প্রসঙ্গ: গত ১০ বছরে চীনের অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন
2022-10-05 16:22:08

অক্টোবর ৫: অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি’র) অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেস থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত, বিগত দশ বছরে চীন অবকাঠামো খাতে অনেক উন্নতি করেছে। এই দশ বছরে চীন কেবল যে পরিবহনসহ ঐতিহ্যবাহী অবকাঠামো নির্মাণকাজ জোরদার করেছে তা নয়, বরং নতুন আকারের অবকাঠামো নির্মাণকাজে নতুন অগ্রগতিও অর্জন করেছে।

 

পরিবহন অবকাঠামো নির্মাণকাজে চীন উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্বে বৃহত্তম দ্রুতগতির রেলপথের নেটওয়ার্ক, হাইওয়ে নেটওয়ার্ক, বিশ্ব পর্যায়ের বন্দর-গ্রুপ গড়ে তোলা, ইত্যাদি। বেইজিং তা সিং বিমানবন্দর, হংকং-চুহাই-ম্যকাও মহাসেতু এবং শাংহাই ‘ইয়াং শান’ বন্দরের স্বয়ংক্রিয় টার্মিনালসহ বিশাল সব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে।


‘বিগত দশ বছরে চীনের রেলপথ ও সড়কপথের যে মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে তা দিয়ে পৃথিবীর চারপাশে ২৭.৫টি বৃত্ত আঁকা যাবে। রেলপথে পুঁজির পরিমাণ ৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে। আর রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ৫২ হাজার কিলোমিটার ছাড়িয়েছে। ২০২১ সালের শেষ দিক পর্যন্ত, সড়ক নেটওয়ার্কের ঘনত্ব হয়েছে প্রতি এক শ কিলোমিটারে ৫৫ কিলোমিটার, যা ২০১২ সালের তুলনায় ২৪.৬ শতাংশ বেশি। নতুন করে নির্মিত বিমানবন্দরের সংখ্যা ৮২টি, বিমানবন্দরের মোট সংখ্যা ২৫০টি, গোটা চীনে বিমানবন্দরগুলো ১৪০ কোটিরও বেশি যাত্রী হ্যান্ডেল করতে সক্ষম। পরিবহন ক্ষেত্রে ‘চীনা কার্ড’ হচ্ছে দ্রুতগতির ট্রেন। ২০১২ সালে চীনে দ্রুতগতির ট্রেনের মোট দৈর্ঘ্য ৯৩৫৬ কিলোমিটার ছিল, যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার কিলোমিটারের বেশি। দ্রুতগতির ট্রেনে চীন ভ্রমণ ইতোমধ্যেই চীনাদের সুখী জীবনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

 

এবার জ্বালানি ও বিদ্যুত্ খাতের দিকে তাকানো যাক। বিগত দশ বছরে চীনে প্রচুর বিশ্ব-পর্যায়ের জ্বালানি অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প বাস্তাবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘পাই হ্য থান’ জলবিদ্যুত্ প্রকল্প, যেটি ১ কোটি ৬০ লাখ কিলোওয়াট বিদ্যুত উত্পাদনের সক্ষম। এটি বর্তমানে বিশ্বে বৃহত্তম এবং প্রযুক্তির দিক থেকে সবচেয়ে জটিল একটি জলবিদ্যুত্ প্রকল্প। জ্বালানি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাকে কেন্দ্র করে চীনে জ্বালানি নিরাপত্তার নতুন কৌশল কাজে লাগানোর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। সেই সঙ্গে চীনে দূষণমুক্ত-নিম্ন কার্বন এবং নিরাপদ ও কার্যকর জ্বালানি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।

‘২০২১ সালের শেষ দিকে, গোটা চীনে বিদ্যুতের উত্পাদনের সাধারণ ইনস্টল ক্ষমতা ২৩৮ কোটি কিলোওয়াট ছিল, যা ২০১২ সালের দ্বিগুণ। এক্ষেত্রে গড়ে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.৪ শতাংশ। গোটা চীনে তেল ও গ্যাসপাইপের মোট দৈর্ঘ্য ১ লাখ ৮০ হাজার কিলোমিটার, যা ২০১২ সালের তুলনায় দ্বিগুণ। জ্বালানি নিরাপত্তা সরবরাহ সুনিশ্চিত করার ভিত্তিতে চীনে জ্বালানি কাঠামোর দূষণমুক্ত ও নিম্ন কার্বন রূপান্তরকাজকে এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। বর্তমান চীনে পুনঃব্যবহার্য জ্বালানি সংক্রান্ত বিদ্যুত্ উত্পাদনের সাধারণ ইনস্টল ক্ষমতা ১০০ কোটি কিলোওয়াট। ২০২১ সালের শেষ দিকে, বায়ুশক্তি ফটোভোলটাইক গ্রিড-সংযুক্ত ইনস্টল ক্ষমতা ৬৩.৫ কোটি কিলোওয়াট, যা ২০১২ সালের ৯০ গুণ।

বিগত দশ বছরে, চীনে তথ্য টেলিযোগাযোগ শিল্পে বিশাল পরিবর্তন ঘটেছে। বিশ্বে বৃহত্তম সাইবার অবকাঠামোব্যবস্থা গড়ে উঠেছে চীনে।  

“২০১২ সালে গোটা চীনে মোবাইল বেস স্টেশনের সংখ্যা ২০ লাখের বেশি ছিল। ২০২১ সালের শেষে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৯ লাখ ৬০ হাজারে। বর্তমান চীনে প্রত্যেকটি প্রশাসনিক গ্রামে ‘গ্রাম ও গ্রামের মধ্যে ব্রডব্যান্ড চালানো’-র লক্ষ্য বাস্তবায়িত হয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে ডাউনলোডের গতি প্রায় ৪০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘ফোর জি’ বেস স্টেশনের সংখ্যা বিশ্বের মোট সংখ্যার অর্ধেকের বেশি এবং ‘ফাইভ-জি’ বেস স্টেশনের সংখ্যা ১৬ লাখ ১৫ হাজার।”

ভবিষ্যতে চীনে সার্বিকভাবে তথ্য কাঠামো নির্মাণকাজ জোরদার করা হবে। এটি অর্থনীতির উচ্চ গুণগত মানের উন্নয়ন এবং জীবিকার অবিরাম উন্নয়নে সহায়ক প্রমাণিত হবে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)