ব্রিটেনের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘চীনা ভাষা সেতু’ চাইনিজ দক্ষতা প্রতিযোগিতা ২০২২ অফলাইন পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান ৭ অক্টোবর লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্রিটেনের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষরা সবাই বলেছেন যে, চীনা ভাষা শেখা শিক্ষার্থীদের বিকাশ এবং ভবিষ্যতের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি বিশ্ব সম্পর্কে তাদের জানা-বোঝা প্রসারিত করতে সহায়তা করবে।
‘চীনা ভাষা সেতু’ ক্লাবের লন্ডন স্টপ চলতি বছরের জুন মাসে উন্মোচন করা হয়েছে। এবারের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান হলো ক্লাবের উদ্যোগে প্রথম অফলাইন থিম ইভেন্ট। এতে ব্রিটেনের ১৭টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৪০ জনেরও বেশি প্রার্থী এবং তাদের প্রশিক্ষকরা অংশ নিয়েছেন। অনুষ্ঠানে চীনের লোকনৃত্য এবং কুছেংসহ বিভিন্ন পারফরম্যান্সও ছিল, যা একটি শক্তিশালী চীনা সাংস্কৃতিক পরিবেশে উপস্থিত ব্রিটিশ শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের অভিভূত করেছিল।
লন্ডনের কিংসফোর্ড স্কুলের অধ্যক্ষ জোয়ান ডিলান ছিলেন ৮জন ব্রিটিশ প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি স্কুলের প্রিন্সিপালদের একজন; যারা এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি বলেন যে, ব্রিটেনের অনেক স্কুল এখন চাইনিজ ক্লাস প্রদান করে বা শিক্ষার্থীদের চীনা ভাষা শেখাতে চায়। এতে বোঝা যায় অনেক মানুষ এখন তরুণদের চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি বোঝার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন।
২০০০ সালে কিংসফোর্ড স্কুল চীনা ভাষার একটি প্রয়োজনীয় কোর্স হিসেবে ব্রিটেনের প্রথম স্কুলে পরিণত হয়। ডিলান সিনহুয়া বার্তা সংস্থাকে বলেন যে, স্কুলের সিদ্ধান্তের প্রধান কারণ ছিল, "অনেক তরুণ ব্রিটিশ চীনের বিস্ময়কর ইতিহাস এবং সংস্কৃতি বোঝে না। চীনা ভাষা শেখা তাদের চিন্তাভাবনা সম্প্রসারণ করবে, তাদের (বিশ্ব সম্পর্কে) জানা-বোঝা বাড়াবে এবং "বিশ্ব নাগরিক" হয়ে উঠতে তাদেরকে সাহায্য করবে।
লন্ডনে অবস্থিত কেনসিংটন ওয়েড চাইনিজ-ইংরেজি দ্বিভাষিক স্কুল হল একটি চীনা-শিক্ষাদানকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রিন্সিপাল সুজান হেগ বলেন, চীন এখন বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি বিশ্বাস করেন যে, শিশুদের ভাষা ও সংস্কৃতি বোঝা-সহ চীন সম্পর্কিত দক্ষতা থাকা দরকার। "চীনা ভাষা শেখা সহজ কাজ নয়, এটি জ্ঞান অর্জনে সহায়ক, এটি শিশুদের ভবিষ্যত ক্যারিয়ারের জন্যও সহায়ক।"
‘চীনা ভাষা সেতুর’ ব্রিটেনের প্রতিযোগিতা এলাকার বিচারক এবং লন্ডন ইউনিভার্সিটির পূর্ব এশিয়া-বিষয়ক কলেজের ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাথরিন ক্যারুথারস সিনহুয়া বার্তাসংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন, ব্রিটিশ বিদ্যালয়গুলি চাইনিজ শেখার বিষয়ে ‘আবেগপূর্ণ’।" বর্তমানে, ব্রিটেনে চীনা শিক্ষা সুষ্ঠুভাবে বিকশিত হচ্ছে। অতীতে, ব্রিটেনে পেশাদার প্রশংসাপত্র সহ চীনা শিক্ষক খুব কম ছিল, তবে এখন বেশিরভাগ চীনা শিক্ষক শিক্ষার প্রাসঙ্গিক স্নাতকোত্তর প্রশংসাপত্র পেয়েছেন। ব্রিটেনে চীনা শিক্ষকদের মধ্যে একাডেমিক বিনিময়ও খুব সক্রিয়।
জানা গেছে, ১৫তম ‘চীনা ভাষা সেতু’ বিশ্ব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চীনা ভাষা প্রতিযোগিতা চলতি বসন্তকালে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের প্রায় ১০০টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে।
