অক্টোবর ২৫: গ্রিসের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং চীনের বৈদেশিক অর্থনৈতিক বাণিজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ গবেষণাকেন্দ্রের গবেষক পেলাজিয়া কারপাথিওতাকি সম্প্রতি বলেছেন, চীন গোটা মানবজাতির স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।
তিনি বলেন, ২০২২ সাল নিঃসন্দেহে আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল। এ বছর এমন সব ঘটনা ঘটছে যা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সৃষ্ট পরিস্থিতির সাথে তুলনা করলে, বিশ্বে আজ সম্ভাব্য গুরুতর নিরাপত্তা সমস্যা রয়েছে। মহামারী, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সংঘাত এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ফলাফল, ইউরোপীয় ইউনিয়নে জ্বালানি সংকট পশ্চিমা বিশ্বে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে।
রাজনৈতিক স্তরে, অনেক পশ্চিমা সরকার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অস্থির। কোনো কোনো সরকার অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো ব্রিটেন। অর্থনৈতিক স্তরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং জ্বালানি সংকট পশ্চিমে অশান্তির সৃষ্টি করেছে। সামাজিক স্তরে, নজিরবিহীন ‘দরিদ্রতা’ সমাজকে আরও অস্থির করে তুলেছে, কেউ ভবিষ্যতে কী হবে বলতে পারে না এবং পশ্চিমা বিশ্ব তার পথ হারিযে ফেলেছে বলে মনে হয়।
এই অস্থির আন্তর্জাতিক পরিবেশে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি’র) নেতৃত্বে, চীন একবিংশ শতাব্দীর বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার নীতি মেনে চলছে, ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর পরিকল্পনা করছে, এবং এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে একটি আধুনিক দেশ এবং একটি সমৃদ্ধ সমাজতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলা।
সিপিসি’র সদ্যসমাপ্ত কুড়িতম জাতীয় কংগ্রেসের কর্ম-রিপোর্টে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনের সকল দিক কাভার করে, আগামী পাঁচ বছরের কর্ম-পরিকল্পনার একটি সামগ্রিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতের জন্য এতে বিস্তারিতভাবে সিপিসির পরিকল্পনা ও দৃষ্টিভঙ্গি পেশ করা হয়েছে। এই কর্ম-রিপোর্ট থেকে দেখা যায় যে, ইতোমধ্যেই পরিকল্পিত সংস্কার কেবল যে সিপিসি’র সঙ্গে জড়িত তা নয়, বরং অর্থনীতি, সমাজ, পররাষ্ট্রনীতি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সঙ্গে সম্পর্কিত।
বাস্তবতা থেকে প্রমাণিত যে, চীনের বর্তমান ও ভবিষ্যত সিপিসি’র নেতৃত্ব ও চীনা জনগণের সংগ্রামের ওপর নির্ভর করছে। সিসিপি বিশ্বের বৃহত্তম ক্ষমতাসীন দল। সিপিসি’র প্রতিষ্ঠার পর থেকে, পরিচালনা ও সিদ্ধান্তগ্রহণের পদ্ধতির পাশাপাশি পার্টিসদস্যদের দক্ষতা এবং পেশাদারিত্ব বিকাশ লাভ করেছে ও করছে। পার্টির মধ্যে বিদ্যমান দুর্নীতি দূর করার ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় সিপিসি। কারণ, দুর্নীতি হল পার্টির প্রাণশক্তি ও কার্যকারিতার ‘ক্যান্সারস্বরূপ’। একই সময়ে, চীন সমগ্র প্রক্রিয়ায় জনগণের গণতন্ত্র বাস্তবায়ন করছে এবং নির্বাচন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিয়ে চলেছে।
আন্তর্জাতিক স্তরে, চীন আবারও স্পষ্ট করে বলেছে যে , তারা কখনই আধিপত্য বা সম্প্রসারণ চাইবে না, এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতির ভিত্তিতে অন্যান্য দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা বিকাশের ওপর জোর দেবে। যুক্তরাষ্ট্র একটি নতুন শীতল যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়, আন্তর্জাতিক সমাজকে পশ্চিম এবং প্রাচ্যে বিভক্ত করতে চায়, যা যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের (প্রধানত ইউরোপীয় ইউনিয়ন) ওপর চাইয়ে দেওয়ার একটি মূল হাতিয়ার। কারণ, তারা বিশ্বাস করে যে, সব স্তরে চীন থেকে পশ্চিমকে বিচ্ছিন্ন করা হলে চীনের আরও উন্নয়ন বিলম্বিত হবে। অথচ চীন স্পষ্টভাবে বিশ্বের শান্তি ও অভিন্ন উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে চলেছে এবং অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকে মেনে চলার উদাহরণ স্থাপন করেছে।
সামাজিক স্তরে, কর্ম-রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিতরণ ব্যবস্থার উন্নতি, ন্যায্য সুযোগের প্রচার, নিম্ন আয়ের লোকদের আয় বৃদ্ধি, মধ্যম আয়ের গোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। এটি জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এখনও অস্থিতিশীল। এ অবস্থায় চীন ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি দেয়, যা সমগ্র মানবজাতির স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। আজকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, একটি ইউনিট হিসেবে মানবজাতির সম্মুখীন সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। এ সমস্যা কোনো একক দেশের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। বিশ্বের শান্তি, বিশ্ববাসীর মঙ্গল, জলবায়ু সংকট মোকাবিলা, ইত্যাদির জন্য বিশ্বের সকল দেশকে একযোগে কাজ করতে হবে। চীন ও সিপিসি বরাবরই এই বার্তা প্রচার করে যাচ্ছে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)