চীনের কৃষি বিজ্ঞানীর গল্প
2022-10-22 18:43:19

কে চীনকে লালন করে? গত শতাব্দীর ৯০ দশকে পশ্চিমারা এমন প্রশ্ন করেছিল। বর্তমানে চীন নিজের শক্তিতে সফলভাবে ১৪০ কোটিরও বেশি মানুষের খাওয়ার সমস্যা সমাধান করেছে, একই সঙ্গে বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষ্যে আমরা দু’জন কৃষি বিজ্ঞানীর গল্প বলবো। এর মাধ্যমে চীনের বীজ, চীনের খাদ্য এবং চীনের সফলতার কথা জানাবো।

 

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আবাদি জমি সংরক্ষণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রথমে যে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো, তাঁর নাম লি বাও কুও। ১৬ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি জমি-সংক্রান্ত কাজ করছেন।

তিনি বলেন, কালো মাটির জমি খুবই মূল্যবান সম্পদ। এতে জৈবপদার্থ বেশি থাকে। তবে এক সেন্টিমিটার কালো মাটির জমি সৃষ্টি করতে প্রায় ৪শ’ বছর সময় লাগে। তাই একে আবাদি জমির মধ্যে প্রধান হিসেবে উল্লেখ করা যায়।

২০২০ সালের গ্রীষ্মকালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং লি সু জেলা পরিদর্শন করেছিলেন। ভুট্টার জমিতে এসে কালো জমির লালন করা এবং ভুট্টা চাষের অবস্থা পরিদর্শন করেন তিনি। যা ছিল লি পাও কুও-এর ক্ষেতের পরীক্ষাগার। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, খাদ্যের উত্পাদন নিশ্চিত করতে আবাদি জমিগুলো রক্ষা করতে হয়। কালো জমির ভূমিক্ষয় রোধের ব্যবস্থা নিতে হয়।

 

লি পাও কুও-এর পরীক্ষাগারে চীনের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা জমির নমুনা রাখা আছে। তাঁরা কালো জমির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী জমি সংরক্ষণের আবাদি পদ্ধতি ‘লি সু কাঠামো’ সৃষ্ট করেছেন। প্রকৃতির কাছ থেকে জানা যায়, খড় আবারও জমিতে ব্যবহার করার ব্যবস্থা করতে হয়। কালো মাটির জমির ওপরে একটি তাবুর মতো আবরণ রাখা হয়।

লি পাও কুও জানান, প্রেসিডেন্ট সি বিশেষ করে জিজ্ঞেস করেন, এই চাষাবাদের পদ্ধতি কি জনপ্রিয় করা হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ লি সু জেলায় ১.৩ লাখ হেক্টর জমিতে তা প্রয়োগ করা হয়েছে। পুরো প্রদেশে ১২ লাখ হেক্টর জমিতে এটি প্রয়োগ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট সি বলেন, এই কাজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিশ্চয় কালো মাটির জমি ভালোভাবে রক্ষা করতে হয়।

খাদ্য উত্পাদনের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য ভালো জমির পাশাপাশি ভালো বীজ থাকতে হয়। বীজ হল কৃষির চিপ এবং উন্নত ফলনের নিশ্চয়তা। চীনের ‘সংকর ধানের পিতা’ ইউয়ান লোং পিং এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি হলেন চীনের সংকর ধান বিশেষজ্ঞ, চীনের সংকর ধান গবেষণা ও উন্নয়নের প্রতিষ্ঠাতা, তাকে ‘বিশ্বের সংকর ধানের পিতা’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। তাঁর গবেষণায় প্রাপ্ত চীনের সংকর ধানের বীজ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ সারা বিশ্বে চাষ করা হচ্ছে।

ইউয়ান লোং পিং-এর কার্যালয়ে ২০১৩ সালে তোরা চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর সঙ্গে করমর্দনের ছবি আছে। তখন ইউয়ান লোং পিং কর্মদল নিয়ে সুপার সংকর ধানের তৃতীয় মেয়াদের লক্ষ্য পূরণ করেছিলেন। প্রতি ৬৬৬ বর্গমিটারে ৯০০ কেজি ধান উত্পাদন করতে সক্ষম হন তাঁরা।

 

সেবার চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর পরিদর্শনে তিনি সংকর ধানের বীজ লালনকে একটি মহান কাজ হিসেবে প্রশংসা করেন। চীনা বীজ সি চিন পিং-এর মনে বড় একটি বিষয়। এই কাজের জন্য ইউয়ান লোং পিং কর্মদলের নেতৃত্ব দিয়ে তখন থেকে প্রতি ৬৬৬ বর্গমিটার জমিতে ১০০০ কেজি ধান উত্পাদনের লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করেন। সেই বছর ইউয়ানের বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তবে প্রতি বছর তিনি দুইবার বিভিন্ন স্থানে গবেষণা করতে যান।

 

হাইনান প্রদেশে অবস্থিত চীনের নানফান জাতীয় বীজ লালন কেন্দ্রে ইউয়ান লোং পিং-এর সুপার সংকর ধান গবেষণা স্টেশন আছে। প্রতি বছরের বসন্ত ও শীত্কালে দেশের বিভিন্ন স্থানের বিশেষজ্ঞরা এখানে এসে বীজ লালন ও গবেষণা করতেন। কারণ, এখানের বিশেষ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ায় শস্যের বংশবৃদ্ধি আরো দ্রুত হয়। যেমন, আগে এক ধরনের বীজ লালনে আট বংশের সময় লাগে। তবে এখান তিন প্রজন্মের চেষ্টার পর তা সফল হতে পারে।

২০১৮ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি আবারও সেখানে যান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, খাবারের ব্যাপারটি চীনের জন্য সবচেয়ে বড় ব্যাপার। চীনের নিজের বীজের কাজ উন্নত করতে হয়। দ্রুত নিজের মেধাস্বত্ত্বের শ্রেষ্ঠ বীজের প্রজাতি উদ্ভাবন করতে হয়। মূল থেকে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষা করতে হয়।

এজন্য অসংখ্য চীনা কৃষি বিশেষজ্ঞ এই কাজ করছেন। ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ইউয়ান লোং পিংকে প্রজাতন্ত্র পদক প্রদান করেন।

 

আশার জমিতে অসংখ্য কৃষক, অসংখ্য কৃষি বিজ্ঞানী তাঁদের ঘাম ও বুদ্ধি দিয়ে কাজ করছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ঠিক এমন কথাই বলেছিলেন। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চীনাদের খাবারের বাটি নিজের হাতেই রাখতে হবে।

(শুয়েই/তৌহিদ/সুবর্ণা)