গত দশ বছরে আপনার জীবনে কি পরিবর্তন হয়েছে?
2022-10-17 15:03:13

প্রথমেই আপনাকে একটি প্রশ্ন করতে চাই, দশ বছর আগে আপনাদের জীবন কেমন ছিল? মনে আছে কি? এই এক দশকে আপনার জীবনে কোন কোন খাতে পরিবর্তন এসেছে? আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাকে জানাতে চাই গত দশ বছরে চীনের কুইচৌ প্রদেশের সাধারণ মানুষের জীবনের কিছু পরিবর্তন।


কুইচৌ নর্মাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের একটি দল ২০১২ সাল থেকে কুইচৌতে বিভিন্ন গ্রাম পরিদর্শন করে এবং প্রায় সাত হাজার গ্রামীণ পরিবারের ১০ হাজার ছবি তোলে। এসব ছবি পাহাড়ি গ্রামে গত দশ বছরের আনন্দময় মুহূর্তগুলি রেকর্ড করেছে।

এই ছবিটি ২০১২ সালের জুলাই মাসে কুইচৌ প্রদেশের জিইয়ুন জেলার নিউচাং গ্রামে তোলা প্রায় ১০ হাজার ছবির মধ্যে একটি।

আপনি ছবিগুলি থেকে দেখতে পাচ্ছেন, তাদের পিছনের বাড়িঘর খুব পুরানো এবং সেখানে কোন গৃহস্থলী জিনিসপত্র নেই।

ফ্যামিলি ফটো শুটিং গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ঝেং ইয়ুসিয়াও বলেন যে, যখন তারা বৃদ্ধের বাড়িতে ছবি তুলতে যান, তখন তারা একটি দীর্ঘ নোংরা রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন। এই পরিবারের সদস্যরা খুব কমই বাইরে যেত এবং খুব কমই ছবি তুলতো।

 

তারপর এই ছবিটি দেখা যাক, ছবিটি ১লা মে তোলা হয়েছে, এখন ছবির দুই বৃদ্ধের বয়স প্রায় ৯০ বছর। পুরনো জরাজীর্ণ বাড়িটি আর নেই। তারা এখন একটি নতুন তিনতলা ভবনে বসবাস করছেন। এখন, বৃদ্ধ দম্পতি বেসিক মেডিকেল ইন্স্যুরেন্সেও অংশগ্রহণ করেছেন, তা ছাড়া, তারা প্রতি বছর ১৪৭০ ইউয়ান পেনশন পান।

গ্রামে নার্সিংহোম ও ক্লিনিকও নির্মাণ করা হয়েছে, এখন গ্রামের ক্লিনিকে চিকিৎসকরা নিয়মিত বয়স্কদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এমন অনেক বয়স্ক মানুষ আছে যারা তাদের সারা জীবনে কখনও একবারও ছবি তোলেন নি। ফটো-শুটিং দলের মূল উদ্দেশ্য হল প্রতিটি পরিবারকে একটি সুখী পারিবারিক ছবি তুলে দেওয়া। দশ বছরে অনেক কিছুই বদলে গেছে। যে মাটির রাস্তা দিয়ে তারা হাঁটতো তা আর নেই, আর প্রতিটি ঘরে ঘরে সিমেন্টের পাকা রাস্তা পৌঁছে গেছে। এখন গ্রামবাসীদের বাড়িঘরগুলো দোতলা বা তিনতলা ভবন। দেখা যায়, গ্রামবাসীদের জীবনযাত্রার পরিবেশ ও মানসিক অবস্থা দিন দিন ভালো হচ্ছে।

 

ফটো-শুটিং দলের সদস্য চৌ চিয়ালু বলেন, নিউচাং গ্রামের একটি পরিবার যখন তাকে আবার দেখে, তখন তারা আনন্দের সাথে তাকে বলে যে দেয়ালের পুরানো ছবিটি তাদের দশ বছর আগের ছবি। এই পুরানো ছবিতে উয়েই হংইউ-এর পরিবারকে দেখা যাচ্ছে। আগে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই জীবিকার জন্য বাইরে কাজ করতে যেতো। আজ, উয়েই হংইউ তার পরিচিত বু’ই জাতির এমব্রয়ডারির হাতের কাজ করে বাড়িতে বসেই আয় করেছে।

