সংবাদ পর্যালোচনা: বিংশ জাতীয় কংগ্রেস শেষ
2022-10-22 19:48:33

শনিবার সকালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বিংশ জাতীয় কংগ্রেসের সমাপনী অনুষ্ঠান বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। দেশের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছেন। এর আগে ১৬ অক্টোবর সিপিসি’র বিংশ জাতীয় কংগ্রেস বেইজিংয়ে শুরু হয়। এবারের কংগ্রেসে ঊনবিংশ জাতীয় কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কমিটির কর্ম-প্রতিবেদন এবং সিপিসি’র গঠনতন্ত্রের সংশোধনী বিল পর্যালোচনা করা হয়।

এবারের সম্মেলনে সিপিসি’র বিংশ কেন্দ্রীয় কমিটি এবং কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা তদারক কমিশন নির্বাচন করা হয়েছে, সম্মেলনে সিপিসির ঊনবিংশ কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মপ্রতিবেদনের প্রস্তাব, সিপিসি’র ঊনবিংশ কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা তদারক কমিশনের কর্মপ্রতিবেদন প্রস্তাব, ‘চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সনদ (সংশোধনী প্রস্তাব)’ বিষয়ক প্রস্তাবনা গৃহীত হয়েছে। সিপিসি’র জাতীয় কংগ্রেস এবং এতে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিশন হল সিপিসি’র সর্বোচ্চ নেতৃত্বদানকারী সংস্থা। সিপিসি’র জাতীয় কংগ্রেস প্রতি পাঁচ বছর পর একবার আয়োজন করা হয়।

উদ্বোধনী অধিবেশনে ঊনবিংশ জাতীয় কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে কর্ম-প্রতিবেদন পেশ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট। এখন, উক্ত কর্মপ্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয়ে দৃষ্টি দেবো। তিনি বলেছিলেন সার্বিক জনগণতন্ত্র হল সমাজতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক রাজনীতির অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। এটি সবচেয়ে ব্যাপক, বাস্তব ও কার্যকর গণতন্ত্র।

সার্বিক জনগণতন্ত্র পশ্চিমের ‘জনগণের নির্বাচকমণ্ডলীর’ ব্যালট-ভিত্তিক গণতন্ত্র থেকে ভিন্ন। চীনে গণতন্ত্রের প্রতিফলন হয় ‘জনগণের নির্ধারণে’। রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা জনগণের এবং গণকংগ্রেস ব্যবস্থা হল জনগণকে প্রদত্ত দেশের মালিক হওয়ার মৌলিক প্রাতিষ্ঠানিক নিশ্চয়তা।  চীনের গণতন্ত্র ‘জনগণের স্বাধীনতার’ প্রতিফলন। জনগণের বিষয়গুলো জনগণের দ্বারা পরিচালিত হয় এবং জনগণের বিষয়গুলো জনগণ দ্বারা সমাধান করা হয়।

পশ্চিমা ‘নির্বাচনী ব্যবস্থা’ থেকে ভিন্ন চীনের এ গণতন্ত্র সামগ্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রতিফলিত হয়।  চীনে ‘গণতন্ত্র’ ব্যবহার করা হয় জনগণের সমস্যার সমাধান এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য।

চীন স্বাধীন ও আত্মনির্ভরশীল শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক নীতিতে অটল রয়েছে। বাস্তবতার আলোকে নিজের অবস্থান ও নীতি প্রণয়ন করে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূল বিধি রক্ষার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সমতা ও ন্যায্যতা রক্ষা করে চলে। যে কোনো ধরণের আধিপত্য ও শক্তির রাজনীতির বিরোধিতা করে এবং কোনো দিনই আধিপত্য বিস্তার করবে না চীন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন সার্বিক সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ গঠনের নতুন যাত্রা শুরু করেছে। আগামী পাঁচ বছরে এ সূচনার সন্ধিক্ষণ। কর্ম-প্রতিবেদনে গুণগত মানসম্পন্ন উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে আধুনিক গঠনে জনশক্তির ভূমিকা জোরদার, চীনের আইনি প্রশাসন এবং মানব জাতির ও প্রকৃতির সম্প্রীতিময় সহাবস্থান বেগবান করার বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে। তা দ্বিতীয় শতবার্ষিক লক্ষ্য বাস্তবায়নে নতুন চেতনা, কৌশল ও ব্যবস্থা প্রদান করেছে।

এদিকে শুক্রবার বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েন বিন বলেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মানবাধিকারকে সম্মান ও রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছে।  জনসাধারণের সুখী জীবন হচ্ছে বৃহত্তম মানবাধিকার। তাদের কল্যাণ সৃষ্টি করা সিপিসি’র সদস্যদের অবিরাম প্রচেষ্টার উৎস। সিপিসি’র অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-কেন্দ্রিক কেন্দ্রীয় কমিটি মানবাধিকারকে সম্মান ও রক্ষাকে রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ কাজ  হিসেবে অনুসরণ করে চীনের মানবাধিকারের ঐতিহাসিক অগ্রগতি অর্জন করেছে।  তিনি বলেন, চীন সার্বিক সচ্ছল সমাজ গঠন করেছে এবং ঐতিহাসিক চরম দারিদ্র্য বিমোচন করেছে। করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে চীন মানুষকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ভিত্তিতে সর্বাধিকভাবে জনসাধারণের নিরাপত্তা ও সুস্থতা রক্ষা করেছে। চীনাদের গড় আয়ু গত দশ বছর আগের ৭৪.৮ থেকে বেড়ে ৭৮.২ বছরে উন্নীত হয়েছে। চীনে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম শিক্ষা ব্যবস্থা, সামাজিক নিশ্চয়তা ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা।

 

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির রয়েছে ১০১ বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস। গত ৭৩ বছর ধরে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনকে সুষ্ঠুভাবে শাসন করে আসছে সিপিসি। জাতীয় কংগ্রেস ও কেন্দ্রীয় কমিটি সিপিসি’র সর্বোচ্চ সংস্থা। প্রতি পাঁচবছরে একবার অনুষ্ঠিত হয় এ কংগ্রেস।