অক্টোবর ৩: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের উন্মুক্তকরণ আরো জোরদার হচ্ছে। চীনে কর্মরত, অধ্যয়নরত এবং জীবনযাপন করা বিদেশিরা উন্মুক্ত চীনের প্রতি আস্থা এবং দায়িত্বশীল মনোভাব উপলব্ধি করেছেন। তারা একইসঙ্গে চীনের উন্মুক্তকরণকে বিশ্বের জন্য সুযোগ বলে মনে করছেন।
স্পেনের তরুণ হুং ওয়েই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাসের পর চীনের দক্ষিণাঞ্চলের ফু চৌ শহরে সুযোগ খুঁজতে এসেছেন। এখন তিনি ফুচিয়ান প্রদেশের অবাধ বাণিজ্য এলাকার ফু চৌ অঞ্চলের জন্য একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কোম্পানির ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, কোম্পানির বেশ কিছু আমদানি-রপ্তানি প্রকল্প আছে। জলপাই তেল আমদানি করা এবং মেক্সিকোর হোটেলের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য রপ্তানিও করা হয়।
চলতি বছর হল ফুচিয়ান প্রদেশের অবাধ বাণিজ্য এলাকা প্রতিষ্ঠার সপ্তম বছর। বহু বছর ধরে অবাধ বাণিজ্য এলাকার সুবিধাজনক সেবা এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের সুবিধাজনক নীতির মাধ্যমে হুং ওয়েই চীনের সুষ্ঠু বাণিজ্যিক পরিবেশ উপভোগ করছেন। এর ফলে আরো বেশি বিদেশি ব্যক্তি চীনে আসতে আগ্রহী হয়েছেন।
হুং ওয়েই বলেন, এখানের অবাধ বাণিজ্য এলাকায় খুব দ্রুত কাজ হয়। যেমন, ভিসা ও বিভিন্ন কাজ অল্প কিছু দিনের মধ্যে সম্পন্ন করা যায়। আরেকটি উন্নতির চিহ্ন হল, আগে প্রতিবছর একবার ভিসা আবেদন করতে হতো! এখন আমার ভিসার মেয়াদ ৫ বছর। অনেক সুবিধাজনক। আর অনলাইনেই অনেক কাজ করা যায়।
এখন চীনে ২১টি অবাধ বাণিজ্য এলাকা আছে। এ ছাড়া বিদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন পুঁজি বিনিয়োগের আইনও চালু হয়েছে। চীন আরো বেশি খাত উন্মুক্ত হচ্ছে, পুঁজি বিনিয়োগের পরিবেশ আরো সুসংহত হচ্ছে।
দশ বছরে চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীলভাবে উচ্চ মানের উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ভোগ বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। এতে আরো বেশি বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান চীনের ভোগের কল্যাণে উপকৃত হচ্ছে। ২০২১ সালে চীনে বিনিয়োগ করা বৈদেশিক পুঁজির পরিমাণ ১.১৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। যা ২০১২ সালের চেয়ে ৬২.৯ শতাংশ বেড়েছে এবং বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা, চীন আন্তর্জাতিক ভোগ্যপণ্য মেলা, চীনের আমদানি-রপ্তানি মেলা, চীন আন্তর্জাতিক পরিষেবা মেলা-সহ চীনে আয়োজিত বিভিন্ন ধরনের মেলা একদিকে বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগকারীদের চীনের বাজারে ঢোকার সুযোগ করে দিয়েছে, অন্যদিকে তাদের পণ্য বিশ্ব বাজারে প্রবেশ করতে পারছে। শ্রীলংকা ব্যবসায়ী জিনলাঙ্গা তাদের মধ্যে একজন। তিনি বলেন, ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি খুব সম্ভবত প্রতি বছর ৩০টিরও বেশি মেলায় অংশ নিয়েছেন। চীনের প্রত্যেক শহরেই তিনি গিয়েছেন। এতে আরো বেশি মানুষ তার পণ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছে। তখন থেকে তিনি অনেক মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছেন। এখনও তাদের সহযোগিতা চলছে।
এসব বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগকারীরা চীনের বাজারে ব্যবসা করেন, চীনের উন্নয়নের সুযোগ উপভোগ করেন। তারা হলেন চীনের উন্মুক্তকরণের সাক্ষী।
ছিংতাওয়ে বাস করা রুশ ব্যবসায়ী স্ভেতলানা বলেন, আগে রুশ মানুষের প্রিয় খাবার চীনে খুব কম পাওয়া যেত। এখন চীনের উন্মুক্তকরণ অনেক গভীর হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্য এখানে পাওয়া যায়, বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র দেখা যায়। এখানে অনেকেই রুশ ভাষা বা ইংরেজি বলতে পারে।
চীনের উন্মুক্তকরণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা খাতে নতুন পরিবর্তনে দেখা যায়। ১৯৯৬ সালে বেইজিং ইউনিভার্সিটি অফ কেমিক্যাল টেকনোলজির আমন্ত্রণে ব্রিটিশ ব্যক্তি ডেভিড চীনে আসেন। গত বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি চীনের উন্মুক্তকরণ, সহনশীল আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সহযোগিতার নতুন কাঠামো দেখেছেন।
তিনি বলেন, আগে অনেক বিদেশি মনে করতেন, তারা চীনে আসেন চীনকে সাহায্য করার জন্য। এখন অবস্থা বদলে গেছে। তাই প্রতিবার অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজসহ বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর শিক্ষক বা শিক্ষার্থী চীনে এসে বলেন, তারাও এখন অনেক কিছু শিখতে পারেন।
(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)