বিশাল হলুদ নদী, ঘূর্ণায়মান ইয়াংসি নদী। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মাতৃভূমির নদীগুলোর ওপর বরাবরই মনোযোগ দিয়ে আসছেন। তিনি ইয়াংসি নদী সুরক্ষা এবং হলুদ নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষা ও উচ্চ মানের উন্নয়নের জন্য ধারাবাহিক গুরুত্বপূর্ণ আদেশ জারি করেছেন। বর্তমানে ইয়াংসি নদী পরিবেশগত অগ্রাধিকার ও সবুজ উন্নয়নের প্রধান এলাকা হয়ে উঠেছে। হলুদ নদীর ধারে প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার হয়েছে, সবুজ হয়েছে। চীনের নদীগুলোর কাছাকাছি অঞ্চলে ঐতিহাসিক ও মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছে।
এটি হলো উপগ্রহ থেকে তোলা হলুদ নদীর ছবি। গবেষকরা টানা কয়েক দশকের পর্যবেক্ষণের ফলাফল দিয়ে হলুদ নদীর ধারের প্রাকৃতিক অবস্থা পুনরুদ্ধার করেছেন। বর্তমানে হলুদ নদীর প্রাকৃতিক সবুজ লাইন প্রায় ১৫০ কিলোমিটার এগিয়ে গেছে।
আকাশ থেকে দেখা যায় বিভিন্ন বিশাল বৃত্ত
দশ বছরে উলানবুহ্যে মরুভূমির কেন্দ্রীয় স্থানে জৈব চারণভূমি, হ্যালোক্সিলন, আর্বার এবং ফুলের কাঠি নিয়ে গঠিত বালি-ফিক্সিং বন রোপণ করা হয়েছে। বন চারণভূমির বৃদ্ধি রক্ষা করে, গরুর সার মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এতে গড়ে উঠেছে একটি প্রাকৃতিক পরিবেশগত চক্র।
ইনার মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বেয়ান্নাওর শহরের তেংখৌ জেলার পশুপালক: ওয়াং ছুই মেই:
আমার পরিবারের প্রায় ৭ বর্গকিলোমিটারের চারণভূমি আছে। ঘাসও অনেক বেশি, আমাদের জীবন আগের চেয়ে সুন্দর হয়েছে।
ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত সবুজ লাইন হলুদ নদীর অববাহিকায় জল ও মাটি আটকে রাখে। হলুদ নদীতে নিঃসৃত পলির পরিমাণ প্রতি বছর গড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন টন হ্রাস পেয়েছে। দশ বছরে হলুদ নদীর অববাহিকায় ২৬.৮ হাজার বর্গকিলোমিটার মাটি ক্ষয় নিয়ন্ত্রিত হয়েছে,য চারটিরও বেশি শাংহাই মহানগরের আয়তনের সমান।
দশ বছরে চীন হলুদ নদীর পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি ইয়াংসি নদীর দূষণ মোকাবিলা করেছে।
শিল্প-প্রতিষ্ঠান শিল্প ও ব্যবসায়িক নিবন্ধন তথ্যের মাধ্যমে আমরা গণনা করেছি যে, ২০১২ সালে ইয়াংসি নদীর তীরে তিন কিলোমিটারের মধ্যে ২০ হাজারেরও বেশি রাসায়নিক শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল। তখন ইয়াংসি নদী গুরুতর দূষিত ছিল।
আমরা ছংছিং, হুপেই ও চিয়াংসুর রাসায়নিক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দশ বছরে ইয়াংসি নদীর তীরে তিন কিলোমিটার এলাকায় রাসায়নিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা স্পষ্টভাবে হ্রাস পেয়েছে। সমস্ত ইয়াংসি নদীর তীরে রাসায়নিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে চার ভাগের এক ভাগ।
ইয়াংসি নদীর দূষণের উত্স হ্রাস হওয়ার পাশাপাশি শহুরে দূষিত পানি মোকাবিলার সামর্থ্যও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১২ সাল থেকে হিসাব করলে, ইয়াংসি নদী তীরে ১১টি প্রদেশ ও শহরে নতুন নির্মিত দূষিত পানি মোকাবিলাব্যবস্থার সংখ্যা দশ বছর আগের দ্বিগুণ হয়েছে।
ইয়াংসি নদীর নিম্ন প্রান্তে আনহু প্রদেশের উহুতে পয়ঃনিষ্কাশন পাইপলাইনগুলো দ্রুত শহরের ভূগর্ভে প্রসারিত হচ্ছে। শহরের সংগৃহীত গৃহস্থালী পয়ঃনিষ্কাশনের ৯৫.৭ শতাংশ মোকাবিলার পরে নিষ্কাশন করা হয়।
আনহুই প্রদেশের উহু তিন গিরিখাত জল কোম্পানির দূষিত বর্জ্য মোকাবিলা কারখানার সরঞ্জাম পরিচালক ছিয়ান ছুন চি:
এটি আমাদের বর্জ্য স্যাম্পলিং পয়েন্ট। আপনি দেখুন, আমাদের পানি কতো পরিষ্কার।
ইয়াংসি নদীতে প্রবাহিত পানি পরিষ্কার। ইয়াংসি নদীর পানির মান উন্নত হয়েছে। বাস্তুশাস্ত্র ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০১৫ সাল থেকে ইয়াংসি নদীতে রাসায়নিক অক্সিজেনের চাহিদা ও প্রধান দূষণকারী অ্যামোনিয়া নাইট্রোজেন নির্গমন দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে দূষণের পরিমাণ মাত্র দশ বছরের আগের দশ ভাগের এক ভাগে দাঁড়িয়েছে।
ইয়াংসি নদীর উচ্চ-মানের জলের পরিমাণ ৯৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। মূলত সমগ্র অববাহিকায় চমৎকার পানির গুণগত মান অর্জিত হয়েছে। ইয়াংসি নদী তীর স্থানীয় বাসিন্দাদের বিনোদনের সুন্দর এলাকায় পরিণত হয়েছে।
হুপেই প্রদেশের উহান শহরের বাসিন্দা:
আগে নদীটির তীরে এতো বেশি পাখি ছিল না। বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের পাখি দেখা যায়। আমাদের অনেক খুশি লাগে। বায়ুর মানও ভালো হয়েছে। এখানে আসা পর্যটকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
গবেষকরা গত এক দশক ধরে ইয়াংসি নদীর মাছ নিয়ে গবেষণা করছেন। বর্তমানে ইয়াংসি নদীতে মাছের প্রজাতির সংখ্যা বেড়েছে। পানি পরিষ্কার, তীরে সবুজ। মাছগুলো নদীতে অবাধে সাঁতার কাটে। চীনের মাতৃনদীগুলো পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে। এটি চীনা জাতির টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। (ছাই/আলিম)