অক্টোবর ২১: চীন বরাবরই বিশ্বের শান্তি সুরক্ষা, অভিন্ন উন্নয়নের কূটনীতি ত্বরান্বিত করা, এবং মানবজাতির ভাগ্যের অভিন্ন সম্প্রদায় গড়ে তোলার চেষ্টা করে আসছে। গত ১৬ অক্টোবর বেইজিংয়ের গণমহাভবনে অনুষ্ঠিত চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র কুড়িতম জাতীয় কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঊনবিংশ জাতীয় কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে কর্ম-প্রতিবেদন পেশকালে এসব কথা বলেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এতে দৃঢ়ভাবে শান্তি ও উন্নয়নের পথে অবিচল থাকার চীনা সংকল্প ও আস্থা প্রতিফলিত হয়েছে। সিপিসি অব্যাহতভাবে বিশ্বের শান্তি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধের জন্য আরও বেশি অবদান রাখতে চায়।
চীন মাত্র কয়েক দশকের মধ্যে শিল্পায়নের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে, যা করতে উন্নত দেশগুলোর শত শত বছর লেগেছে। এ ছাড়াও চীন দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক স্থিতিশীলতার অলৌকিক ঘটনা সৃষ্টি করেছে। নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর কখনও সক্রিয়ভাবে কোনো যুদ্ধ ও সংঘাত উস্কে দেয়নি চীন; না দেশটি অন্য কোনো দেশ আক্রমণ করেছে। বর্তমান চীন সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শান্তিরক্ষী পাঠানো নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় দ্বিতীয় বৃহত্তম অবদানকারী। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে চীনের ভূমিকা বরাবরই প্রশংসিত হয়ে আসছে।
শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে চীন বিশাল অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নে শক্তিশালী ইতিবাচক শক্তি হিসেবে কাজ করে চলেছে। বিগত দশ বছরে বিশ্বের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে চীনা অর্থনীতির বার্ষিক গড় অবদান ৩৮.৬ শতাংশ, যা চীনকে বিশ্বের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির বৃহত্তম চালিকাশক্তিতে পরিণত করেছে। সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতা চর্চার পক্ষের শক্তি চীন। নতুন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার পক্ষেও চীন কাজ করে চলেছে। ‘বৈশ্বিক উন্নয়ন প্রস্তাব’, ‘বৈশ্বিক নিরাপত্তা প্রস্তাব’, ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ বিশ্বের জন্য চীনের অবদান। চীন বরাবরই বিশ্বের শান্তি সুরক্ষা ও অভিন্ন উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ভূমিকা রেখে আসছে।
শান্তি হলো উন্নয়নের পূর্বশর্ত, উন্নয়ন হলো শান্তির নিশ্চয়তা। বর্তমান চীন সার্বিকভাবে সমাজতান্ত্রিক আধুনিক শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে এবং দ্বিতীয় শত বছরের লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করছে। চীন বৈদেশিক উন্মুক্তকরণের মৌলিক নীতি এবং পারস্পরিক স্বার্থ ও অভিন্ন কল্যাণের উন্মুক্ত কৌশলে অবিচল থাকবে। চীন অব্যাহতভাবে নিজের উন্নয়ন দিয়ে বিশ্বের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে থাকবে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্কে ‘বৈশ্বিক উন্নয়ন প্রস্তাব’ পেশ করেন। এর উদ্দেশ্য হলো অভিন্ন উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা এবং উন্নয়নের অভিন্ন সম্প্রদায় গড়ে তোলা। এ পর্যন্ত শতাধিক দেশ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এ প্রস্তাব সমর্থন করেছে। ৬০টিরও বেশি দেশ ‘বিশ্ব উন্নয়ন প্রস্তাব মৈত্রী গ্রুপ’-এ যোগ দিয়েছে। বিশ্ব উন্নয়ন প্রস্তাব হলো বিশ্ব উন্নয়নের সমস্যা সমাধানের জন্য চীনের আরেকটি অবদান। এটি জাতিসংঘের ‘এজেন্ডা ২০৩০’ টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনার পরিপুরক।
সিপিসি’র কুড়িতম জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিনিধি ও ফুচিয়ান এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটির গবেষক ও চীনের জাতীয় জুনকাও ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি সেন্টারের প্রধান বিজ্ঞানী লিন চান সি বলেন, দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার অনেক মানুষ জুনকাও চাষের মাধ্যমে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছেন। চীনা জুনকাও তাঁদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। এ পর্যন্ত চীনের জুকাও চাষের প্রযুক্তি ও দারিদ্র্যবিমোচনের অভিজ্ঞতা বিশ্বের ১০৬টি দেশ ও অঞ্চলে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিশ্বের শান্তি সুরক্ষার পাশাপাশি নিজেকে উন্নত করা, নিজের উন্নয়ন দিয়ে আরও ভালোভাবে বিশ্বের শান্তি সুরক্ষা করা, এবং অভিন্ন উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা হলো চীনের লক্ষ্য। এটা হচ্ছে চীনা বৈশিষ্ট্যময় শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথ। (ছাই/আলিম/স্বর্ণা)