গত দশ বছরে চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি
2022-10-24 14:28:53


সিপিসি’র অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং’র নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় কমিটি চীনা জাতির মহান পুনরুত্থান ও বিশ্বের শতবছরের অদেখা পরিবর্তন সমন্বয় করে সমস্ত চীনাদের নিয়ে দুর্যোগ কাটিয়ে উঠেছে এবং চীনের অর্থনীতির গুণগত মানসম্পন্ন অগ্রগতি অর্জন করেছে।

 

চীনের বর্তমান জিডিপি ১১৪.৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। এটি ২০১২ সালের তুলনায় ১.৮ গুণের বেশি। 


গত বছরে জিডিপিতে তৃতীয় শিল্পের মূল্য সংযোজনের পরিমাণ ৫৩.৩ শতাংশ, যা ২০১২ সালের চেয়ে ৭.৮ শতাংশ বেশি। প্রক্রিয়াজাত ও পরিষেবা শিল্প আরও উন্নত হয়েছে।

 

২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনীতি প্রবৃদ্ধিতে চীনের অর্থনীতির গড় অবদান হার ৩৮.৬ শতাংশ, যা জি-সেভেন দেশগুলোর মোট অবদানকে ছাড়িয়েছে। চীন বিশ্ব অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির প্রথম চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। সে সব অগ্রগতির পিছনে রয়েছে অসাধারণ কার্যক্রম। 


২০১২ সালের পর আন্তর্জাতিক অর্থ সংকটের কুপ্রভাব রয়ে গেছে। চীনের অর্থনীতি দ্রুত উন্নয়নের পথে প্রবেশ করেছে। সে সময় দীর্ঘকালের কাঠামোগত দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। সে সন্ধিক্ষণে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং “অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন সাধারণ অবস্থা’ উত্থাপন করেছেন।

ছিং হুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন উন্নয়ন বিষয়ক কর্মসূচী গবেষণালয়ের স্থায়ী উপ-মহাপরিচালক তোং ই বলেছেন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সে সময়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও উন্নয়নের প্রবণতায় সচেতন হয়ে পার্টির ভাবনা ও কর্মতৎপরতা একত্রিত করেছেন। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পদ্ধতির নতুন রূপদান বেগবান হয়েছে।

 

সরবরাহের কাঠামোগত সংস্কারকে কেন্দ্র করে কার্যকারিতা ও গুণ উন্নত করা হয়েছে। কৃষি খাতে সুষ্ঠু বীজের হার বেড়েছে। ধান, ভুট্টা, গম ক্ষেতে যান্ত্রিকায়নের হার ৯০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। শিল্প ক্ষমতা ব্যবহারের হার ৭৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৭.৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। নতুন শিল্প, নতুন রূপ, নতুন ফরম্যাট ও নতুন ব্যবসার পদ্ধতিতে অর্থনীতির পরিমাণ ২০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বৃদ্ধি পেয়েছে। চীনের অর্থনীতির পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গুণগত মানও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

নতুন যুগে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং উদ্ভাবন, সমন্বয়, সবুজায়ন, উন্মুক্তকরণ ও অভিন্ন কল্যাণ-ভিত্তিক নতুন উন্নয়নের ধারণা উত্থাপন করেছেন। চীনের অর্থনীতি গুণগত মানসম্পন্ন উন্নয়নের পথে প্রবেশ করেছে।

 

চীনে উদ্ভাবনী উন্নয়নে চালিকাশক্তির পরিবর্তন হয়েছে। গত দশ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতির অবদানের হার ২০১২ সালের ৫২.২ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। চীন উদ্ভাবক দেশের সারিতে স্থান পেয়েছে। 


চীনের সমন্বিত উন্নয়নে অভ্যন্তরীণ কাঠামোর পরিবর্তন হয়েছে। গত দশ বছরে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে উন্নয়নের কার্যক্রম স্থিতিশীলভাবে বেগবান করা হয়েছে। মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলে পূর্বাঞ্চলের তুলনায় দ্রুত উন্নয়ন হয়েছে। নগরায়নের হার ৫৩.১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৪.৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। জেলা ও থানার নাগরিকদের গড় আয়ের ব্যবধান ক্রমশই কমে যাচ্ছে।

 

চীনে সবুজায়নে জ্বালানির কার্যকারিতা উন্নত হয়েছে। গত দশ বছরে চীনে বার্ষিক জ্বালানি ভোগের বৃদ্ধির হার ছিল ৩ শতাংশ, তবে চীনের বার্ষিক জিডিপি’র বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৫ শতাংশ। জ্বালানি ব্যয়ের হার ২৬.২ শতাংশ কমেছে। দূষণমুক্ত জ্বালানি ব্যবহারের পরিমাণ মোট পরিমাণের চার-ভাগের-এক-ভাগ ছাড়িয়েছে। 

চীনের উন্মুক্ত উন্নয়ন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটিয়েছে। গত দশ বছরে চীনের বাণিজ্যিক পরিমাণ ২০১২ সালের ৪.৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২০২১ সালের ৬.৯ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চীনা পণ্যের পরিমাণ ১১ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তাতে সার্বিক ও উচ্চ পর্যায়ের উন্মুক্তকরণের কাঠামো গঠন করা হয়েছে।

 

 চীন বর্তমানে সার্বিক সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ গঠনের যাত্রা শুরু করেছে। এ যাত্রায় চ্যালেঞ্জ ও দুর্যোগ কাম্য নয়। একশ’ চল্লিশ কোটি চীনাদের যৌথ প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমে চীন নামের এ জাহাজ অবশ্যই ঢেউ অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাবে। 

(রুবি/এনাম)