চীনে এসে নিজেদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে চায় আরও বেশি বিদেশী
2022-10-24 15:44:53

লেসোথো থেকে আসা আফ্রিকান মেয়ে লি নুও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হবার পর চীনে আসেন উচ্চ শিক্ষা লাভ করার জন্য। এখানে তিনি চীনের আরও বড় হয়ে যাওয়া আকর্ষণীয় শক্তি অনুভব করেছেন। তিনি চীনের উন্নয়নের সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের জন্য আরও বড় অগ্রগতি অর্জন করতে চান।

 

সম্প্রতি তিনি নিংসিয়া হুই জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইনছুয়ানে গিয়ে দ্বিতীয় চীন আন্তর্জাতিক ওয়াইন কালচার ট্যুরিজম এক্সপোয় অংশ নিয়েছেন। বেইজিংয়ে ফিরে আসার পর তিনি খুব পুলকিত হন। স্থানীয় কৃষক নিংসিয়া’র বৈশিষ্ট্যময় জলবায়ু ও মাটি কাজে লাগিয়ে নুড়ি সৈকতকে আঙুর ক্ষেতে পরিণত করেছে। ফলে আগের মরুভূমি মরুদ্বীপে পরিণত হয়েছে। লি নুও বলেন, আমি সবেমাত্র নিংসিয়া গিয়েছি। একটি অঞ্চল আগে মরুভূমি ছিল। কিন্তু এখন তারা আঙুর চাষ করে, ওয়াইন তৈরি করে। সেখানে অনেক ওয়াইন দুর্গ আছে। নিংসিয়া’র ওয়াইন শিল্প স্থানীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। সেখানকার ওয়াইন খুব মজা। অনেক বৈদেশিক প্রতিষ্ঠান ও বিদেশী নিংসিয়ায় ওয়াইন সংশ্লিষ্ট শিল্পে কাজ করে। তাছাড়া, সেখানে অনেক বিদ্যুৎ উত্পাদন প্রকল্প আছে। আপনি দেখতে পাবেন সৌরশক্তি বিদ্যুৎ উত্পাদন কেন্দ্র এবং বায়ুশক্তি বিদ্যুৎ উত্পাদন কেন্দ্র।

 

লি নুও আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় লেসোথো থেকে এসেছেন। তার বাবা ব্যবসায়িক কারণে নিয়মিত চীনে যাতায়াত করেন। ছোটবেলা থেকে বাবা’র কাছ থেকে চীনের অনেক গল্প শুনেছেন। তাঁর বাবা চীন থেকে তাঁর জন্য বিভিন্ন ধরনের জিনিস নিয়ে এসেছেন। তখন থেকে লি নুও নিজের স্বপ্ন ঠিক করেছেন। সেটা হলো চীনে আসা। দক্ষিণ আফ্রিকায় দু’বছর চাকরি করার পর তিনি চীনে মাস্টার্স পড়ার সুযোগ পান। লেখাপড়া সম্পন্ন করার পর তিনি চীনে থেকে গিয়ে আফ্রিকান কুয়াংতোং জেনারেল চেম্বার অফ কমার্সে জনসংযোগ বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ শুরু করেন।

 

আফ্রিকান কুয়াংতোং জেনারেল চেম্বার অফ কমার্স একটি আফ্রিকা-চীন বিনিয়োগ বাণিজ্য উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণ প্ল্যাটফর্ম। দীর্ঘকাল ধরে সংস্থাটি আফ্রিকান প্রতিষ্ঠান কুয়াংচৌয়ে বিনিয়োগ এবং আফ্রিকায় কুয়াংতোং প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ও উন্নয়নের জন্য বিনিময় সেতু স্থাপন করে আসছে। কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে লি নুও গভীরভাবে বিদেশি বিশেষ করে আফ্রিকানদের চীনের প্রতি গভীর আগ্রহ এবং চীনে লেখাপড়া ও কাজ করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা অনুভব করেছেন। তিনি বলেন, আরও বেশি বিদেশী চীনকে উপলব্ধি করতে চান। যেমন: যখন আমি আফ্রিকান কুয়াংতোং জেনারেল চেম্বার অফ কমার্সে কাজ করার সময় অনেক বিদেশী বিশেষ করে আফ্রিকান প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থাপক কুয়োংচৌতে মেলায় অংশ করতে চায়। তারা আমাদের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পত্র চেয়েছে, কারণ তারা চীন দেখতে আসতে চান।

 

