অক্টোবর ২৬: গত ২৪ অক্টোবর ‘সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠানগুলোর চীনের সঙ্গে কৌশল বিন্যাস-২০২২’ শীর্ষক সম্মেলন জুরিখে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুইজারল্যান্ড-চীন অর্থনীতি সমিতি, সুইজারল্যান্ড কেন্দ্র ও সুইজারল্যান্ড অর্থনীতি সমিতির যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় এ সম্মেলন।
সম্মেলনে ১৫০ জনেরও বেশি অতিথি অংশগ্রহণ করেছেন। বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী চীনের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের কৌশলের ওপর চীনের সদ্য সমাপ্ত সিপিসি’র বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসের প্রভাব তুলে ধরেন এবং সুইজারল্যান্ড-চীন অবাধ বাণিজ্য চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। অতিথিরা ২০২২ সালে চীনের উন্নয়ন এবং সুইজারল্যান্ডের অর্থনীতির ওপর তার প্রভাবসহ নানা বিষয় আলোচনা করেছেন।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা সিপিসি’র বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসের কর্ম-প্রতিবেদনের প্রশংসা করে বলেন, কংগ্রেসের সাফল্য চীনের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে নীল নকশা তৈরির পাশাপাশি সুইজারল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং আস্থা যোগিয়েছে।
সুইজারল্যান্ড-চীন অর্থনীতি সমিতির চেয়ারম্যান ফেলিক্স এম সুটার সিএমজিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, সিপিসি’র বিংশতম জাতীয় কংগ্রেস গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদান করেছে।
তিনি বলেন, ‘পাঁচবছর পর অনুষ্ঠিত সিপিসি’র বিংশতম জাতীয় কংগ্রেস একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যার মধ্য দিয়ে চীনের পরবর্তী উন্নয়নের দিক, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের রহস্য এবং পরবর্তী পাঁচ বছর কোন কোন খাতে নজর রাখা হবে- তা স্পষ্ট হয়েছে। গত কয়েক দশক ধরে সুইজারল্যান্ড ও চীন সহযোগী ও অংশীদারের ভূমিকা পালন করেছে। কীভাবে আমরা দু’দেশের এ অবস্থা বজায় রাখবো, কীভাবে সহযোগিতা জোরদার করবো এবং কীভাবে বাজার, গবেষণা ও কাঁচামাল অর্জনসহ পারস্পরিক সুবিধা কাজে লাগাবো এবং কীভাবে দু’দেশের সুবিধা যুক্ত করে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করবো—এসব নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে।’
অংশগ্রহণকারী অতিথিরা মনে করেন, সিপিসি’র বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসে চীন অব্যাহতভাবে সংস্কার গভীরতর, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির উদ্ভাবন বেগবান এবং অভিন্ন সমৃদ্ধি বাস্তবায়নসহ নানা ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তিকে জোরদারে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাবে চীন। চীনে অগ্রসর প্রযুক্তির অব্যাহত উন্নতির চাহিদা এবং দেশীয় ভোগ্যের অব্যাহত বৃদ্ধি এখনও দেশটিতে সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নের বিন্দু। তাঁরা সুইজারল্যান্ড-চীন সম্পর্ক এবং দু’দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার ভবিষ্যৎ নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছেন।
সুইজারল্যান্ড কেন্দ্রের বোর্ড চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা নিকোলাস মুসি সিএমজিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন,‘চীনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সুযোগের ওপর সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠানগুলো নজর রাখছে। আমার মনে হয়, কংগ্রেসে উদ্ভাবন ও হাইটেক উন্নয়নসহ নানা খাতে যে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, তা সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অনুকূল হবে। যার মানে, সুইজারল্যান্ড হাইটেক পণ্য উৎপাদনে প্রচুর পরিমাণে প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম প্রদান করতে পারবে। সুইজারল্যান্ড কেন্দ্রের বেশ কিছু গ্রাহকের কাছ থেকে আমরা জেনেছি, চীনে তাদের উন্নয়নের সুযোগ আরও বেড়েছে।’
সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ওয়াং শি থিং অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে তিনি অংশগ্রহণকারী অতিথিদের সিপিসি’র বিংশতম জাতীয় কংগ্রেসের চেতনা তুলে ধরেন।
চায়না মিডিয়া গ্রুপকে দেওয়া সাক্ষাতকারে ওয়াং শি থিং বলেন, সুইজারল্যান্ড সিপিসি’র বিংশতম জাতীয় কংগ্রেস সমাপ্ত হওয়ার পরপরই আলোচনাসভার আয়োজন করেছে। চীনের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন দু’দেশের সহযোগিতার জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি করবে।
তিনি বলেন,‘সিপিসি’র বিংশতম জাতীয় কংগ্রেস ভবিষ্যতে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকনির্দেশনা দিয়েছে। ফলে আগামিতে অনেক সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হবে। বিশেষ করে চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়ন সুইজারল্যান্ডের জন্য অনেক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। চীন ও সুইজারল্যান্ড প্রযুক্তিগত উন্নয়নে একে অপরের পরিপূরক। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও পরিবেশ রক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। চীন অব্যাহতভাবে সার্বিক সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ গভীরতর করবে, যা সুইজারল্যান্ডের ব্যবসার খাতে দৃঢ় আস্থা তৈরি করবে’।
(রুবি/এনাম/শিশির)