আফরিন মিম, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম একে একে বাড়তে শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বেড়েছে দেশি-বিদেশি সব ফলের দামও।
বুধবার রাজধানীর তেজগাঁও বাজার, মগবাজার, কারওয়ান বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ফলের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। ফলভেদে দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত।
ফলের বাজার
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি আপেল বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়, গত বছর এ সময়ে আপেলের কেজি ছিল ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে।
চায়না আঙ্গুর বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে, এক বছর আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
দক্ষিণ আফ্রিকার কমলার দাম ২৮০ টাকায় উঠেছে, অথচ গতবছরও ২০০ থেকে ২২০ টাকায় এই কমলা পাওয়া যেত।
প্রতি কেজি আনার এখন ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যার দাম ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা; মালটা কিনতে গুনতে হচ্ছে ২৫০ টাকা, আগের বছর এই সময়ে দাম ছিল ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।
নাশপাতি কিনতে লাগছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, আগে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা এক কেজি নাশপাতি কেনা যেত।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে পরিবহন খরচ বেড়েছে, সেই অজুহাতে বেড়েছে দেশি ফলের দামও। দাম বাড়ার মধ্যে রয়েছে পেয়ারা, কলা, আনারস ও আমলকী।
কি বলছেন ক্রেতারা
মূল্যবৃদ্ধির কারণে এখন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত অনেকেই ফল খাওয়া ছেড়েছে, আর কিনলেও কমিয়েছে পরিমাণ।
তারা বলছে, বিদেশি ফলগুলো এখন আর নাগালের মধ্যে নেই। তাই সামর্থ্যের মধ্যে দেশি যেসব ফল রয়েছে, সেগুলোই খাচ্ছে। কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
বাংলামোটর এলাকার বাসিন্দা বাংলামোটর এলাকার বাসিন্দা সানজিদা আক্তার একটি বেসরকারি কোম্পানীতে কাজ করেন। তিনি জানান, গত কয়েক মাস ধরে তিনি ফল কিনছেন না।
“আগে সব সময় চেষ্টা করতাম অন্য খাবারের পাশপাশি ফলটা খেতে। দেশীয় ফল বাজারে থাকলে দেশীয় ফলই কেনা হত। কিন্তু এখন যেহারে ফলের দাম বাড়ছে কেনা সামর্থের বাইরে চলে গেছে। তাই কেনা বাদ দিয়ে দিয়েছি গেল কয়েক মাস ধরে”।
ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য নিয়মিত ফল কিনতেন ইস্কাটন এলাকার বাসিন্দা আকবর আলী। কিন্তু ফলের দাম ক্রমাগত বাড়ায় আগের মত কিনছেন না বলে জানান তিনি।
একই কথা বলে মৌচাক শাহীনবাগ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আফসার। তিনি জানান, “বাসার ছোটরা ফল খেতে পছন্দ করে। কিন্তু এখন এতো দাম বাড়ছে আগের মত কিনি না”।
কি বলছেন ব্যবসায়ী ও আমদানীকারকরা
ফল ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন বাজারে যেসব ফল আছে, সেগুলোর ৮০ শতাংশের বেশি বিদেশি। দাম বেশি থাকায় ক্রেতারা ফল কেনা কমিয়ে দিয়েছে, যার কারণে বিক্রিও অর্ধেক কমে গেছে ।
তেজগাঁও এলাকার ফলভাণ্ডারে ব্যবসায়ী আরিফ গাজী বলেন, ‘স্বাভাবিকের চেয়ে ফলের দাম অনেক বেড়ে গেছে। আগে যে ফলের কার্টন দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকায় কেনা যেত, সেটি এখন কিনতে হচ্ছে তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকায়।
মগবাজার খুচরা ফল ব্যবসায়ী লোকমান বললেন, “ বাজারের এখন বেশিরভাগ ফলই বিদেশি। এদিকে যেভাবে সব কিছুর দাম বাড়তেছে এখন ফল কেনাও কমায় দিছে অনেকে। এখন আর আগের মত বিক্রি নাই”।
এদিকে ফল আমদানিকারকরা বলছেন, বিদেশি ফলকে বিলাসপণ্য হিসেবে দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং কনটেইনারভাড়া বৃদ্ধি। এসব কারণে ফল আমদানি কমছে। তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ফলের পাইকারি ও খুচরা বাজারে।
ফলের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ফল আমদানিকারক রাকিব হোসেন জানান, জ্বালানি তেলের দাম ও ডলারের দাম বেশি থাকায় আমদানিতে খরচ বেড়েছে। সবমিলিয়ে যার প্রভাব পড়ছে ফলের খুচরা দামে।
সরকার ডলার বাঁচাতে ফুল, ফল, প্রসাধনী ও আসবাব পণ্য আমদানিতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) আরোপ করেছিল গত মে মাসে। বিদেশি ফলের বাজার তখন থেকেই চড়া বলছেন ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম।
সিরাজুল ইসলাম, সভাপতি, ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি
“আমাদের আমদানি ব্যয় আগের থেকে অনেক বেড়েছে। বিলাসী পন্য হিসেবে ফুলের পাশাপাশি ফলকেও ধরা হয়েছে । আসলে ফল তো বিলাসী পন্য না। এটি রোগীর পথ্য । এই পন্যে শুল্ক না থাকলে, জাহাজ ভাড়া বেশি না থাকলে আমাদের আমদানি ব্যয় কম লাগতো। তখন দেশের বাজারে কম দামে ফল সরবরাহ করা যেত। সাধারণ মানবুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেও আসতো ফল”।
সম্পাদনা – সাজিদ রাজু