অক্টোবর ১৮: “বর্তমানে সিপিসি-র কেন্দ্রীয় দায়িত্ব হলো, গোটা চীনের বিভিন্ন জাতির জনগণকে নিয়ে সমাজতান্ত্রিক আধুনিক শক্তিশালী দেশ গড়ে তোলা এবং দ্বিতীয় শত বছরের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা। চীনা বৈশিষ্ট্য দিয়ে চীনা জাতির মহান সমৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।” গত ১৬ অক্টোবর বেইজিংয়ের গণমহাভবনে অনুষ্ঠিত চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র কুড়িতম জাতীয় কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঊনবিংশ জাতীয় কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে কর্ম-প্রতিবেদন পেশকালে এসব কথা বলেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।
তাঁর প্রতিবেদনে সার্বিকভাবে একটি সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ গড়ার জন্য কৌশলগত ব্যবস্থা প্রস্তাব করা হয় এবং আধুনিকায়নের প্রক্রিয়ায় চীনা-শৈলীর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ও অপরিহার্যতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। আন্তর্জাতিক সমাজের দৃষ্টি এদিকে স্বাভাবিকভাবেই আকৃষ্ট হয়েছে।
আধুনিকায়ন হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণের অভিন্ন আকাঙ্খা এবং চীনা জনগণ সে লক্ষ্য অর্জনের জন্য সচেষ্ট। নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর সিপিসি জনগণকে নিয়ে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ কার্যকর করে এবং দেশের আধুনিকায়নের লক্ষ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে থাকে। বিশেষ করে, সিপিসি’র অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিনিধি সম্মেলনের পর সফলভাবে আধুনিকায়নের কাজ উন্নত ও বিস্তৃত করা হয়। চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের চীনা স্বপ্ন বাস্তবায়ন একটি অপরিবর্তনীয় ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করে।
সি চিন পিং তাঁর কর্ম-প্রতিবেদনে বলেন, চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়ন হলো সিপিসি’র নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক আধুনিকায়ন। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়ন হলো বিশাল জনসংখ্যার আধুনিকায়ন, জনগণের অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য আধুনিকায়ন, বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক সভ্যতার সমন্বয়ের জন্য আধুনিকায়ন, মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সম্প্রীতিময় সহাবস্থানের আধুনিকায়ন এবং শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের আধুনিকায়ন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনা বৈশিষ্টসম্পন্ন আধুনিকায়নের নয়টি মৌলিক পূর্বশর্ত আছে। সেগুলো হচ্ছে: সিপিসি’র নেতৃত্ব, চীনা বৈশিষ্ট্যময় সমাজতন্ত্র, উচ্চ মানের উন্নয়ন বাস্তবায়ন, পুরো প্রক্রিয়ায় জনগণের গণতন্ত্র উন্নয়ন, জনগণের আধ্যাত্মিক জগতকে সমৃদ্ধ করা, জনগণের অভিন্ন সমৃদ্ধি বাস্তবায়ন, মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সম্প্রীতিময় সহাবস্থান ত্বরান্বিতকরণ, মানবজাতির ভাগ্যের অভিন্ন সম্প্রদায় গড়ে তোলা এবং মানবজাতির সভ্যতার নতুন অবস্থা সৃষ্টি করা। এতে অর্থনীতি, রাজনীতি, সভ্যতা, সমাজ ও প্রাকৃতিক সভ্যতা অন্তর্ভুক্ত আছে।
গত দশ বছরে, চীনের জিডিপি ৫৩.৯ ট্রিলিয়ন থেকে ১১৪.৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান আরএমবিতে উন্নীত হয়েছে। বিশ্বের অর্থনীতিতে চীনের অবদান ১১.৩ থেকে ১৮.৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। চীনা অর্থনীতি বিশ্বের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে ৩৮.৬ শতাংশ অবদান রাখছে, যা জি-সেভেনের মোট অবদানের চেয়েও বেশি। বিশ্বের বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়ন অনুশীলন বিশ্বের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়নের পদ্ধতি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আধুনিকায়ন বাস্তবায়নের নতুন পদ্ধতি প্রদান করে। আধুনিকায়ন পশ্চিমা দেশগুলোর পেটেন্টকৃত বিষয় নয়। প্রত্যেক দেশ নিজের অবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ পদ্ধতিতে আধুনিকায়ন বাস্তবায়ন করতে পারবে।
এ ছাড়াও, চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আধুনিকায়ন ‘শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের’ কথা বলে। চীনা সভ্যতার মধ্যে যোগাযোগ ও অভিজ্ঞতা বিনিয়মের কথা আছে। এটি পশ্চিমা দেশগুলোর তথাকথিত ‘সভ্যতার মধ্যে সংঘর্ষ’ ধারণার বিপরীত। মানবসভ্যতার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন রূপ তৈরি এবং বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে চীনা অভিজ্ঞতা কার্যকর। ব্রিটেনের পন্ডিত মার্টিন জ্যাকস বলেন, চীন বিশ্বের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। এটি জঙ্গলের আইন, ক্ষমতার আধিপত্য ও জিরোসাম গেমের বিপরীতে জয়-জয় সহযোগিতা, অভিন্ন অবদান এবং যৌথভাবে প্রতিষ্ঠা ও উপভোগের নতুন পথ দেখিয়েছে। (ছাই/আলিম/স্বর্ণা)