অক্টোবর ২০: ১৭ অক্টোবর ছিল আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যবিমোচন দিবস। বিগত দশ বছরে চীন তার নিজস্ব দারিদ্র্য দূর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যবিমোচনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য হ্রাসে চীনের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে হাতে হাত রেখে, দারিদ্র্যমুক্ত অভিন্ন স্বার্থের কমিউনিটি গড়ে তোলার চেষ্টা করছে চীন।
জিয়াংলং গ্রামটি লাওসের লুয়াং প্রাবাং-এর উপকণ্ঠে অবস্থিত। প্রাকৃতিক অবস্থা ও দুর্বল অবকাঠামোর কারণে স্থানীয় জনগণ দীর্ঘদিন ধরে দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করত। ৮১ বছর বয়সী সিমা ইন্থাওং সারাজীবন এখানেই কাটিয়েছেন। গ্রামের আগের অবস্থার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন:
"আগে বাড়ির ছাদ পাহাড় থেকে কাটা আগাছা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হতো। মেঝে কাঠের তৈরি এবং দেয়াল বাঁশের ফালা দিয়ে তৈরি করা হতো। বাড়ি তৈরির জন্য কাঠ খুঁজে পাওয়া সহজ ছিল না। আগে বিদ্যুত, এবং তেলের বাতি এক ধরনের পাত্র ও তুলো দিয়ে তৈরি হতো। গ্রামের পাশে নদীতে স্নান করা হতো এবং নদীর পানি পান করা হতো। পানীয় জল বলে আলাদা কিছু ছিল না।"
২০১৭ সাল থেকে, জিয়াংলং গ্রাম চীন, লাওস এবং অন্যান্য দেশগুলির দ্বারা যৌথভাবে বাস্তবায়িত "পূর্ব এশিয়া দারিদ্র্য হ্রাস প্রদর্শন সহযোগিতা কারিগরি সহায়তা প্রকল্প"-এর একটি প্রদর্শনী গ্রামে পরিণত হয়। গত কয়েক বছরে গ্রামে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বৃদ্ধ সীমা বলেছেন:
"(এখন) গ্রামের মিটিং রুমগুলি অনেক বড় এবং সুন্দর, যার সবকটিই চীনের সহায়তায় তৈরি। গ্রামটি আরও বড় এবং উন্নত হয়েছে, এবং সেখানে স্কুল রয়েছে। রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা আছে। তোমাকে এখন আর গোসল করতে নদীতে যেতে হবে না। এখন বাড়িতেই জল পেতে পারো।"
২০২১ সালের শেষে, চীন-লাওস রেলওয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়, এবং লুয়াং প্রাবাং রেলওয়ে স্টেশনটি গ্রামের পাশে অবস্থিত। দারিদ্র্যবিমোচনে চীনের অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে জিয়াংলং গ্রামে অনেক পর্যটন হোটেল এবং হোমস্টে তৈরি করা হয়। গ্রামের পরিবর্তন দেখে বৃদ্ধ সিমা বললেন,
"আমি গরীব ছিলাম, কিন্তু এখন আমি ভালো আছি। আমি খুব খুশি, খুব খুশি। আমি খুব খুশি।"
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপদেশ পাপুয়া নিউ গিনিতে, চীন থেকে আমদানিকৃত একটি প্রযুক্তি বিখ্যাত হয়েছে: এটি মাটিকে সবুজ করতে পারে, মাটির ক্ষয় রোধ করতে পারে এবং মাশরুম চাষের জন্য কাজে লাগে। এটি চীনের জুনকাও। জুনকাও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছিলেন লিন ঝানসি, একজন চীনা বিজ্ঞানী এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিনিধি। আজ, জুনকাও প্রযুক্তি বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
পাপুয়া নিউ গিনির ইস্টার্ন হাইল্যান্ডস প্রদেশের মাশরুম চাষী ফ্রেদা করোলামা সাংবাদিকদের জানান যে, তিনি ২০২০ সাল থেকে জুনকাও প্রযুক্তিতে মাশরুম চাষ করছেন। এই বছরের জুলাই নাগাদ তার মোট আয় ছিল ৭২ হাজার কিনা বা প্রায় ১ লাখ ৪১ হাজার ৭ শ’ ইউয়ান। এটি তার জীবনে একটি বিশাল পরিবর্তন এনেছে, তিনি বলেন:
"আমি মাশরুম চাষ শুরু করার পর থেকে সত্যিই অনেক লাভ করেছি। আমার ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে, এবং টিউশন ফিও দিতে পারে। এমনকি আমি একটি গাড়ি কিনে একটি বাড়িও বানিয়েছি।"
আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায়, চীন আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যবিমোচন কেন্দ্র, তানজানিয়া সরকারের সহযোগিতায় আফ্রিকায় প্রথম গ্রাম-স্তরের প্রদর্শনী প্রকল্প, চীন-তানজানিয়া গ্রাম-স্তরের দারিদ্র্য হ্রাস শিক্ষা কেন্দ্র গ্রামীণ তৃণমূলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চীনা বিশেষজ্ঞদের আনা ভালো বীজ রোপণ করে এবং ভুট্টার আন্তঃরোপন করে, এবং সয়াবিন চাষের কৌশল অনুশীলন করে, মোরোগোরো প্রদেশের পেয়াপিয়া গ্রামের একজন গ্রামবাসী বি শেঙ্গা শুধুমাত্র বাম্পার ফলনের আনন্দই উপভোগ করেননি, অনেক কৌশল ও অভিজ্ঞতাও আয়ত্ত করেছেন।
তিনি বলেন:
"আমরা চায়নিজ বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে চার-পাঁচটি জিনিস শিখেছি। প্রথমটি হলো কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, দ্বিতীয়টি হলো ভাল মাঠ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে, তৃতীয়টি হলো ভাল বীজ ব্যবহার করতে হবে এবং চতুর্থটি হল ঘন ঘন আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।"
বিগত দশ বছরে, চীন শুধুমাত্র নিজের নিরঙ্কুশ দারিদ্র্য দূর করেনি, বরং আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যবিমোচন সহযোগিতায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে এবং বিশ্বের সাথে দারিদ্র্যবিমোচনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছে। এটি বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন সমস্যা সমাধানে এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘের ‘এজেন্ডা ২০৩০’ বাস্তবায়নে দুর্দান্ত অবদান রেখেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরহিস বলেন,
"চীন আফ্রিকান দেশগুলোর মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে কাজ করছে, জয়-জয় সহযোগিতা করেছে, এবং অভিন্ন উন্নয়নের নীতি গ্রহণ করে অন্যান্য দেশের উন্নয়নকে সমর্থন করছে এবং বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যবিমোচনে বিরাট অবদান রেখেছে।" (ওয়াং হাইমান /আলিম/ছাই)