৮ম বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সেতু: যোগাযোগের নতুন মাত্রা
2022-10-14 18:35:42

সাজিদ রাজু, ঢাকা: বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা পিরোজপুরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া ‘৮ম বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সেতু’ যোগাযোগের ক্ষেত্রে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। কচা নদীর ওপর নির্মিত ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতু এলাকার কৃষিসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রাখতে শুরু করেছে অবদান। স্থানীয়রা বলছেন, খুলনা-বরিশালের মধ্যে যোগাযোগ সহজ করেছে, ফলে বেড়েছে কৃষি পণ্য ও মালামাল পরিবহনের হার। বিশেষ করে এ সেতুর মাধ্যমে সাগরকন্যা কুয়াকাটার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ চালু হওয়ায় বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা।

খরস্রোতা কঁচা নদী পার হতেই দেখা মিলবে এক নান্দনিক স্থাপনার। অনেকটাযেঁন মুঘল স্থাপত্যের আদলে নির্মিত ফটক, দাঁড়িয়ে আছে কালো কার্পেটে মোড়ানো মসৃণ পথের দুই পাশে দুই পায়ে ভর দিয়ে।

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সেতু’ এটি। কেবল ব্যতিক্রম নির্মাণ বৈশিষ্ট্যই নয় বরং এই সেতু অনন্য হয়ে উঠেছে এর যোগাযোগ গুরুত্বের জন্য। এই সেতুর মাধ্যমে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও বরগুনা এবং খুলনা বিভাগের খুলনা ও বাগেরহাটসহ মোট ১৬টি জেলার মধ্যে। একইসঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে সড়ক পথে যুক্ত করেছে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে।

সেতু নির্মাণের পর কঁচা নদীর একমাত্র বেকুটিয়া ফেরি এখন বিলুপ্ত। চালক ও যাত্রীরা বলছেন, আগে খুলনা থেকে বরিশাল যাতায়াতে কেবল ফেরি পার হতেই সময় লাগতো ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা। সেতুটি চালু হওয়ার পর এখন কেবল যাতায়াতের সময়ই কমেনি, কমেছে খরচও।

স্থানীয় পরিবহন ড্রাইভার

“বরিশাল থেকে আসছি, খুলনা যাবো। আগে লাগতো ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা, এখন লাগে ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা।“

সেতুর টোল প্লাজা থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, বরিশাল থেকে প্রতিদিন ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ ছোট বড় যানবাহন আসে পিরোজপুর বা খুলনার দিকে আসে। এতে টোল আদায় হয় দিনে ৩৫ থেকে ৩৭ হাজার টাকা। অন্যদিকে খুলনা বা পিরোজপুর থেকে বরিশাল অভিমুখে যায় আরো বেশি যানবাহন, আয় হয় আরো বেশি। সবচেয়ে বেশি যাতায়াত করে মোটরসাইকেল ও অটোরিক্সাসহ স্থানীয় যানবাহন।

টোল আদায়কারী

“ট্রাক চলে, মিনিবাস, মিনিট্রাক, অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল এগুলা চলে। আর ঢাকার পরিবহনগুলাও চলাচল করে।“

পিরোজপুরের কঁচা নদীর উপর নির্মিত এই সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের যোগাযোগ আরো সহজ হয়েছে। বরিশাল বিভাগের সঙ্গে শিল্পনগরী খুলনার সড়ক যোগাযোগের প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে। বিশেষ করে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর ও মংলা বন্দরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এর প্রভাবও পড়তে শুরু করেছে এসব এলাকায়। স্থানীয়রা বলছেন, সেতু নির্মাণের পর এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার যেমন পরিবর্তন হচ্ছে তেমনি দেখা দিয়েছে পর্যটন সম্ভাবনা।

স্থানীয় বাসিন্দা

“আমি সেতুডা হওয়ার পর এই প্রথম দেখতে আসলাম। ফ্যামিলির সবাইরে নিয়ো আসছি এখানে। বেশ ভালোই লাগলো। অনেক লোকজন দেখলাম ব্রিজের উপর, ঘুরতে আসছে।“

সেতুটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘চায়না রেলওয়ে ১৭তম ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড’ জানায় নদীর গভীরতা বেশি থাকায় ৯টি স্প্যান ও ১০টি পিলার সম্বলিত সেতুটি নির্মাণে বেশ বেগ পেতে হয়। এরপর কাজের গতি কিছুটা মন্থর হয় করোনাকালে। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্মাণ কাজ শেষ হরে সেতুটি হস্তান্তর করা হয়।

“চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের যে প্রতিশ্রুতি ছিলো তার অন্যতম এই ৮ম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু। বরিশাল ও খুলনার মাঝে এই নদী পার হওয়া খুব সময় সাপেক্ষ ব্যাপার ছিলো। এই সময় ক্ষেপণ দূর করতেই ব্রিজটি নির্মাণের উদ্যোগ নেই। এখন তা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই সেতু হওয়ার পর এলাকার মানুষ খুব খুশি, এটাও আমরা দেখতে পাচ্ছি।“

নান্দনিক এ সেতু নির্মাণে ৮৮৯ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয়ের ৬৫৪ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে দিয়েছে চায়না এইড আর বাকি ২৪৪ কোটি টাকা ব্যয় করেছে বাংলাদেশ সরকার।