ইতালীয় নোবেল বিজয়ী জর্জিও প্যারিসির প্রথম জনপ্রিয় বিজ্ঞান বিষয়ক বইয়ের চীনা অনুবাদ প্রচার সম্মেলন বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, ইতালীয় বিজ্ঞানী জর্জিও প্যারিসির "ফ্লাইং উইথ দ্য স্টারলিংস (IN UN VOLO DI STORNI)" বইটির চীনা সংস্করণ প্রচার সম্মেলন চীনে ইতালীয় দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আয়োজন করা হয়েছিল। অধ্যাপক জর্জিও প্যারিসি, চীনে ইতালির রাষ্ট্রদূত লুকা ফেরারি, চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেসের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ব্যুরোর উপ-পরিচালক উ ইয়েন, চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অব হাই এনার্জি ফিজিক্সের পরিচালক ওয়াং ই ফাং, চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেসের ইউরোপিয়ান ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক ছেন সিন, চীনে ইতালির দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কাউন্সিলার ফেদেরিকো রবার্তো আন্তোনেলি এবং বইয়ের চীনা অনুবাদক, বেইজিং ফরেন স্টাডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতালীয় বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ওয়েন ঝেংসহ কয়েক ডজন চীন এবং ইতালির অতিথি অনলাইন ও অফলাইনে এই ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছেন।
লেখক জর্জিও প্যারিসি ভিডিও লিঙ্কে বলেন, লেখার মূল উদ্দেশ্য হল জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় এই কাজটি পাঠকদের আরও ভাল পদ্ধতিতে এবং বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করতে সাহায্য করে। তিনি বলেন যে, লোকেরা প্রায়শই মনে করে, কঠিন বিজ্ঞান বোঝা কঠিন, কিন্তু ইতালীয় পাঠকরা যেমন অনুবাদের মাধ্যমে প্রাচীন চীনা কবিতার সৌন্দর্য অনুভব করতে পারেন, তেমনি ভাল জনপ্রিয় বিজ্ঞানভিত্তিক কাজগুলিও সাধারণ পাঠকদের বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সৌন্দর্য সহজে এবং আনন্দের সঙ্গে উপলব্ধি করতে সাহায্য করতে পারেন।
চীনে ইতালির রাষ্ট্রদূত লুকা ফেরারি তার বক্তৃতায় লেখক জর্জিও প্যারিসি এবং অনুবাদক অধ্যাপক ওয়েন ঝেংকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বিজ্ঞান খাতে ইতালি ও চীনের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রশংসা করেছেন।
চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেসের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ব্যুরোর উপ-পরিচালক উ ইয়েন তার বক্তৃতায় চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেস এবং ইতালীয় বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীল ও ফলপ্রসূ সহযোগিতা পর্যালোচনা করেছেন। উ ইয়েন বলেন, প্যারিসিকে ১৯৮০ সালে চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অফ ফিজিক্সের ভিজিটিং প্রফেসর হিসাবে কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। তিনি বহু বছর ধরে চীনা একাডেমি অফ সায়েন্সেসের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।
চীনে ইতালির দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কাউন্সিলার ফেদেরিকো রবার্তো আন্তোনেলি বলেন, "ফ্লাইং উইথ দ্য স্টারলিংস (IN UN VOLO DI STORNI)" বইটির চীনা সংস্করণের প্রকাশ দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক আদান-প্রদানের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ভবিষ্যতে আরও প্রকল্প ও কার্যক্রমের মাধ্যমে ইতালি ও চীনের মধ্যে বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়াবে।
বেইজিং ফরেন স্টাডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতালীয় বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ওয়েন ঝেং ‘চায়না মিডিয়া গ্রুপে’ দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জর্জিও প্যারিসির কাজ অনুবাদ করতে পেরে তিনি নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে করছেন। তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে চীন ও ইতালির পাঠকদের আরও চমত্কার কাজ প্রচার করতে পারবেন এবং গভীর ও ফলপ্রসূ দ্বিপক্ষীয় সাংস্কৃতিক বিনিময় আরও সমৃদ্ধ হবে।
