অক্টোবর ৮: গত এপ্রিল মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মানব জাতির ভাগ্য ,নিরাপত্তা ও কল্যাণ বিবেচনা করে ‘বিশ্ব নিরাপত্তা প্রস্তাব’ উত্থাপন করেন। এটি ‘এক অঞ্চল এক পথ প্রস্তাব’ ও ‘বিশ্ব উন্নয়ন প্রস্তাবে’র পর বিশ্বের কাছে চীনের প্রদান করা আরেকটি আন্তর্জাতিক গণপণ্য এবং আন্তর্জাতিক সমাজে তা আবেদন সৃষ্টি করেছে।
অনেক দেশের মানুষেরা মনে করেন, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মানব জাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি ধারণার প্রতিফলন এ প্রস্তাব, যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় চীনের পরিকল্পনা প্রদান করেছে।
গত ২১ এপ্রিল, বোও এশিয়া ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং প্রথম বারের মতো বিশ্ব নিরাপত্তা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, নিরাপত্তা হল উন্নয়নের শর্ত এবং মানব জাতি একটি অবিচ্ছেদ্য নিরাপত্তার অভিন্ন কমিউনিটি।
প্রেসিডেন্ট সি ছয় দিক থেকে এ প্রস্তাবটিকে ব্যাখ্যা করেছেন। তা হল: অভিন্ন সার্বিক, সহযোগিতামূলক ও টেকসই নিরাপত্তা ধারণায় অবিচল থাকা, নানা দেশের ভৌগলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে সম্মান, জাতিসংঘ সনদ ও নিয়ম মেনে চলা, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নানা দেশের যৌক্তিক উদ্বেগকে সম্মান করা, সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ পদ্ধতির মাধ্যমে মতভেদ দূর করা এবং ঐতিহ্যিক ক্ষেত্র ও তার বাইরের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা রক্ষায় সমন্বয় করা।
মিয়ানমারের কৌশল এবং আন্তর্জাতিক ইস্যু গবেষণালয়ের উপদেষ্টা খিন মুয়াং সুয়ে মনে করেন, বিশ্ব শান্তি রক্ষায় এ প্রস্তাব বড় অবদান রেখেছে এবং আন্তর্জাতিক সমাজের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য এ প্রস্তাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি, এশিয়া এবং বিশ্বের নেতাদের যারা শান্তিকে ভালবাসেন- তারা প্রেসিডেন্ট সি উত্থাপিত এ প্রস্তাবের গুরুত্ব বুঝেন।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী আঞ্চলিক নিরাপত্তা সমস্যা দেখা যায়। একতরফাবাদ, আধিপত্যবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। ঐতিহ্যিক ও অন্য নিরাপত্তা হুমকি জড়িত আছে। মানব জাতি কঠোর নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এমন প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় চীন বিশ্ব নিরাপত্তা প্রস্তাব উত্থাপন করেছে।
গত জুন মাসে, ব্রিক্স সম্মেলন চলাকালে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিশ্ব নিরাপত্তা প্রস্তাবের অর্থ ব্যাখ্যা করেছেন। অবিচ্ছেদ্য মানব জাতির অভিন্ন নিরাপত্তা কমিউনিটির ভিত্তিতে সংঘাত নয়- সংলাপ, জোটবদ্ধতা নয়- অংশীদারিত্ব এবং জিরো-সাম নয়- পারস্পরিক কল্যাণের একটি নতুন নিরাপত্তার পথে এগিয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট।
কাজাখস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির সদস্য ও রাজনৈতিক গবেষণালয়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তি আইদার আমরেবায়েভ বলেছেন, আদর্শগত কুসংস্কার ত্যাগ করে সহযোগিতা করার বাস্তব পদ্ধতি প্রদান করে বৈশ্বিক প্রশাসন জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চীন।
তিনি বলেছেন, বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় শক্তি জোগাড় করা হল বর্তমানে বিশ্ব উন্নয়নে সবচেয়ে জরুরি এক ব্যাপার। যদি মানব জাতি ঐক্যবদ্ধ থেকে নানা ধ্বংসাত্মক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে না পারে- তাহলে মানব জাতি সুদূর অতীত এমনকি কয়েক শতাব্দী আগে ফিরে যাবে। এটা মানব জাতির উন্নয়নের জন্য বড় বাধা হবে।
চীন বিশ্ব নিরাপত্তা প্রস্তাবের উত্থাপক এবং বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় বাস্তব কাজ করে আসছে। দীর্ঘসময়ে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় ইতিবাচক অবদান রেখেছে চীন এবং ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কাজের দ্বিতীয় বৃহত্তম অবদানকারী দেশ হিসেবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে চীন সবচেয়ে বেশি শান্তিরক্ষা কর্মী পাঠায়। মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্তান, ইরান ও কোরীয় উপদ্বীপের পরমাণু সমস্যাসহ নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চীন। জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাস দমন, সাইবার নিরাপত্তাসহ নানা ক্ষেত্রেও চীন ইতিবাচক অবদান রেখেছে। (শিশির/এনাম/রুবি)