অক্টোবর ৩: গত কয়েক দশকে চীন অবকাঠামো নির্মাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি সম্পূর্ণ শিল্পব্যবস্থা গঠনের নতুন পথে সামনে এগিয়েছে। বাজার গড়ে তুলতে দেশীয় সম্পদের ব্যবহারও বাড়িয়েছে চীন। চীনের উন্নয়নের পথ আসলে সহজ ছিল না। তবে চীন অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা সরবরাহ করেছে। চীন একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে অন্যান্য দেশকে উন্নয়নে সহায়তা করতে বরাবরই প্রস্তুত। ২০১৩ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যৌথভাবে রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং একুশ শতাব্দীর সমুদ্র রেশমপথ গড়ে তোলার প্রস্তাব করেন। এটি হলো ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ।
‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ উন্নয়নশীল দেশগুলো এমন কি সমস্ত বিশ্বের জন্য নতুন আশাবাদ নিয়ে এসেছে। চীন ও আফ্রিকার যৌথ সহযোগিতায় আদ্দিস আবাবা-জিবুতি রেলওয়ে (Addis Ababa–Djibouti Railway), লেকি ডিপ ওয়াটার পোর্ট, মোম্বাসা বন্দরসহ (Mombasa Port) বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত চীন আফ্রিকার কমপক্ষে ১৬টি দেশে ৪৫টি শিল্পক্ষেত্র, ২৩টি দেশে ৫৬টি বিদ্যুত্ শক্তি প্রকল্প এবং ১৭টি দেশে ৩২টি রেলপথ প্রকল্প ও ৩৩টি বন্দর প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় এসেছে প্রায় গোটা আফ্রিকা। নয় বছরে আফ্রিকার মোট জিডিপি ও মানুষের গড় আয়ু বিভিন্ন মাত্রায় বেড়েছে। শিল্পায়ন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন এবং কর্মসংস্থানের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি আফ্রিকায় অপরাধের হার ক্রমশ কমেছে। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় বিভিন্ন সহযোগিতামূলক প্রকল্প আফ্রিকায় অনেক পরিবর্তন এনেছে। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বুদ্ধি ও আন্তরিকতা আফ্রিকান জনগণ ও নেতাদের ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে।
আসলে উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ শুধু আফ্রিকান দেশগুলোর জন্য নয়। এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিরাজমান একটি বৈশ্বিক সমস্যা। অব্যাহত অনুশীলন ও সাফল্য অর্জন করার পাশাপাশি অধিক থেকে অধিকরত দেশ ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগে অংশ নিয়েছে। চীনও বিশ্বের সাথে চীনা পরিকল্পনা ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চায়।
ভূ-রাজনৈতিক কারণে ভারত ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগে শরিক হয়নি। তবে ভারতের সাবেক বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার বাংলাদেশ চীনকে নতুন বৈশ্বিক সহযোগী হিসেবে দেখছে। ২০১৯ সালে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেইজিংয়ে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগকে বাংলাদেশের ‘সোনার বাংলা’ পরিকল্পনার সঙ্গে সংযুক্ত করার বিষয়ে একমত হন। এটি আঞ্চলিক যোগাযোগ ও সহযোগিতার নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। বর্তমানে চীনের খুনমিং ও বাংলাদেশের চট্টগ্রামকে সংযুক্তকারী ডাবল পাইপলাইন নির্মিত হচ্ছে। সাংস্কৃতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে শিক্ষা ও পেশাদার ক্ষেত্রে যোগাযোগ এ সহযোগিতা জোরদার করেছে। সন্ত্রাসদমনের ক্ষেত্রে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে জাতীয় পর্যায়ের সন্ত্রাসদমন সম্মেলন নিয়মিত আয়োজন করছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্কের শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় চীন ইতিবাচক ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করে আসছে। এদিকে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর চীনের অর্থ ও উত্পাদন-ক্ষমতা ব্যবহার করে টেকসই অর্থনীতি বৃদ্ধির স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।
‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ মানবজাতির ভাগ্যের অভিন্ন সম্প্রদায় গড়ে তোলা এবং বিশ্বের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে। ধারাবাহিক চীনা প্রস্তাব জাতিসংঘে স্বীকৃত হয়েছে এবং জাতিসংঘের ধারায় লিখিত হয়েছে। ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিশ্ব উন্নয়নের প্রস্তাব করেছেন। এটি সমস্ত বিশ্বের উন্নয়নের জন্য একটি চীনা পরিকল্পনা। (ছাই/আলিম)