চীনে থাকার ৭ বছরে লি নুও আরও বেশি উপলব্ধি করেছেন, বিশ্বের জন্য চীনের আকর্ষণীয়-শক্তি কেমন। তাঁর চোখে চীনের বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন প্রতিদিন বদলে যাচ্ছে। এছাড়া, দিন দিন উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক পরিবেশ আরও বেশি বিদেশীদের আকর্ষণ করছে। লি নুও বলেন, জেচিয়াং প্রদেশের হাংচৌ হচ্ছে বর্তমানে একটি উদ্যোক্তা কেন্দ্র। তাদের অনেক উদ্যোক্তা সংস্থা এবং ভাল পরিবেশ আছে। কুয়োংচৌ’র উদ্যোক্তা পরিবেশ আরও আন্তর্জাতিকায়ন হয়েছে এবং আরও বেশি বিদেশী মেধাশক্তি ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করেছে। এছাড়া, আমি আবিষ্কার করেছি, চীনে বিদেশী কোম্পানির অন্বেষণ করা জিনিস আরও বেড়েছে। তারা চীনের পেশাগত জ্ঞান অর্জন করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করছে।

 

একই সময় চীনের ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়ন এখানে চাকরি করা ও জীবনযাপন করা মানুষের জন্য আরও বেশি সুবিধা ডেকে আনে। লি নুও বলেন, চীনের ডিজিটাল অর্থনীতি উন্নয়নের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। ডিজিটাল পরিচালনা হোক অথবা ডিজিটাল প্রশাসন হোক সবই ভাল। মানুষ সবসময় তাদের নিজেদের চিকিৎসা বীমা ও শিক্ষাসহ সকল তথ্যের সঙ্গে সংযুক্ত। এ ধরণের যোগাযোগ মানুষের জীবনের জন্য সুবিধা সরবরাহ করতে পারে।

 

লি নুও তীক্ষ্ণভাবে চীনের ডিজিটাল অর্থনীতি উন্নয়নের নতুন সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাঁর চেম্বার চীনের লাইভ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সহযোগিতা ত্বরান্বিত করেছে। চীনা পণ্যভোগীদের কাছে আফ্রিকার কোকো ও কফির বীজসহ বৈশিষ্ট্যময় পণ্য পরিচয় করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে আফ্রিকা-চীন বাণিজ্যের জন্য সেতু স্থাপন করেন তিনি। লি নুও বলেন, জেচিয়াংয়ে আমি জানি হাংচৌ’র লাইভ ই-কমার্স খুব পরিপক্ব। আমি চীনা নোঙ্গরের কাছ থেকে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ শিখে ফেলেছি। তারা এ মহলের বিশেষজ্ঞ। আমরা লাইভ ই-কমার্সের মাধ্যমে আরও বেশি আফ্রিকান পণ্য ত্বরান্বিত করতে এবং আফ্রিকায় আরও বেশি চীনা ব্র্যান্ডের পণ্য উপলব্ধি করতে চাই।

 

লি নুও বড় ও ছোট চীনের অনেক শহর বা গ্রাম সফর করে সেখানকার উন্নয়ন অনুভব করেছেন। তিনি বলেন, চীন তার মতো বিদেশী যুবকদের জন্য অনেক সৃজনশীল সুযোগ ও সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা সরবরাহ করে। চীনে এসে চিন্তার পদ্ধতিও পরিবর্তন হয়। তরুণ-তরুণীদের জন্য ধারণাটি কার্যকর করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

 

লি নুও চীনা মানুষের মৈত্রী ও অনুরাগে অভিভূত হন। তিনি বলেন, এখানকার মানুষ পরিবারের সদস্যের মতো। আমার মালিক আমার “চীনা মা”-য়ে পরিণত হয়েছেন। চাকরিতে তিনি আমাকে সাহায্য করেন। যখন আমি কষ্টে পড়ি, তিনি যত্ন নেন। প্রত্যেক চীনা উৎসব আমরা একসাথে উদযাপন করি। আমি আমার মালিকের পরিবারের সদস্য পরিণত হয়েছি। এটা একটি বিস্ময়।

 

বর্তমানে লি নুও বেইজিং নরমাল ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছেন। তিনি আশা করেন, শিক্ষা প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে নিজের সুপ্তশক্তি উন্নয়ন করে আরও বেশি আফ্রিকান যুবকদের তাঁর মতো জীবনের উন্নয়ন দিক খুঁজে বের করতে সাহায্য করবেন।

 

(প্রেমা/এনাম)