প্রত্যেক সাধারণ মানুষ ধনী জীবন চায়
2022-10-27 19:12:28

আমরা প্রত্যেক সাধারণ মানুষ ধনী জীবন চাই! আসলে হাজার বছর ধরে চীনা জাতি সবসময় অভিন্নভাবে ধনী হওয়ার সুন্দর আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে আসছে। অল্প মানুষকে ধনী করা সহজ, কিন্তু দেশের সব মানুষের যৌথভাবে ধনী হওয়া কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়? এটি শুনতে একটি অসম্ভব ব্যাপার মনে হয়। তবে, তা এখন চীনের বিভিন্ন জায়গায় ঘটছে।

সিছুয়ান প্রদেশের আ বু লুও হা গ্রাম, এই নামের অর্থ হল ‘পাহাড়ের মধ্যে গভীর উপত্যকা। তিন পাশে পাহাড়, আরেক পাশে খাঁড়া উঁচু পাহাড়। গ্রামবাসীরা বাইরে থেকে গ্রামে কিছু পাঠাতে ঘোড়ার পিঠে করে মালামাল বহন করত। সময় লাগত ২/৩ দিন। ২০১৯ সালের জুন মাসে আ বু লুও হা গ্রামে সড়ক নির্মাণকাজ শুরু হয়। তবে ভৌগোলিক অবস্থা অনেক জটিল হওয়ায় চার মাসের মধ্যে শুধু তিন কিলোমিটার সড়কপথ তৈরি হয়েছিল। অনেক কঠিনতা অতিক্রম করে অবশেষে পথটি চালু হয়। এখন গ্রামবাসীরা ফোন করলে সব কিছুই বাসার সামনে হাজির হয়ে যায়।

 

তাহলে আ বু লুও হা গ্রামের ৬৫টি পরিবারের ২৫৩ জনের জন্য খাড়া উঁচু পাহাড়ে ৩.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ৪.৫ মিটার চওড়া পথ নির্মাণে কত খরচ হলো? কিছু দেশ বা অঞ্চল হয়তো বরাদ্দ হিসাব করে, তবে চীনে যা জনসাধারণের প্রয়োজন, তা করতে দ্বিধা করে না সরকার। তা জনসাধারণের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগে। চীনের গ্রামের বিদ্যুত্ সরবরাহের নির্ভরতার হার ৯৯ শতাংশ। এর পিছনে বিদ্যুত্ অবকাঠামো নির্মাণে সরকার যে বরাদ্দ দিয়েছে, তাতে হয়তো ১০০ বছরেও মুনাফা হবে না। দেশে গ্রামাঞ্চলের জন্য ৮০টিরও বেশি গণকল্যাণমূলক ‘ধীর গতির ট্রেন’ চলছে। যার টিকিটের দাম অনেক বছর ধরে কখনোই বাড়ে নি।

গত দশ বছরে চীনে উন্নয়নের সুফল আরো ন্যায়সঙ্গতভাবে সব মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। ২০২১ সাল পর্যন্ত চীনে মৌলিক চিকিত্সাবীমায় অংশগ্রহণকারী মানুষের পরিমাণ ১৩৬ কোটিরও বেশি হয়েছে। এতে দেশের ৯৫ শতাংশেরও বেশি মানুষ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। চীনে বিশ্বের বৃহত্তম আকারের সামাজিক নিশ্চয়তা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

এসব শক্তিশালী ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণের সুখের অনুভূতি অনেক বেড়েছে। যা অভিন্নভাবে ধনী হওয়া বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শক্তিশালী নিশ্চয়তা দিয়েছে।

গত জুন মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সিছুয়ান পরিদর্শন করেছেন। জিমি প্রজেক্টর টেকনোলোজি কোম্পানিতে তিনি কোম্পানির উদ্ভাবন, গবেষণা ও বিক্রির ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন। যা একটি তরুণের বিজ্ঞানভিত্তিক কোম্পানি। বিশেষ করে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং ইনটেলিজেন্ট আপডেটে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। গত দুই বছরে কোম্পানিটি স্থানীয়দের জন্য হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

 

সি চিন পিং বলেন, চীন হল বিশ্বের কারখানা। তবে চীনের উচিত উত্পাদন খাতে শক্তিশালী দেশ হওয়া। আধুনিকায়ন বাস্তবায়ন করতে চাইলে চীনকে বিভিন্ন খাত জোরদার করতে হবে।

উন্নয়ন হল দেশের সব সমস্যা সমাধানের ভিত্তি। ২০২১ সালে চীনের জিডিপি ছিল ১১৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। যা আগের বছরের তুলনায় ৮.১ শতাংশ বেশি। দেশের আয়ের পরিমাণ ২০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১০.৭ শতাংশ বেশি। জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৮.১ শতাংশ। চীনে সব মানুষের ধনী হওয়া বাস্তবায়নের ভিত্তি আরো মজবুত হয়েছে।

 

চীনে দশ হাজারেরও বেশি নেটিজেনের অংশগ্রহণ ‘যৌথভাবে ধনী’ হওয়া সম্পর্কিত এক ভোটে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উঠে এসেছে। তা হলো— জীবন আরো ভালো হবে, আয় আরো বাড়বে, প্রায় অর্ধেক নেটিজেন আশা করে শিক্ষা, চিকিত্সা, অবসর বীমা, পরিবেশ সম্পর্কিত গণসেবা আরো উন্নত হবে। কেউ বলে, যৌথভাবে ধনী করার কাজ শুধু সরকার করে। শুধু সবাই একসাথে চেষ্টা করলে যৌথভাবে ধনী হওয়া যায়।

যৌথভাবে ধনী একটি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য, তাড়াহুড়া করে বাস্তবায়ন করা যায় না। কিছু উন্নত দেশ কয়েকশ’ বছর চেষ্টা করলেও সামাজিক ব্যবস্থার কারণে এখনো যৌথভাবে ধনী হাওয়ার বিষয়ে সফল হয় নি। দরিদ্র ও ধনীর ব্যবধান আরো বাড়ছে।

 

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছিলেন, আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে, ভালোভাবে প্রতিটি ছোট কাজ করতে হবে। চীনের চতুর্দশ পাঁচসালা পরিকল্পনা শেষ নাগাদ, চীনে নাগরিকদের আয় এবং ভোগের মানের ব্যবধান আরো কমবে। ২০৩৫ সাল নাগাদ, দেশে সবাই যৌথভাবে ধনী হওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করবে। সবাই সমানভাবে গণসেবা পাবে। এই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে চীনে সবাই যৌথভাবে ধনী হবে।