 

উয়েই হংইউ বলেন, বু’ই জাতির লোকেরা সাধারণত যে পোশাক পরে থাকে তা হস্তনির্মিত। তিনি বলেন, আমি যে পোশাকটি পরেছি তার মতো একটি পোশাক এক হাজার ইউয়ানের বেশি দামে বিক্রি হয়। উয়েই হংইউ লাইভ স্ট্রিমিং, সমবায় ইত্যাদির মাধ্যমে তার হ্যান্ড-এমব্রয়ডারি ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা বিবেচনা করছে। সবসময় তার আশা ছিল যে, সে তার শহরে থেকে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করবে। এখন, গ্রামের বিভিন্ন কৃষি বিশেষ শিল্প ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং তার নিজ শহরে আরও বেশি সুযোগ রয়েছে। উয়েই হংইউ তার স্বামীকে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করেন- যিনি বাইরে কাজ করছেন। তিনি আশা করেন তার পরিবার আবারও একত্রিত হবে।

 

২০১২ সাল থেকে, ফ্যামিলি ফটো শুটিং দলের সদস্যরা কুইচৌতে ৮০টিরও বেশি গ্রামে কয়েক হাজার ছবি প্রিন্ট করেন, যার ফলে দুই হাজারেরও বেশি বয়স্ক মানুষ এবং দুই হাজার তিনশ’রও বেশি শিশু তাদের প্রথম ছবি হাতে পায়। প্রায় সাত হাজার পরিবারকে একটি সুখী পারিবারিক ছবি দিয়েছে দলটি।

বিগত দশ বছরে, এই ছবিগুলি শুধুমাত্র কুইচৌয়ের সাধারণ মানুষের জীবনকে রেকর্ড করেনি, কুইচৌ প্রদেশের মহান অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে উঠেছে।

 

এই গল্পটিই আমি আজ আপনাদের জানাচ্ছি। এগুলো সাধারণ মানুষের জীবন এবং তাদের জীবনের পরিবর্তন। তবে তাদের পরিবর্তনগুলি সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাক্ষী। মানুষ ভালভাবে জীবনযাপন করছে এবং অর্থ উপার্জন করতে পারছে। তাদের পরিবারকে সমর্থন দেওয়ার জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ ও সুখী জীবনযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে।

আমাকে উল্লেখ করতে হবে যে, দারিদ্র্যবিমোচনে চীনের অবদান, চরম দারিদ্র্য হটানো চীনের ঐতিহাসিক সাফল্য। এই অর্জন আন্তর্জাতিক সমাজের ব্যাপক স্বীকৃতি পেয়েছে।

 

চীনের জন্য দারিদ্র্যমোচনের লড়াইয়ে সর্বাত্মক জয়লাভ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনের অর্থনীতি সার্বিকভাবে চরম দারিদ্র্য দূর করার পাশাপাশি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত কয়েক বছরে চীন দারিদ্র্য নিরসনে অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সর্বাত্মক জয়লাভ করা চীনের জন্য অনেক তাত্পর্যপূর্ণ। চীন অন্যান্য দেশকে সুস্পষ্ট সংকেত দিয়েছে যে- দারিদ্র্য চিরকাল থাকে না এবং তা দূর করা যেতে পারে।

২০১৪ সাল থেকে চীন প্রতি বছরের ১৭ অক্টোবরকে ‘দারিদ্র্যবিমোচন দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করে। সেই সাথে, এই দিনটি ‘আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য দূরীকরণ দিবস’। আমরা বিশ্বাস করি যে, একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবন অর্জন আমাদের লক্ষ্য। আশা করি, আগামী দশ বছরে আমাদের জীবন আরও ভাল হবে।