটবল দল ২০৩১ সালের নারী ফুটবল বিশ্বকাপ ও ২০৩২ সালের অলিম্পিক গেমসের ফুটবল ম্যাচের শীর্ষ তিনের মধ্যে থাকার চেষ্টা করবে।


ভাই, চীন আসলেই নারী খেলাধুলাকে অনেক গুরুত্ব দেয়। নারীরাও খেলাধুলা বা শরীরচর্চায় অংশগ্রহণ করতে অনেক আগ্রহী। 

আপনি বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল সম্পর্কে কিছু বলুন।


তৌহিদ: বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বর্তমানে খেলছেন মালদ্বীপের নারী ফুটবল লিগে। ধিবেহি সিফাইং ক্লাবের হয়ে মালদ্বীপের মাঠ মাতাচ্ছেন এই বাংলাদেশের স্টাইকার। গত ১৪ অক্টোবর এমওয়াইএস ক্লাবকে ২৬-০ গোলে হারিয়েছে ধিবেহি সিফাইং। দলের পক্ষে একাই ১১ গোল করেছেন সাবিনা খাতুন। 

ধিবেহি সিফাইং ক্লাবের হয়ে খেলা আরেক বাংলাদেশি খেলোয়াড় মাতসুসিমা সুমাইয়াও করেছেন ৬ গোল। এই ম্যাচ জয়ে লিগে টানা দুই ম্যাচ পেলো ধিবেহি সিফাইং। দুই ম্যাচ জিতে ৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে আছে সাবিনা-সুমাইয়ারা। এর আগে ১২ অক্টোবর লিগের প্রথম ম্যাচে ফেনেকার বিপক্ষে ৪-০ গোলে জয় পায় ধিবেহি সিফাইং। সেই ম্যাচে ১ গোল করেছিলেন সাবিনা। সাবিনাদের পরের ম্যাচ ১৭ অক্টোবর এমপিএলের বিপক্ষে।

..........


সাবিনা খাতুন নেপালে অনুষ্ঠিত নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ৮ গোল করে বাংলাদেশের শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। টুর্নামেন্টে গোল্ডেন বুটসহ সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন এই গোলমেশিন।


২০০৩-০৪ সালে যাত্রা শুরু বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের। প্রথম বাংলাদেশ দলের অবস্থা এমনই ছিল যে ঢাকায় পশ্চিমবঙ্গের দলের বিপক্ষে খেলার জার্সি তাদের ছিল না। শেষ পর্যন্ত পুরুষ সাফে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের জার্সি পরিয়ে নামিয়ে দেয়া মহিলা দলকে। এই দলের ফুটবলাররা আবার কেউ সাঁতারু, কেউ অ্যাথলেট, হ্যান্ডবল খেলোয়াড় ইত্যাদি।


এরপর ধীরে ধীরে মহিলা জাতীয় দল গঠনে জোর দেয়া, আর আন্তর্জাতিক ফুটবলের গন্ডি বলতে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে গিয়ে ম্যাচ খেলা। ২০০৬ সালে সাহস করেই এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলের বাছাই পর্বে অংশ নেয় বাংলাদেশ। দুই ম্যাচে কিরগিজস্তানের কাছে ০-৬ এবং ভারতের কাছে ০-৯ হেরে মিশনে সমাপ্তি। ২০১৪ সালে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে লাল-সবুজ মেয়েদের ৯-০ তে হারায় থাইল্যান্ড। সিনিয়র লেভেলে সেটিই এখন পর্যন্ত বড় হার।


অথচ মাঠে নামার ১৯ বছর না যেতেই সেই বাংলাদেশ এখন সাফ চ্যাম্পিয়ন। আর অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে তো টানা দুই আসর ধরে এশিয়ার সেরা সাত দলের একটি তারা। তাদের চোখ এখন সিনিয়র লেভেলে এশিয়ার সেরাদের কাতারে থাকা।


এই তো সেদিনও বাংলাদেশ মহিলা দল মানেই ছিল প্রতিপক্ষের হালি গোলের উৎসব। গত বছর উজবেকিস্তানে অনুষ্ঠিত এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ইরান ও জর্ডানের কাছে ০-৫ গোল করে হজম। ২০১৮ সালে মিয়ানমারে অলিম্পিক গেমস ফুটবল বাছাইয়ে ভারত ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল সাবিনাদের। ভারতকে এবার সেই হিসেব চুকিয়ে দেয়া হয়েছে।


২০১০ সালে ঢাকা এসএ গেমসে বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয়ের স্বাদ ২-০ গোলে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে। এরপর পাকিস্তানকে ১-০তে হারিয়ে ব্রোঞ্জ অর্জন। সে বছরই কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত প্রথম মহিলা সাফ ফুটবলে ভুটানের বিপক্ষে পাওয়া ৯-০ গোলের জয় এখন পর্যন্ত সাবিনাদের সবচেয়ে বড় জয়।

বাংলাদেশের মেয়েরা যে আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোছানো, পরিকল্পিত ও তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফুটবল খেলতে পারে সে জানান দিয়েছিল ২০১০ সালে কমলাপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলের বাছাই পর্বে। ভারত ও ইরানের কাছে ০-৬ এবং জর্ডানের কাছে ১-৬ গোলে হারলেও প্রথমার্ধে দুর্বার ছিলেন সাবিনা-মিরোনারা। নেতিয়ে যায় দ্বিতীয়ার্ধেই।


এরই ধারাক্রমে ২০১৪ সালের এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবলের বাছাই পর্বে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ১-০ গোলে হারিয়ে দেয় জর্ডানকে। সাফ অঞ্চলের গন্ডি পেরিয়ে সেটিই ছিল গোলাম রাব্বানী ছোটন বাহিনীর প্রথম বড় সাফল্য। এরপর ২০১৬ ও ২০১৮ সালে দুই দফা এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে চূড়ান্ত পর্বে যাওয়া।

মহিলা ফুটবলে প্রথম শিরোপা জয়ের স্বাদ ২০১৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৪ রিজিওনাল ফুটবলে নেপালকে ফাইনালে ১-০তে হারিয়ে। এর আগে তারা পরাজিত করেছিল ইরান ও ভারতকে। ২০১৭ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলের ট্রফি জয় দিয়ে আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্বের শুরু মারিয়া মান্ডাদের। পরের বছর অনূর্ধ্ব-১৮ সাফের শিরোপাও জয় করেন মিসরাত জাহান মৌসুমীরা।

গত বছর অনূর্ধ্ব-১৯ মহিলা সাফের ট্রফি জয়ের পর এবার এলো সাফ শিরোপাও। এসবই এসেছে ধারাক্রমে। বাফুফে সারা বছর ধরেই মহিলা ফুটবলারদের ক্যাম্পে রেখে ট্রেনিং করানোর ফলই আজ পাচ্ছে দেশের মহিলা ফুটবল।

দলটি এখন এতটাই সংগঠিত যে হাই র‌্যাংকিংয়ের মালয়েশিয়া, ভারত, নেপাল বা হংকং কেউই পাত্তা পাচ্ছে না। ২০১৯ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে বিশ্বকাপে খেলা অস্ট্রেলিয়া তো বাধ্য হয়েছিল ২-২ গোলে ড্র করতে। যেকোনো বিশ্বকাপে খেলা দলের বিপক্ষে এটাই বড় অর্জন তহুরা খাতুনদের।

এখন বাকি মহিলা এশিয়ান কাপ, এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ এবং অলিম্পিক গেমস বাছাই ফুটবলে সাফল্য পাওয়া।

(আকাশ/তৌহিদ)