আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আকাশ এবং...... ।
আকাশ: বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান শুরুতে আমরা প্রথমে বাংলাদেশ সম্পর্কিত একটি খবর আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রতিদিন নতুন করে আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন বিভিন্ন হাসপাতালে।
চিকিৎসকরা বলছেন, অনীহার কারণে মানুষ মশারি টানাচ্ছেন না। তবে ডেঙ্গু থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
বন্ধুরা, আমি উত্তরা থাকার সময় একবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছি। তখন প্রায় এক বছর ধরে শরীর আগের মতো সুস্থ হয়েছে। এ রোগে শরীর অনেক ক্ষতি হয়েছে। এজন্য আমি বলতে চাই, দয়া করে এ রোগের বিষয়ে সতর্ক থাকবেন, দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
তৌহিদ ভাই, আপনি এ রোগ প্রতিরোধে আপনার পরামর্শ কি?
তৌহিদ:...
বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। যদিও ডেঙ্গু প্রাণঘাতী রোগ নয় তার পরও গত কয়েক বছর বেশ কিছু রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, যার কারণে ডেঙ্গু এখন আতঙ্কের এক নাম। তবে আশার কথা হলো সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মমাফিক চললে এই রোগ থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আসুন আমরা ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ রূপ ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ও এর প্রতিরোধের উপায় জেনে নিই এবং সচেতন হই। ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ রূপ হলো ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের সঙ্গে সার্কুলেটরি ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়। এর লক্ষণ হলো- -রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া। -নাড়ীর স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হয়। -শরীরের হাত পা ও অন্যান্য অংশ ঠা-া হয়ে যায়। -প্রস্রাব কমে যায়। -হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বর কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের মূল মন্ত্রই হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ এবং এই মশা যেন কামড়াতে না পারে, তার ব্যবস্থা করা। মনে রাখতে হবে, এডিস একটি ভদ্র মশা, অভিজাত এলাকায় বড় বড় সুন্দর সুন্দর দালান কোঠায় এরা বাস করে। স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে এই মশা ডিম পাড়ে। ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেনের পানি এদের পছন্দসই নয়। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং একই সঙ্গে মশক নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। -বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। - যেহেতু এডিস মশা মূলত এমন বস্তুর মধ্যে ডিম পাড়ে যেখানে স্বচ্ছ পানি জমে থাকে, তাই ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। ব্যবহৃত জিনিস যেমন মুখ খোলা পানির ট্যাংক, ফুলের টব ইত্যাদিতে যেন পানি জমে না থাকে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। -ঘরের বাথরুমে কোথাও জমানো পানি ৫ দিনের বেশি যেন না থাকে। একুরিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ার কন্ডিশনারের নিচেও যেন পানি জমে না থাকে। -এডিস মশা সাধারণত সকাল ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। তবে অন্য সময় ও কামড়াতে পারে। তাই দিনের বেলা শরীর ভালভাবে কাপড়ে ঢেকে বের হতে হবে, প্রয়োজনে মসকুইটো রিপেলেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরের চারদিকে দরজা জানালায় নেট লাগাতে হবে। -দিনে ঘুমালে মশারি টাঙিয়ে অথবা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে হবে। -বাচ্চাদের যারা স্কুলে যায়, তাদের হাফপ্যান্ট না পরিয়ে ফুল প্যান্ট বা পায়জামা পরিয়ে স্কুলে পাঠাতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই সব সময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে, যাতে করে রোগীকে কোন মশা কামড়াতে না পারে। মশক নিধনের জন্য স্প্রে, কয়েল, ম্যাট ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য দিনে ও রাতে মশারী ব্যবহার করতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর হয়ত বা নির্মূল করা যাবে না। এর কোন ভ্যাক্সিনও বের হয় নি, কোন কার্যকরী ওষুধও আবিষ্কৃত হয় নি। ডেঙ্গু রোগের মশাটি আমাদের দেশে আগেও ছিল, এখনও আছে, মশা প্রজনন এবং বংশবৃদ্ধির পরিবেশও আছে। তাই ডেঙ্গু জ্বর ভবিষ্যতেও থাকবে- এমন আশঙ্কা করা যায়। একমাত্র সচেতনতা ও প্রতিরোধের মাধ্যমেই এই রোগ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।
সংগীত
আকাশ: বন্ধুরা, সত্যি শরীর বা সুস্থতা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জীবনে, তাইনা? এজন্য ভালোভাবে আপনার নিজের যত্ন নেন।
তৌহিদ ভাই, আমি উত্তরা থাকার সময়ে একবার Pharmacyতে দেখেছিলাম বাংলাদেশের ঐতিহ্যিক কিছু ঔষধ। যা কাশি দূর করে। আপনি কি জানেন ওই ওষুধ মূলত কি?
তৌহিদ:...
আকাশ: বন্ধুরা, প্রতি বছরের অক্টোবরের ২২ তারিখ ‘ বিশ্ব ঐতিহ্যিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ দিবস’। আজ আমরা এ বিষয়ে আলাপ করব। কেমন?
