জাতীয় কংগ্রেসে উত্থাপিত ‘কর্মপ্রতিবেদন’ তৈরির আদ্যপান্ত
2022-10-28 13:59:09

গত ১৬ অক্টোবর সকাল দশটায় বেইজিং গণমহাভবনে মহাসমারোহে শুরু হয় চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) বিংশতম জাতীয় কংগ্রেস। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সিপিসি’র ঊনবিংশ জাতীয় কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে কর্মপ্রতিবেদন পেশ করেন।

ত্রিশ হাজার শব্দের সে প্রতিবেদনে  তিনি সার্বিকভাবে গত ৫ বছরের কার্যক্রম এবং নতুন যুগের দশ বছরের মহান বিপ্লবের সারসংক্ষেপ উত্থাপন করেন। কর্মপ্রতিবেদনে চীনকে সার্বিকভাবে সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশে পরিণত করার নতুন অগ্রযাত্রা এবং দ্বিতীয় শতবর্ষের পরিশ্রমের লক্ষ্য বাস্তবায়নের নকশা তৈরি হয়েছে।

         ১৬ অক্টোবর, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সিপিসি'র ঊনবিংশ জাতীয় কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে সিপিসি'র বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসে  কর্মপ্রতিবেদন পেল করেন

 

এ কর্মপ্রতিবেদন কিভাবে তৈরি হলো?  সিপিসি’র বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসের প্রস্তুতিকাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে এমন একটি কর্মপ্রতিবেদন তৈরি করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কর্মপ্রতিবেদনে পুরো পার্টি ও দেশের মেধাও জনগণের সদিচ্ছা তুলে ধরা হয়েছে এবং পার্টি ও দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সমাজে এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

 

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এ কর্মপ্রতিবেদনের খসড়ার ওপর খুব গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট কাজে অনেক মনোযোগ দিয়েছেন। গত জানুয়ারিতে সি চিন পিং সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরোর এক সভায় সভাপতিত্ব করেন। এ সভায় সিপিসি’র বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসের কর্মপ্রতিবেদন তৈরির গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি সে গ্রুপের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সম্মেলনের আয়োজন এবং কর্মপ্রতিবেদন তৈরির কাজ শুরুর ঘোষণা করেন। এর প্রতিপাদ্য হলো কর্মপ্রতিবেদনের আত্মা। এ নিয়ে অনেক চিন্তা করেছেন সি চিন পিং। এ সভায় সি চিন পিং বলেন, কর্মপ্রতিবেদনে এমন একটি প্রতিপাদ্য থাকতে হবে যা দলীয় ও নির্দলীয় এবং দেশি-বিদেশি সবাইকে জানাতে হবে। সিপিসি তার নতুন অগ্রযাত্রায় কি পতাকা তুলে ধরে, কোন পথে এগিয়ে যাবে, এবং কেমন অবস্থায় কি ধরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে-এসব তাতে থাকতে হবে।

 

গত মার্চ মাসে কর্মপ্রতিবেদন তৈরি গ্রুপের দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন এবং ১৭ মে তৃতীয় অধিবেশন আয়োজিত হয়। আর ২৭ জুন চতুর্থ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেছেন সি চিন পিং। সবাই মিলে কর্মপ্রতিবেদনের প্রথম স্ক্রিপ্ট নিয়ে আলোচনা করেন।

“কর্মপ্রতিবেদন তৈরিতে সম্পূর্ণভাবে গণতন্ত্রের সম্প্রসারণ করতে হয়। গবেষণা ও জরিপ জোরদার করে ব্যাপকভাবে অভিমত সংগ্রহ করতে হয়। যাতে বিভিন্ন পক্ষের মেধা একত্রিত করা যায়”। কর্মপ্রতিবেদন তৈরির শুরুতেই একথা জোর দিয়ে বলেছেন সি চিন পিং।

সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটির আয়োজনে ৫৪টি সংস্থা ২৬টি প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে জরিপের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। সংস্থাগুলো ৮০টি জরিপ প্রতিবেদন তৈরি করেছে, তাতে ১৩ লাখ ২৭ হাজার শব্দ রয়েছে। টানা ৩ মাসের জরিপে বিভিন্ন প্রতিপাদ্য গ্রুপ ১৫০১টি আলোচনাসভা, ও ১৮টি ভিডিও আলোচনাসভার আয়োজন করেছে।

 

গত ১৫ এপ্রিল থেকে ১৬ মে পর্যন্ত সিপিসি’র বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসের সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পর্কে ইন্টারনেটে অভিমত গ্রহণের অনুষ্ঠান শুরু হয়। এটি সিপিসি’র ইতিহাসে প্রথম সারা দেশে অভিমত গ্রহণের আয়োজন।

 

গত ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মপ্রতিবেদন খসড়ার সংশোধনের জন্য ১৫৭০টি অভিমত প্রদান করেছে বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন বিভাগ। ১৪৩৫টি অভিন্ন অভিমত কমানোর পর নীতিগত অভিমতের পরিমাণ হয় ১৭৩টি। বিস্তারিত অভিমতের পরিমাণ ছিল ১২৬২টি।

(রুবি/এনাম)

অবশেষে ১৬ অক্টোবর সিপিসি’র বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কর্মপ্রতিবেদন ২৩শ প্রতিনিধি ও বিশেষ প্রতিনিধির সামনে পেশ করা হয়েছে। কংগ্রেস চলাকালে বিভিন্ন প্রতিনিধি দল ও প্রতিনিধিদের আলোচনার পর কর্মপ্রতিবেদন আরও সংশোধন করা হয়েছে।

এ কর্মপ্রতিবেদনে রয়েছে ৩টি অধ্যায় ও ১৫টি অংশ। ত্রিশ হাজার শব্দের এ কর্মপ্রতিবেদনে ৩০০টিরও বেশি নতুন ধারণা উত্থাপন করা হয়েছে। কর্মপ্রতিবেদন তৈরিতে জনগণের অংশগ্রহণে সম্পূর্ণভাবে গণতন্ত্রের প্রতিফলন হয়েছে।