চীনের শক্তিশালী বাজারের কারণে থাইল্যান্ডের ডুরিয়ান শিল্পের সমৃদ্ধ উন্নয়ন
2022-10-05 18:24:20

অক্টোবর ৫: থাইল্যান্ড হলো বিশ্বের বৃহত্তম ডুরিয়ান উত্পাদন ও রপ্তানিকারক দেশ। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই চীনে রপ্তানি করা হয়। তবে দশ বছর আগে অধিকাংশ চীনা ভোক্তা ডুরিয়ান সম্বন্ধে কিছুই জানত না। চীনের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়নের সঙ্গে জনগণের আয় অনেক বেড়েছে। সেইসঙ্গে চীন ও থাইল্যান্ডের আর্থ-বাণিজ্যিক বিনিময় আরো গভীর হয়েছে। এর ফলে ফলের মধ্যে বিলাসী প্রজাতি- ডুরিয়ান বিপুল পরিমাণে চীনে রপ্তানি হয়েছে। থাইল্যান্ডের ফল চাষীরা এই দশ বছরে অনেক আয় করতে সক্ষম হয়েছেন।

 

থাইল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলের চাথাবুড়ি হল থাইল্যান্ডের প্রধান ডুরিয়ান উত্পাদন স্থান। ফলচাষী মানি’র ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ডুরিয়ান চাষের অভিজ্ঞতা আছে। এর আগে ডুরিয়ান চাষের মুনাফা খুব কম হতো, দাম অনেক কম ছিল। ১০ বছর আগে প্রত্যেক কেজি ডুরিয়ানের দাম কম ছিল। এখন প্রধান মৌসুমে ডুরিয়ানের পাইকারি দর ১২০ থাই বাত। অন্য সময় কেজিতে ২০০ থাই বাত পাওয়া যায়। ফলচাষীদের আয় অনেক বেড়েছে।

মানি বলেন, এখন ডুরিয়ান চাষের আয় দশ বছর আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। প্রতি বছর ডুরিয়ান বিক্রি করে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়।

 

থাইল্যান্ডে স্থানীয় কৃষকরা ডুরিয়ান চাষের প্রধান শক্তি। আর চীনে রপ্তানি করে থাইল্যান্ড-চীন যৌথ মালিকানা কোম্পানি। থাইল্যান্ডের একটি ডুরিয়ান উত্পাদন ও রপ্তানিকারক কোম্পানির প্রধান তুং মিং সাংবাদিককে জানান, দশ বছর আগে তাঁর কোম্পানি প্রধানত চীন থেকে থাইল্যান্ডে আপেল, নাশপাতি, আঙ্গুর এবং কমলা আমদানি করত। এখন থাইল্যান্ডের ফলগুলো খুব পছন্দ করে চীনা ভোক্তারা। তাই কোম্পানির প্রধান ব্যবসা রপ্তানিতে রূপান্তর হয়েছে। তুং মিং সাংবাদিককে জানিয়েছেন, থাইল্যান্ড ও চীনের ফল বাণিজ্য ইতোমধ্যে চীন-আসিয়ান অবাধ বাণিজ্য এলাকার কাঠামোয় ‘শূন্য-কর’ সুবিধা পেয়েছে। দশ বছরের মধ্যে চীনা বাজারের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে ডুরিয়ানের দাম অনেক গুণ বেড়েছে। ডুরিয়ান চাষ করা কৃষকের সংখ্যাও আরো বাড়ছে।

 

তুং মিং জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা জনগণের ভোগের মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা চীনের সুষ্ঠু অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতীক। থাইল্যান্ড ও চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, যা থাইল্যান্ডের কৃষকদের জন্য কল্যাণকর হয়েছে, তাদের জীবনও এ কারণে আরো ভালো হচ্ছে।

 

থাই ডুরিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ফানুসক জানান, থাইল্যান্ডে ডুরিয়ান চাষের ইতিহাস শতাধিক বছরের। চীনে ডুরিয়ান রপ্তানি শুরু হয় দশ বছর আগে। তখন ফল পরিবহনের পদ্ধতি সুবিধাজনক ছিল না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো চীনে রপ্তানি করা ফলের পরিমাণ আরো বেড়েছে। তাই থাইল্যান্ডের রপ্তানিকারক কোম্পানিগুলো সড়ক থেকে বর্তমানের চীন-লাওস রেলপথের দিকে নজর রাখছে।

ফানুসক বলেন, ফল রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে। আগে বেশি করে স্থল বন্দরের মাধ্যমে ফল পরিবহন করা হত। থাইল্যান্ডের ফল পরিবহন গাড়ি সবসময় ভিয়েতনামের ফল গাড়ির সঙ্গে একসাথে বন্দর অতিক্রম করত। সময় অনেক বেশি লাগতো, তাই এখন থাইল্যান্ড ফল রপ্তানিকারক কোম্পানি বেশি করে রেলপথ ব্যবহার করে, সেইসঙ্গে নৌপরিবহন এবং বিমান পরিবহনের রুটও চালু হয়েছে। আগামী বছর ডুরিয়ান উত্পাদনের পরিমাণ আরো বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তারা নতুন চালু হওয়া চীন-লাওস রেলপথের মাধ্যমে পরিবহনের সমস্যা সমাধান করবে।

ডুরিয়ান শিল্পের মাধ্যমে ব্যাপক মুনাফা সৃষ্টি করা যায়। এখন থাইল্যান্ডের ডুরিয়ান মালয়েশিয়া এবং ভিয়েতনামের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছে। তাই নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করা খুব জরুরি ব্যাপার। ফানুসক বলেন, দশ বছরে চীনের অর্থনীতির উন্নয়ন অনেক দ্রুত হয়েছে। যা চীনের বাজারে থাইল্যান্ডের ডুরিয়ানের চাহিদার বৃদ্ধি থেকে বোঝা যায়। তারা চীনা ভোক্তাদের এই পছন্দের জন্য ধন্যবাদ জানায়।

(শুয়েই/তৌহিদ/আকাশ)