বিশ্ব প্রবীণ দিবসের ভাবনা
2022-10-01 18:59:29

পহেলা অক্টোবর বিশ্ব প্রবীণ দিবস। ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ ১ অক্টোবরকে  বিশ্ব প্রবীণ দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো-পরিবর্তিত বিশ্বে প্রবীণ ব্যক্তির সহনশীলতা। দেশে দেশে বাড়ছে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর হার। আর আজকের প্রবীণদের হাত ধরেই বর্তমান সময় আমরা পেয়েছি। তাই প্রবীণ জনগোষ্ঠীর কাছে বর্তমান সমাজ সবসময় ঋণী। বর্তমানের তরুণ যুবকরাও ভবিষ্যতে প্রবীণ হবে। তাই বর্তমানে প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে যথাযথ সম্মান দেখাতে পারলে ভবিষ্যতের প্রবীণরাও উপযুক্ত সম্মান ও মর্যাদা আশা করতে পারবে।



মানুষের জীবনে বার্ধক্য একটি অতি স্বাভাবিক ও অবধারিত বাস্তবতা। দেখা যায়- বাংলাদেশে প্রবীণরা নানাবিধ বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকেন। বয়স বৈষম্যবাদ, বয়সের ওপর ভিত্তি করে নেতিবাচক ধ্যান ধারণায় আটকে থাকার কারণে এমন বৈষম্য দেখা দেয়। যদিও ঐতিহ্যগতভাবে আমাদের দেশের পরিবার ও সমাজ প্রবীণদের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাপূর্ণ আচরণ করে। তারপরও কেউ কেউ দারিদ্র্য, আত্মকেন্দ্রিকতা বা উগ্র-ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী দৃষ্টিকোণ নিয়ে উচ্চাভিলাষী হওয়ার কারণে প্রবীণদের প্রতি যথাযথ আচরণ করে না এবং দায়-দায়িত্ব পালন করতে পারে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমাজে প্রবীণদের প্রতি কমবেশি বৈষম্যমূলক চিন্তা-ভাবনা, আচার-আচরণ দেখা যায়।


সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বর্তমান বিশ্বে প্রতি ৬ জনের মধ্যে একজন প্রবীণ নির্যাতনের শিকার। এই সংখ্যা ১৪ কোটিরও বেশি। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবীণ মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। ২০১১ সালের আদমশুমারির হিসাবে, দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭। জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৫৩ লাখ ২৬ হাজার। তাঁরা মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০১১ সালের জনশুমারিতে এ হার ছিল ৭.৪৭।


জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ বলছে, আগামী দুই থেকে আড়াই দশকের মধ্যে বাংলাদেশ প্রবীণপ্রধান দেশে পরিণত হবে। বাংলাদেশ প্রবীণপ্রবণ সমাজে পদার্পণ করবে ২০২৯ সালে। আর সেখান থেকে ধীরে ধীরে প্রবীণপ্রধান সমাজ পরিণত হবে ২০৪৭ সালে। দ্রুততম সময়ে এই পরিবর্তন ঘটতে চলেছে, বিশ্বে এমন সব দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।


বর্তমানে গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানে ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সেও অবসর প্রদান করতে হয়। নতুবা সক্ষম প্রবীণদের প্রতি সমাজের এটা হবে বৈষম্যমূলক আচরণ। এ ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি প্রশংসার যোগ্য। বাংলাদেশে উন্নত দেশগুলোর মতো রাষ্ট্রীয় সামাজিক সুরক্ষা, যাতায়াত ও চিকিৎসা সুবিধা, বৃদ্ধনিবাস ইত্যাদি এখনও গড়ে ওঠেনি। এক্ষেত্রে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে কিছু কাজ হয়েছে। তবে তার পরিমাণ খুবই নগণ্য। এই অবস্থায় রাষ্ট্র তথা সরকারকে প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে নিয়ে আরও ভাবতে হবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে প্রবীণদের কল্যাণে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারে। উন্নত মানের বৃদ্ধ নিবাসের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। দেশে বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, দুস্থ ভাতাসহ সাশ্রয়ী মূল্যে চাল ও আনুষঙ্গিক কিছু কর্মসূচী চালু করা হয়েছে। যা প্রবীণদের জন্য কল্যাণকর হয়েছে। 


সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা মনে করেন, সুস্থ সবল প্রবীণের মেধা ও অভিজ্ঞতাকে রাষ্ট্র এবং সমাজের বিভিন্ন উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজে লাগানো যেতে পারে। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস ও কর্মক্ষমতার সঙ্গে যদি প্রবীণদের মেধা-মনন-অভিজ্ঞতা সংযোগ করা যায়, তা দেশের উন্নয়নের গতি আরও বাড়বে।