চলতি বছর চীনের পয়লা অক্টোবর জাতীয় দিবসের ছুটিতে প্রবীণদের জন্য তিনটি বিশেষ উত্সব রয়েছে। পয়লা অক্টোবর হল প্রবীণদের আন্তর্জাতিক দিবস, চৌঠা অক্টোবর হল ঐতিহ্যবাহী ছুংইয়াং উত্সব, এবং এই দিনটি চীনের দশম "প্রবীণ দিবস"-ও বটে। ২০১৩ সালে প্রবীণদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের আইন বাস্তবায়নেরর পর থেকে, ছুংইয়াং উত্সবটি আনুষ্ঠানিকভাবে চীনে বয়স্কদের উত্সব হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। চীনের সরকার বয়স্কদের যত্নে গৃহীত ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে এবং বয়স্কদের জীবন আরও নিরাপদ ও সুন্দর করতে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
চীনের চান্দ্রপঞ্জিকার নবম মাসের নবম দিন ছুংইয়াং উত্সব। এদিন উঁচুতে আরোহণ করা, কর্নেল পরা, রিয়েলগার ওয়াংন পান করা, ইত্যাদি প্রথা প্রচলিত আছে। আধুনিককালে বয়স্কদের সাথে সম্পর্কিত ছুংইয়াং উত্সবের রীতিগুলো বিশেষভাবে জনপ্রিয়। "প্রবীণ পরিবারের মূল্যবান ধন" এই কথাটি আমি ভালো করে উপলব্ধি করতে পারি। বাবা-মা কেবল দৈনন্দিন জীবনে আমাদের ছোট বাচ্চাদের যত্ন নিতে সাহায্য করে না, বরং সংস্কৃতি ও সামাজিক অভিজ্ঞতা বিতরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চীনা জনগণ সবসময় বাবা-মা’র কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকে। আর বয়স্কদের সম্মান করা সবসময় চীনা জনগণের একটি ঐতিহ্যগত গুণ। আজ অবধি, আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে চীনের প্রবীণ নাগরিক দিবসের প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত, প্রবীণদের জীবনমানের বিষয়টি দীর্ঘকাল ধরে একটি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে আছে। বিশেষ করে, চীনা বাসিন্দাদের গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং বয়স্ক জনসংখ্যার বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রবীণদের জীবনমানের প্রতি মনোযোগ বেড়েছে।
চীনের সপ্তম জাতীয় আদমশুমারির ফল অনুসারে, ৬০ বছর বা তারচেয়ে বেশি বয়সী চীনাদের সংখ্যা ২৬ কোটি ৪০ লাখে পৌঁছেছে এবং তা "চৌদ্দতম পাঁচসালা পরিকল্পনা"-র সময়কালে ৩০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। “চীনের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উন্নয়ন, ২০২১’ পরিসংখ্যান বুলেটিন অনুসারে, চীনা বাসিন্দাদের গড় আয়ু বেড়ে ৭৮.২ বছর হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, জাতীয় থেকে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত, চীন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বিভিন্ন দিক থেকে প্রবীণদের অধিকার ও স্বার্থ আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, “গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রবীণদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা আইন”-এ বলা হয়েছে যে, পরিবারের সদস্যদের বয়স্কদের মানসিক চাহিদার প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত এবং বয়স্কদের অবহেলা করা উচিত নয়। বয়স্কদের জন্য কল্যাণ ও সুবিধা ব্যবস্থা আরও উন্নত করা হয়েছে। কর্পোরেট অবসরপ্রাপ্তদের জন্য মৌলিক পেনশন ২০০৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত টানা ১৪ বছর বাড়ানো হয়েছে এবং বয়স্কদের জন্য কল্যাণ-ভাতা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বয়স্কদের নার্সিংয়ের সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে, এবং বৃদ্ধদের যত্ন নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে। হাস্পাতালে চিকিত্সা নেওয়া এখন আগের চেয়ে সুবিধাজনক। বয়স্কদের সাধারণ রোগের ব্যবস্থাপনা এবং চিকিত্সা বীমার আওতা আরো সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। পারিবারিক ডাক্তার ব্যবস্থা চালু করার পর বয়স্করা আরো সুবিধাজনক চিকিত্সা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা পাচ্ছেন।
বস্তুগত দিকগুলো ছাড়াও, বয়স্কদের মানসিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের দিকেও আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত। চীনের বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয়ভাবে প্রবীণদের জন্য অব্যাহত শিক্ষাগ্রহণের ব্যবস্থা উন্নয়ন করা হচ্ছে এবং পর্যায়ক্রমে সিনিয়র কলেজ, কমিউনিটি কলেজ এবং অনলাইন ক্লাসরুমের মাধ্যমে প্রবীণদের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক জীবনকে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। মধ্যবয়সী এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের আগ্রহ ও শখকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর লক্ষ্য মধ্যবয়সী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের সামাজিক সম্পর্ক প্রসারের সুযোগ বাড়ানো, তাদের দক্ষতার বিকাশ ঘটানো, তাদের জীবন আনন্দময় করে তোলা, এবং সার্বিকভাবে তাদের মধ্যে একটি স্বাস্থ্যকর ও ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করা।
আমরা সবাই একদিন বৃদ্ধ হব। আজ বয়স্কদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া মানে ভবিষ্যতে নিজেদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া। একটি প্রবাদে বলা হয়েছে: "বাবা-মা থাকলে জীবনের সূত্র থাকে…”। আমরা আশা করি, আমাদের বাবা-মা আরও খানিকটা ধীরে বৃদ্ধ হবেন, সুস্থ থাকবেন এবং সর্বদা আমাদের সাথে থাকবেন। তাদের সঙ্গ জীবনের সবচেয়ে বড় সুখের বিষয়। (স্বর্ণা/আলিম/ছাই)