‘চীনের বিদেশে লেখাপড়া উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২২’ প্রকাশিত
২৮ সেপ্টেম্বর গ্লোবালাইজেশন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, ব্যাংক অফ চায়না এবং সাউথ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি অফ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইকোনমিক্সের ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট যৌথভাবে গবেষণা ও সম্পাদিত "চীনের বিদেশে লেখাপড়া উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২২" নীল বই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে। "প্রতিবেদন" অনুসারে, বিদেশে অধ্যয়নরত চীনা শিক্ষার্থীরা আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ বিকাশের প্রবণতা দেখায় এবং "চীনে অধ্যয়ন" এর ব্র্যান্ড মূল্য আরও বেশি সংখ্যক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্বীকৃতি পেয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বিদেশি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০ লাখ ৬১ হাজার ৫১১জন চীনা শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে, যা বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। গ্লোবালাইজেশন থিঙ্ক ট্যাঙ্কের মহাসচিব এবং প্রতিবেদনটির প্রধান সম্পাদক মিয়াও লু বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কোভিড মহামারী এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে, বিদেশে অধ্যয়নরত চীনা শিক্ষার্থীরা আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ বিকাশের প্রবণতা দেখা গেছে। তিনি বলেন,
“২০১৯ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চীন এখনও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বৃহত্তম উত্স, প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছে। বিদেশে অধ্যয়নরত চীনা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে, এবং ভবিষ্যতে আরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ইউরোপীয় এবং এশিয়ান দেশগুলিতে যেতে পারে।”
সংশ্লিষ্ট তথ্য উপাত্তে দেখা যায় যে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিদেশে অধ্যয়নরত চীনা শিক্ষার্থীদের দেশে ফিরে আসার ইচ্ছা আরও প্রবল হয়েছে। মিয়াও বলেন,
“২০১৯ সালের শুরুতে, বিদেশ থেকে ফিরে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ লাখ ৮০ হাজার। সে বছরের শেষ দিকে ৪২ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী দেশে ফিরে এসেছেন। তারা আমাদের দেশের শ্রম বাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক এবং জ্ঞানের মূলধন হয়ে উঠেছে।”
"চীনের বিদেশে লেখাপড়া উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২২" অনুযায়ী চীনে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রবণতা তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে, চীন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গন্তব্য দেশ এবং এশিয়ার বৃহত্তম গন্তব্য দেশে পরিণত হয়েছে এবং "চীনে অধ্যয়ন" এর ব্র্যান্ড মূল্য আরও বেশি হয়েছে। গ্লোবালাইজেশন থিঙ্ক ট্যাঙ্কের চেয়ারম্যান এবং প্রতিবেদনের প্রধান সম্পাদক ওয়াং হুই ইয়াও বলেন:
“চীনের আরও উন্মুক্তকরণের সঙ্গে সঙ্গে, আরও বেশি শিক্ষার্থীর বিদেশে যাওয়া এবং চীনে লেখাপড়া করতে আসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে চীন ও অন্যান্য দেশের মধ্যে বোঝাপড়া আরও গভীর হয়েছে, অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে এবং আরও বেশি শিক্ষার্থী বিশ্ব শাসনে যোগ দিতে পারে।”