বন্ধুরা, তৌহিদ ভাই বাংলাদেশের এতিহ্যিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধের কিছু জ্ঞান ও তথ্য আমাদের জানিয়েছেন। এখন আমি চীনের ঐতিহ্যিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ সম্পর্কে কিছু বলব, কেমন?
..
বন্ধুরা, চীনের ঐতিহ্যিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ হচ্ছে চীনা জনগণের মূল্যবান সম্পদ।হাজার হাজার বছর ধরে, মানবজাতির সুস্থতা নিশ্চিত ও উন্নত করার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সিপিসি’র অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেস আয়োজনের পর থেকে, কমরেড সি চিন পিং কেন্দ্রিক সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটি চীনের চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ এবং পশ্চিমা চিকিত্সা পদ্ধতি ও ওষুধকে গুরুত্ব দেয় এবং চীনের চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধকে দেশের উন্নয়ন-কৌশল হিসেবে নির্দিষ্ট করেছে। এ সম্পর্কে সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটি ধারাবাহিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে এবং চীনা ঐতিহ্যিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ উন্নয়নের জন্য দিক-নির্দেশনা দিয়েছে।
২০২১ সালের ১২ মে সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, দেশের প্রেসিডেন্ট ও কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান সি চিন পিং চীনের ঐতিহ্যিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, বিগত কয়েক হাজার বছরে চীনা জনগণ চীনের এতিহ্যিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধের মাধ্যমে রোগ নিরাময় করেছে। রোগীদের জীবন রক্ষা করেছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ ও সার্স-সহ (SARS) গুরুতর সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করার মাধ্যমে চীনের এতিহ্যিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধের ভূমিকাকে আমরা আরো গভীরভাবে জানতে পেরেছি। আমাদের উচিত চীনের ঐতিহ্যিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ উন্নয়ন করা, আধুনিক বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে চীনের ঐতিহ্যিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধের নীতি ব্যাখ্যা করা এবং চীনের চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ এবং পশ্চিমা চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ—এই দুটি বিষয়কে সমন্বয় করা।
চীনের এতিহ্যিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ বিষয়ক আইন ও নীতি উন্নত হচ্ছে। ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীন চীনের ঐতিহ্যিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ বিষয়ক আইন’-সহ নানা আইন ও নীতিমালা চীনের এতিহ্যিক চিকিৎসা ও ওষুধের উন্নয়ন দেশের জাতীয় কৌশলে পরিণত করেছে।
এ সব কারণে, চীনের এতিহ্যিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধের সার্বিক ও উচ্চ গুনগত মানের উন্নয়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশব্যাপী ৯৮ শতাংশেরও বেশি আবাসিক এলাকার চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রে চীনা ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ বিষয়ক সেবা প্রদান করতে পারে। ২০২১ সালের শেষ দিকে, চীনের এতিহ্যিক চিকিৎসা-পদ্ধতি ও ওষুধ প্রদান করার চিকিৎসা সংস্থার সংখ্যা ৭৭ হাজারে পৌঁছেছে। যা ২০১০ সালের তুলনায় ৯৬.৭ শতাংশ বেশি।
মানবজাতির সুস্থতা নিশ্চিত ও উন্নত করার খাতে চীনের ঐতিহ্যিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। চীনের বিজ্ঞানী মাদাম থু ইয়ো ইয়ো চীনা ঐতিহ্যিক চিকিৎসা-পদ্ধতি ও ওষুধ বিষয়ক গবেষণার মাধ্যমে অবশেষে arteannuin আবিষ্কার করেছেন। যা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের প্রধান ওষুধ হিসেবে বিশ্বব্যাপী ইতোমধ্যে কয়েক মিলিয়ন মানুষের জীবন রক্ষা করেছে।
কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে চীনের ঐতিহ্যিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও ঔষধও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে চীনের ঐতিহ্যিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধের একাধিক ভাষার সংস্করণ প্রকাশ করেছে চীন। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের আদানপ্রদানের কয়েকশো কার্যক্রমের মাধ্যমে চীন বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ বিষয়ক তথ্য তুলে ধরেছে। কিছু দেশ ও অঞ্চলের চাহিদা অনুযায়ী, তাদেরকে চীনের ঐতিহ্যবাহী ওষুধ দেওয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে সহায়তা দেওয়ার জন্য চীন ৩০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে চীনের ঐতিহ্যিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ খাতের বিশেষজ্ঞ পাঠিয়েছে।
বন্ধুরা, চীনের ঐতিহ্যিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ ইতোমধ্যে বিশ্বের ১৯৬টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। যা বিশ্বব্যাপী সেবা দিয়েছে। অব্যাহত উচ্চ গুনগত মানের উন্নত চীনা ঐতিহ্যিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও ওষুধ অবশ্যই মানবজাতির উন্নয়নে আরো বেশি অবদান রাখবে!