অক্টোবর ১৪: "চীনের উপর মার্কিন শুল্ক আরোপের পদক্ষেপটি আর্থিক, রাজনৈতিক ও আইনগতভাবে ব্যর্থ হয়েছে।" যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্যাপিটল হিল’ সম্প্রতি একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। এতে স্বীকার করা হয় যে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র হেরে গেছে। প্রকৃতপক্ষে, এটি শুরু থেকেই একটি ধ্বংসাত্মক ফলাফল ছিল, যা চার বছরেরও বেশি সময় ধরে বারবার প্রমাণিত হয়েছে।
২০১৮ সালের মার্চ মাসে তত্কালীন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন তথাকথিত ‘৩০১ তদন্তের’ ভিত্তিতে চীনের সঙ্গে একটি বাণিজ্য যুদ্ধের উসকানি দেয়। ধাপে ধাপে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা প্রায় ৩৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চীনা পণ্যের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়। পাশাপাশি হুমকি দেওয়া হয় যে- "বাণিজ্য যুদ্ধ লড়াই করা সহজ এবং জয়ী হওয়াও সহজ"। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর, চীনের উপর শুল্ক আরোপের নীতি অব্যাহত ছিল। কিন্তু ঘটনা দেখা যায় যে, ‘শুল্ক যুদ্ধ’ চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছে, যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে।
অর্থনৈতিক তথ্য হল সবচেয়ে প্রত্যক্ষ প্রমাণ। মুডিস-এর গবেষণা দেখা যায় যে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে শুল্ক ব্যয়ের ৯০ শতাংশেরও বেশি বহন করে যুক্তরাষ্ট্র। ব্লুমবার্গ উল্লেখ করেছে যে, চীনের উপর আরোপিত শুল্ক মার্কিন ভোক্তা এবং ব্যবসার খরচ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে এবং মার্কিন উত্পাদন শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্য এক সংশ্লিষ্ট গবেষণায় দেখা যায় যে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে মার্কিন কোম্পানিগুলির বাজার মূল্যে ১.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হ্রাস পেয়েছে। এতে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছে এবং প্রতিটি পরিবারের গড় বার্ষিক ব্যয় প্রায় ১৩০০ ডলার বেড়ে গেছে। সিঙ্গাপুরে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ডেভিড অ্যাডেলম্যান উল্লেখ করেন যে, ‘বাণিজ্য যুদ্ধ চীনা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি, কিন্তু মার্কিন অর্থনীতিতে আঘাত করেছে।"
একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়েছে। ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুসারে, তিনি শুল্ক ব্যবহার করে চীনের সঙ্গে "কৌশলগত প্রতিযোগিতা" করতে চেয়েছিলেন এবং রাজনীতি, অর্থনীতি, সামরিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ আধিপত্য বজায় রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিগত চার বছরে চীন উন্নত হয়েছে এবং চীন জাতীয় মর্যাদা ও মূল স্বার্থ রক্ষা করেছে।
উল্লেখ, আইনগত ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র নিজেও সন্দেহের মধ্যে পড়েছে। কোনো সন্দেহ নেই যে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র হেরে গেছে। চীনের সঙ্গে ‘শুল্ক যুদ্ধ’ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
প্রথমত, তাদের বুঝতে হবে যে, অর্থনৈতিক সাধারণ জ্ঞান এবং বাজার আইনের বিরুদ্ধে যায় এমন আচরণ কাজ করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, তথাকথিত "রাজনৈতিক শুদ্ধতা" দিয়ে চীনের নীতিকে বিভ্রান্ত করা তার নিজের সমস্যার সমাধান করতে পারে না। তা ছাড়া, চীনের বিরুদ্ধে চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা শুল্ক যুদ্ধে দেখা গেছে যে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আধিপত্যবাদ ব্যর্থ হয়। যা বারবার প্রমাণ করে যে, মার্কিন রাজনীতিবিদদের হুমকি চীনের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা হলো যুক্তরাষ্ট্রের উচিত সঠিকভাবে চীনের উন্নয়নকে মেনে নেওয়া। গত কয়েক বছরে, এটি "কৌশলগত প্রতিযোগিতা" বা "বিস্তৃত সংঘর্ষ" উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে বোঝা যায়, চীন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের বোঝার ক্ষেত্রে গুরুতর ভুল রয়েছে। চীন বহুবার বলেছে যে, উন্নয়নের লক্ষ্য কখনোই যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাওয়া বা প্রতিস্থাপন করা নয়, বরং ক্রমাগত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া এবং নিজ জনগণের উন্নত জীবনযাপন নিশ্চিত করা। চীন আরেকটি যুক্তরাষ্ট্র হবে না এবং যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের পছন্দ-অপছন্দ অনুযায়ী চীনকে পরিবর্তন করতে পারবে না। শুধুমাত্র পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং উভয়ের জয়ের ভিত্তিতে সহযোগিতাই দুই পক্ষের একযোগে সামনে চলার একমাত্র পদ্ধতি।
(জিনিয়া/তৌহিদ/শুয়েই)