রোববারের আলাপন- চীনে গণ-শরীরচর্চা উন্নয়ন
2022-10-16 06:36:36

আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি তৌহিদ এবং আকাশ ।


আকাশ: বন্ধুরা, আমি শরীরচর্চা অনেক পছন্দ করি। সিআরআইয়ের পাশে একটি পার্ক আছে, তার নাম হচ্ছে ‘লাও সান পার্ক’। আমি দুপুরে বা সন্ধ্যায় কাজ শেষ করে সেখানে যাই, শরীরচর্চা করি। ওখানে দৌড়ানোর দীর্ঘ রাস্তা, শরীরচর্চার নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা, যেমন  horizontal bar, parallel bars আছে। সেখানে প্রতিদিনে অনেকেই শরীরচর্চা করতে আসেন। 


তৌহিদ ভাই, আপনি কি ধরনের শরীরচর্চা পছন্দ করেন? আপনিও কি লাও সান পার্কে নিয়মিত যান? সেখানে বা চীনে গণ-শরীরচর্চা সম্পর্কে আপনি কী দেখেছেন? বন্ধুদেরকে কিছু বলতে পারবেন কি?

তৌহিদ:..


তৌহিদ: শ্রোতাবন্ধুরা, আজ আমরা চীনের গণ-শরীরচর্চা সম্পর্কে আমাদের কিছু তথ্য জানাবো।


আকাশ: হ্যাঁ। বন্ধুরা, ১৯৫২ সাল ১০ জুন কমরেড মাও চ্যে তং নিখিল চীন স্পোর্টস ফেডারেশনের জন্য লিখেছিলেন; ‘খেলাধুলা উন্নত করা, জনগণের শরীর ও সুস্থতার মান বাড়ানো’ দরকার। যাতে নয়া চীনের খেলাধুলা উন্নয়নের মৌলিক মিশন সুনির্দিষ্ট থাকে। গণ-প্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর থেকে, জনগণকে কেন্দ্র করে খেলাধুলা উন্নয়নের ধারণা ও নীতি লালন করে আসছে চীন।


‘সুন্দর জীবনের প্রতি জনগণের আকাঙ্ক্ষা আমাদের প্রচেষ্টার লক্ষ্য’। সিপিসি’র অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেস আয়োজনের পর থেকে, কমরেড সি চিন পিং কেন্দ্রিক সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটি চীনের খেলাধুলার সংস্কার ও উন্নয়নের পরিকল্পনা হাতে নেয়। এখন সেই লক্ষ্যেই সব কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। গণ-শরীরচর্চা দেশের কৌশলে পরিণত হয়েছে। আবাসিক এলাকার আশেপাশে খেলাধুলার পার্ক অনেক বেড়েছে। বিভিন্ন ধরনের আইনলাইন ও অফলাইন গেমসের আয়োজন করা হচ্ছে। জনগণের চাহিদাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের গেমসের আয়োজন, খেলাধুলার স্থাপনা বা মাঠ এবং যথাযথ শরীরচর্চার ব্যবস্থা উন্নত করা হচ্ছে। গণ-শরীরচর্চার গণসেবা ব্যবস্থা আরো উচ্চ মানে উন্নীত হয়েছে। যা ‘খেলাধুলা খাতে শক্তিশালী দেশ’ ও ‘সুস্থ চীন’—এই দুটি লক্ষ্য বাস্তবায়নে শক্তিশালী শক্তি যুগিয়েছে। ৭০ বছরের বেশি সময়ে, ‘জনগণকে কেন্দ্র করা’ নতুন যুগে চীনের খেলাধুলা উন্নয়নের মৌলিক দিক-নির্দেশনায় পরিণত হয়েছে। খেলাধুলা মানুষের সার্বিক উন্নয়ন বাস্তবায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে।


১৯৯৫ সালের জুন মাসে, ‘গণ-শরীরচর্চা পরিকল্পনা’ প্রকাশিত হয়। চীনে আনুষ্ঠানিকভাবে গণ-শরীরচর্চা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা শুরু হয়। এরপর দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় বা সরকারের কর্ম-প্রতিবেদনে গণ-শরীরচর্চাকে গুরুত্বারোপ করা হয়। গণ-শরীরচর্চা চীনের জাতীয় কোশলের পর্যায়ে উন্নত হয়। এরপর ‘সার্বিকভাবে নতুন যুগে স্কুলের খেলাধুলা উন্নত করা বিষয়ক পরিকল্পনা’, ‘গণ-শরীরচর্চা পরিকল্পনা ২০২১ সাল- ২০২৫ সাল’, ‘খেলাধুলার খাতে শক্তিশালী দেশ নির্মাণের পরিকল্পনা’, ‘সুস্থ চীন ২০৩০ পরিকল্পনা’সহ বেশ কিছু নীতিগত কার্যক্রম প্রকাশিত ও চালু হয়। যা গণ-শরীরচর্চার অব্যাহত উন্নয়নের বিষয়কে নিশ্চিত করে।


সংশ্লিষ্ট তথ্যে দেয়া যায়, ২০২১ সালের শেষ দিকে, চীনে মাঝে মাঝে শরীরচর্চা করার মানুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৩৭.২ শতাংশে পৌঁছেছে। তথ্যানুযায়ী, গণ-শরীরচর্চার অব্যাহত সুষ্ঠু উন্নয়ন প্রবণতা বজায় রয়েছে। পাশাপাশি, অনেকে ইতোমধ্যে গণ-শরীরচর্চার ধারণাকে গ্রহণ করেছেন। 


২০০৯ সাল থেকে প্রতি বছরের ৮ আগস্ট চীনের ‘গণ-শরীরচর্চা দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে। যাতে জনগণ আরো ব্যাপকভাবে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে পারে। ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিক গেমস, ২০১০ সালের কুয়াং চৌ এশিয়া গেমস, ২০২২ সালে বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের মতো বড় আকারের গেমস আয়োজনের কারণে জনগণের খেলাধুলার আগ্রহ উত্সাহিত করেছে। ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিক গেমসের আয়োজন চীনে গণ-শরীরচর্চা আরো প্রমোট করেছে। আরো বেশি মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেছেন। ২০২২ সালে বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের আয়োজন চীনে শীতকালীন খেলাধুলা প্রমোট করেছে। এবারের শীতকালীন গেমসের স্টেডিয়াম, স্থাপন ও মাঠ ভবিষ্যতে গণ-শীতকালীন খেলাধুলায় কাজে লাগবে। 


দীর্ঘমেয়াদে চীনের গণ-শরীরচর্চার স্থাপনা, স্টেডিয়াম ও মাঠ নির্মাণকাজ অব্যাহতভাবে উন্নত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালের শেষ দিক পর্যন্ত, দেশব্যাপী মোট ৩৯ লাখ ৭১  হাজার ৪শ খেলাধুলার স্টেডিয়াম ও মাঠ রয়েছে। 


গণ-শরীরচর্চা জগগণের সঙ্গে জড়িত, খেলাধুলা খাতে উন্নয়নের কাজ জনগণকে কেন্দ্র করে এগিয়ে নিতে হবে এবং জনগণের শরীরচর্চার চাহিদা অবশ্যই পূরণ করতে হবে।