অক্টোবর ১৩: সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনা ব্রনাবিচ চায়না সেন্ট্রাল রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশন (সিসিটিভি)-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাত্কারে বলেছেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে চীন দৃঢ়ভাবে উচ্চ-স্তরের উন্মুক্তকরণ অব্যাহত রেখেছে, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের উন্নয়নের জন্য সুযোগ বয়ে এনেছে ও আনছে। সার্বিয়া চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আসন্ন ২০তম জাতীয় কংগ্রেস থেকে চীনের ভবিষ্যতের উন্নয়ন-পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী।
ব্রনাবিচ বলেন, "চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম জাতীয় কংগ্রেস শুধুমাত্র চীনের রাজনৈতিক জীবনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলির একটি, তা নয়, বরং সার্বিয়ার মতো দেশগুলোর জন্যও অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। চীন সার্বিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার এবং সার্বিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদারও বটে। গত এক দশকে সার্বিয়া ও চীনের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতায় ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে এবং ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। চীন-সার্বিয়া সহযোগিতা সার্বিয়া ও এর জনগণের জন্য কল্যাণকর প্রমাণিত হয়েছে। আমরা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম জাতীয় কংগ্রেসে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শক্তি চীনের মনোভাব শুনতে আগ্রহী এবং ভবিষ্যতের উন্নয়নের জন্য তার পরিকল্পনার কথা জানতে আগ্রহী।"
ব্রনাবিচ বিশ্বাস করেন যে, চীন সবসময় উন্মুক্ত ও ন্যায্য বাণিজ্যের পক্ষের শক্তি। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে, চীন দৃঢ়ভাবে বহির্বিশ্বে উচ্চ-স্তরের উন্মুক্তকরণ অব্যাহত রেখেছে; তার নিজস্ব অগ্রগতির মাধ্যমে বিশ্বের সাথে উন্নয়নের লভ্যাংশ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে; এবং অনেক দেশকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন অর্জনে সহায়তা করছে। সার্বিয়া চীনের সাথে পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতা থেকে বাস্তব সুবিধা পেয়েছে।
তিনি বলেন: "চীনের উচ্চ-স্তরের উন্মুক্তকরণ বিশ্বের জন্য কেন তাত্পর্যপূর্ণ? গত দশ বছরে সার্বিয়া একাই চীনে তার রপ্তানি ১৫২ গুণ বৃদ্ধি করেছে। কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব সত্ত্বেও, গত বছর সার্বিয়া ও চীনের মধ্যে আমদানি ও রপ্তানি ছিল ৫ বিলিয়ন ইউরোর কাছাকাছি। 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ এবং চীন-সিইইসি সহযোগিতা প্রশংসনীয়। সার্বিয়া চীনা বিনিয়োগকারীদের একাংশকে ইতোমধ্যে স্বাগত জানিয়েছে। চীনের সহায়তায় সার্বিয়ান উদ্যোগগুলোর পুনর্জন্ম হয়েছে এবং চীনের শীর্ষ রপ্তানি উদ্যোগগুলোর অন্তর্গত। গত বছর সার্বিয়ার শীর্ষ পাঁচটি রপ্তানি উদ্যোগের মধ্যে, তিনটি চীনা অর্থায়িত উদ্যোগ ছিল। এগুলো হচ্ছে: সার্বিয়া জিজিন মাইনিং কোম্পানি, হেগাং সার্বিয়া কোম্পানি, ও সার্বিয়া জিজিন কপার কোম্পানি৷ এসব উদ্যোগে বিনিয়োগ হয়েছে ২ বিলিয়ন ইউরোর কাছাকাছি। চীন অনেক দেশের জন্য উন্নয়নের সুযোগ বয়ে এনেছে এবং তাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়নে সহায়তা করছে।”
দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার অবিস্মরণীয় মুহূর্তগুলো পর্যালোচনার সময়, ব্রনাবিচ সবচেয়ে কঠিন সময়ে তাদের স্থিরতার জন্য চীনা অংশীদারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন: "চীন এমন এক অংশীদার, যে আপনার সবচেয়ে কঠিন সময়ে দৃঢ়ভাবে পাশে দাঁড়াবে; আপনি তার ওপর নির্ভর করতে পারবেন। সার্বিয়া যখন কোভিড মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে, তখন চীন ছিল প্রথম দেশ যে আমাদের সাহায্য করেছে। আমরা চীন থেকে বিভিন্ন চিকিত্সা সরঞ্জাম এবং ভ্যাকসিন পেয়েছি, এবং চীন আমাদের প্রতি সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দিয়ছে। সার্বিয়া একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম পাঠিয়েছে চীনে। টিমের সদস্যরা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কলাকৌশল শিখেছেন চীনের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে।”
ব্রনাবিচ বিশ্বাস করেন যে, সার্বিয়া ও চীনের মধ্যে বন্ধুত্ব গভীর এবং দু’দেশের মধ্যে ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এটা শুধুমাত্র উন্নয়নের সুযোগ ভাগ করার জন্য নয়, বরং সংকটের সময় পারস্পরিক সমর্থন ও সহযোগিতার জন্যও।
বর্তমানে, বিশ্ব গভীর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং শান্তি ও উন্নয়নের থিমগুলোও গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। ব্রনাবিচ বিশ্বাস করেন যে, এই ধরনের পরিস্থিতিতে, সকল দেশকে শান্তভাবে চিন্তা করতে হবে, তাদের আগের চেয়ে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এবং আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতিগুলো মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন: “সবকিছুর পূর্বশর্ত হিসাবে, আমি বিশ্বাস করি যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বারা সাধারণাভাবে স্বীকৃত একটি দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা অলঙ্ঘনীয়। এখানে আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে, চীন সর্বদা দৃঢ়ভাবে সার্বিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সমর্থন করেছে এবং সার্বিয়াও কখনোই ‘এক চীননীতি’ থেকে সরে আসবে না। এই নীতিগত অবস্থান সার্বিয়া ও চীনকে একে অপরের আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।” (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)