বাংলাদেশের অনেক মানুষ স্বাস্থ্যসেবার খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ বেশিরভাগ চিকিৎসা সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আসে এবং সেকালেন সেগুলোর দাম অনেক বেড়ে যায়। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশী স্বাস্থ্যসেবা খাত চীন থেকে সাশ্রয়ী মূল্যের সরঞ্জাম আমদানি করে এ খাতে একটি পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে।
গাওসুল আজম মিঠু চীন থেকে স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জাম আমদানিকারক ও সরবরাহকারী। গত সপ্তাহে ঢাকায় আয়োজিত এক চিকিৎসা প্রদর্শনীর ফাঁকে তিনি সিনহুয়াকে বলেন, "আমরা খুব কম খরচে খুব ভালো (চীনা) মেশিন দিতে পারি এবং রোগীরা কম খরচে ভালো চিকিৎসা পান।"
মিঠু, যিনি পালস টেকনোলজিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বলেন, “চীনা যন্ত্রপাতির মান খুবই ভালো।”
তিনি জানান, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি ও বায়োকেমিস্ট্রি অ্যানালাইজারসহ তার স্টলের ৯৫ শতাংশ যন্ত্রপাতি চীনের তৈরি এবং এগুলো খুব কম খরচে বাংলাদেশের বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে।
একটি আন্তর্জাতিক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি "মেডিটেক্স বাংলাদেশ-২০২২" শিরোনামের এ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এটি ছিল চিকিৎসা, ক্লিনিক্যাল ও স্বাস্থ্যসেবা শিল্পের জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী।
মিঠু বলেন, "আমরা যদি জাপানি বা জার্মান যন্ত্রপাতির সাথে তুলনা করি, তাহলে দেখবো চীনের যন্ত্রপাতির দাম অনেক কম। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, একটি চীনা মেশিনের দাম যদি এক লাখ টাকা হয়, তবে জার্মান মেশিনের দাম পড়বে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা। কিন্তু আমাদের এক লাখ টাকার পণ্যের গুণমান ও কার্যকারিতা জাপানি বা জার্মানির মেশিনের মতোই।"
তার মতে, কম দামের এই পণ্যগুলো ব্যবহার করলে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে এবং সাধারণ মানুষ আরও বেশি উপকৃত হবে।
আরেকটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেডিকেল আইটেমস লিমিটেডের পরিচালক মো. মোনায়েম বলেন, তারা বাংলাদেশের বাজারে চীনা পণ্য, বিশেষ করে এনআইসিইউ পণ্য বাজারজাত করছে। এই চীনা পণ্যগুলির মান খুব ভাল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মোনায়েম বলেন, "আমরা তুরস্কের পণ্যগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারি... এবং পণ্যটির ব্যাপারে গ্রাহকদের সাড়াও খুব ভাল। আমরা প্রাইভেট ক্লিনিক, কর্পোরেট হাসপাতাল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ভাল সাড়া পাচ্ছি।"
সানসুর বায়োটেক ইনকর্পোরেশনের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক এরিক জানান, তাদের কোম্পানিটি গত কয়েক বছর ধরে চীনের শীর্ষ তিনটি মোলেকিউলার ডায়াগনস্টিক কিট প্রস্তুতকারকদের একটি।
তিনি বলেন, "কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের সময় আমরা বাংলাদেশের বাজারে ৩০ লাখেরও বেশি টেস্টিং কিট বিক্রি করেছি।"
এরিক বলেন, "আমরা মানের বিষয়ে যত্নশীল। আমরা বিক্রয়োত্তর সেবার বিষয়ে যত্নশীল এবং আমাদের বিক্রয়কর্মী এবং সেবাকর্মীরা গত তিন বছর ধরে বাংলাদেশে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।"
তিনি জানান, তাদের কোম্পানির তিন শতাধিক ‘সিই’ সার্টিফাইড পণ্য রয়েছে এবং মেশিনটি ইউএস এফডিএ অনুমোদিত। কম্পানিটি বিশ্বের ১৬০ টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে তাদের মেশিন বিক্রি করে।"
সেনজেন ইম্পেরর ইলেক্ট্রনিক টেকনোলোজি কম্পানি লিমিটেডের কান্ট্রি ম্যানেজার এডওয়ার্ড কুও জানান, তাদের কোম্পানি খুবই পেশাদার আল্ট্রাসাউন্ড মেশিন প্রস্তুতকারক। বিগত ২৫ বছরের অগ্রগতির মধ্য দিয়ে কম্পানিটি মেডিকেল সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক হিসাবে খুব ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এক্সপোতে সংস্থাটি রঙিন ডপলার আল্ট্রাসাউন্ডসহ তাদের সর্বশেষ পণ্য নিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় চীনা পণ্য এখানকার বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য সবচেয়ে ভালো। তাদের কোম্পানিটি অনেক বছর ধরে এই অঞ্চলের বাজারে মনোনিবেশ করছে। তিনি বলেন, এখন কম্পানিটি বাংলাদেশে শক্তিশালী অংশীদার খুঁজছে। - রহমান