১৬ অক্টোবর, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম জাতীয় কংগ্রেস বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং ১৯তম কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পেশ করেন। এ প্রতিবেদনে "মানুষ ও প্রকৃতির সুরেলা সহাবস্থানের আধুনিকীকরণ"-কে "চীনা-শৈলীর আধুনিকীকরণ"-এর একটি অংশ হিসেবে উত্থাপন করা হয় এবং আবারও নতুন যুগে চীনের পরিবেশগত সভ্যতা নির্মাণের কৌশলগত কাজকে স্পষ্ট করে তোলা হয়।
আমাদের লক্ষ্য হল একটি সুন্দর চীন গড়ে তোলা, যেখানে "পাহাড় সবসময় সবুজ থাকবে, নদনদী থাকবে পরিচ্ছন্ন, এবং আকাশ থাকবে সবসময় পরিষ্কার"।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, চীনের পরিবেশের উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে। ২০২১ সালে দেশব্যাপী শহরগুলোতে পিএম২.৫-এর গড় ঘনত্ব ২০১৫ সালের তুলনায় ৩৪.৮% কম ছিল, এবং বায়ুর গুণগত মান ভালো মানে থাকা দিনের সংখ্যা ছিল ৮৭.৫%। ২০২১ সালে দূষিত পানির অনুপাত ১.২%-এ নেমে আসে। মাটি দূষণের ঝুঁকিও কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, এবং শক্ত বর্জ্যের "শূন্য আমদানি" লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয়। "বিদেশী আবর্জনা" দেশে প্রবেশের ওপর সম্পূর্ণ নিষিধাজ্ঞা কার্যকর হয়।
২০২০ সালে চীনে কার্বন নির্গমনের তীব্রতা ২০০৫ সালের তুলনায় ৪৮.৪% কমে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে চীনের দেওয়া প্রতিশ্রুতির চেয়ে বেশি। ২০২১ সালে চীনের মোট জ্বালানি-শক্তির খরচে কয়লার অনুপাত ২০০৫ সালের ৭২.৪% থেকে ৫৬%-এ নেমে আসে। আর অ-ফসিল জ্বালানি-শক্তির ব্যবহারের অনুপাত ১৬.৬% উন্নীত হয়। নবায়ণযোগ্য শক্তির উত্পাদন ক্ষমতা ১ বিলিয়ন কিলোওয়াট ছাড়িয়ে যায় এবং বায়ু, সৌর, জল এবং বায়োমাস বিদ্যুত উত্পাদনের ক্ষমতার দিক দিয়ে চীন বিশ্বে প্রথম স্থান অর্জন করে।
একই সময়ে, চীন সক্রিয়ভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বের সাথে সহযোগিতা করে যায় এবং বিশ্বব্যাপী "সবুজকরণ"-এর প্রধান শক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকে।
জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অভিন্ন স্বার্থের সাথে জড়িত। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বহুবার জোর দিয়ে বলেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করা চীনের টেকসই উন্নয়নের জন্য যেমন প্রয়োজন, তেমনি মানবজাতির অভিন্ন-লক্ষ্যের কনিউনিটি গঠনের জন্যও জরুরি। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম জাতীয় কংগ্রেসের রিপোর্টে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, শিল্প পুনর্গঠন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। সক্রিয়ভাবে এবং অবিচলিতভাবে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হবে।
চীন পরিবেশগত সভ্যতা নির্মাণ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের সামগ্রিক বিন্যাসে কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্যকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। চীন দূষণ ও কার্বন হ্রাসে সমন্বয়ের সাথে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের একটি ব্যাপক সবুজ রূপান্তর উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালাবে। ২০২১ সালে, চীনের জাতীয় জিডিপির প্রতি ইউনিটে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন ২০১২ সালের তুলনায় ৩৪.৪% হ্রাস পায়। নবায়নযোগ্য জ্বালানি-শক্তির বিকাশ ও ব্যবহারের স্কেল এবং বিদ্যুত-চালিত গাড়ির উত্পাদন ও বিক্রয় উভয় ক্ষেত্রেই বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করে চীন।
চীন হল এমন একটি দেশ যেখানে বনজ সম্পদ সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিশ্বের বৃহত্তম বৃক্ষরোপণ এলাকা আছে। চীনকে বলা যায় বিশ্বব্যাপী "সবুজকরণ"-এর প্রধান শক্তি। চীনে সফলভাবে জাতীয় কার্বন বাজার চালু হয়েছে, যাকে কার্যকরভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য জাতীয় কৌশলও প্রকাশ করেছে চীন। এর মাধ্যমে অভিযোজিত শহর নির্মাণের জন্য পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চীনে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতার উন্নতি অব্যাহত রয়েছে।
প্রকৃতি মানুষের বেঁচে থাকার ও বিকাশের মৌলিক শর্ত। প্রকৃতিকে সম্মান করা, প্রকৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং প্রকৃতি রক্ষা করা আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশের জন্য জরুরি। সবুজ এবং স্বল্প-কার্বন উন্নয়ন মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সুরেলা সহাবস্থানের ভিত্তি। (স্বর্ণা/আলিম/হাইমান)