জনগণের সুখী জীবনের স্বপ্ন কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়
2022-10-01 19:04:25

মানুষের বিভিন্ন স্বপ্ন থাকে। দেশ উন্নয়নের স্বপ্নও থাকে। সচ্ছল জীবন, দেশ শক্তিশালী হওয়া, এসব স্বপ্ন আসলেই জনসাধারণের ‘সুখী জীবনের স্বপ্ন’। চীনাদের প্রকৃত জীবন কেমন? সুখী জীবন সম্বন্ধে চীনাদের স্বপ্ন কি পূরণ হয়েছে? আজ এই বিষয়ে কথা বলবো।

যখন সাংবাদিক বৃদ্ধা তেং সিয়াং ইংকে দেখেন, তখন ৯২ বছর বয়সী বৃদ্ধা তেং প্রতিবেশীর দরজার সামনে বসে তুলা তোলায় সাহায্য করছেন। তিনি বলেন, তাঁকে দেখতে বয়স্ক এবং দুই বছর আগে গুরুতর রোগাক্রান্ত মনে হলেও এখন তিনি কাপড় ধোয়া, রান্না করা, সব কিছুই নিজেই করতে পারেন। শারীরিক অবস্থা অনেক ভালো।

তাঁর কাছে সুস্বাস্থ্যের স্বপ্নের অনুভূতি অনেক গভীর। ২০২০ সালে যখন চীনে করোনাভাইরাসের মহামারি দেখা দেয়, তখন উ হান শহরে তিনি ভাইরাসে আক্রান্ত হন। পরে তাঁকে উ হান বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন গণ-হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের প্রধান ওয়ান হুং হুই জানান, তখন দাদি তেং-এর অবস্থা অনেক গুরুতর ছিল। অজ্ঞান হয়ে যেতেন। তাঁর চিকিত্সা করার জন্য হাসপাতালের শ্বাস, হৃদপিণ্ড ও স্নায়ু বিভাগের বিশ জনেরও বেশি ডাক্তার অংশ নিয়েছেন।

দাদি তেং হলেন সর্বাত্মক চেষ্টায় চিকিত্সা করা অনেক রোগীদের অন্যতম একজন। ২০২০ সালের শুরুতে, করোনা ভাইরাসের মহামারি মোকাবিলায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-কেন্দ্রিক সিপিসি সরকার দৃঢ়ভাবে জনগণের প্রাণের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যকে শীর্ষস্থানে রাখার নীতিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে।

জনগণের সব কিছুই সি চিন পিং-এর মনের বড় ব্যাপার।

এখন প্রতিদিন সকালে কান সু প্রদেশের তুং সিয়াং জেলার বু লেং গৌ গ্রামের বাসিন্দা মা মাই জি-এর প্রিয় কাজ হলো কেটলি ভরে বাসার ফুলে পানি ঢালা, তারপর আস্তে আস্তে চা পান করা। অতীতে পানির জন্য মাথা ব্যথার জীবন আর ছিল না।

বু লেং কৌ-এর অর্থ হল ‘খাঁড়া উঁচু পাহাড়ের পাশে’। এখানে পাহাড় বেশি, দশ বছরের মধ্যে নয় বছরই খরা থাকে। কৃষক মা এখানে সারা জীবন থাকেন, এত বছর ধরে তিনি তিক্ত পানি পান করছেন।

২০১৩ সালের বসন্ত উত্সবের সময় সি চিন পিং কান সু প্রদেশ পরিদর্শন করেছেন। তিনি বিশেষ করে কৃষকের বাসার পানির ট্যাংক থেকে পানি পান করেন। তাঁর মনের বড় ব্যাপার হল সব গ্রামীণ মানুষের নিরাপদ পানীয় জল খাওয়ানো।

এখন পাহাড়ি এলাকার সবাই পাইপ দিয়ে সরবরাহ করা পানি পান করতে পারছে। কৃষক মা পানি সম্পর্কিত একটি চাকরিও পেয়েছেন। তিনি পানি পরিচালনা দলের একজন কর্মী হয়েছেন। পানি থাকার কারণে তুং সিয়াং জেলা আগে দরিদ্র জেলা থেকে এখন শিল্পায়নের গ্রামে উন্নত হয়েছে।

দশ বছরে চীনের সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন অনেক।

মধ্য চীনের হ্য নান প্রদেশের চেং চৌ শহরে, লি কাই সিউ নামে বাসিন্দা নিজের কমিউনিটির পরিবেশের উন্নয়ন সম্বন্ধে খুব সন্তুষ্ট। এখন লি কাই সিউ এবং তাঁর কোরাস দলের সবাই রিহার্সলের জায়গা নিয়ে মাথা ব্যথা করেন না। সবাই কমিউনিটির সুন্দর পরিবেশে গান গাইতে পারেন, নাচেন। এখন এটি সবার প্রিয় জায়গা। তবে, দুই বছর আগে অবস্থা একদম ভিন্ন ছিল। তখন কমিউনিটিতে ছিল বড় একটি আবর্জনা স্টেশন। অনেক দুর্গন্ধ।

চীনের অষ্টাদশ কংগ্রেসের পর চীনে জনগণের সুন্দর জীবন নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

২০২০ সালের মে মাসে লি কাই সিউ-এর বসবাসের কমিউনিটির পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন আরো সুন্দর ও সুবিধাজনক হয়েছে।

জনগণের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য গত দশ বছরে চীনে আরো সুসংহত একটি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই ব্যবস্থায় ১৩৬ কোটি লোকের মৌলিক চিকিত্সা বীমা আছে। ১০৪ কোটি মানুষের মৌলিক অবসর বীমা আছে। ৪.৭ কোটি মানুষকে নিম্ন আয়ের ভর্তুকির আওতায় আনা হয়েছে।

চিকিত্সা, অবসর, কর্মচ্যুতসহ বিভিন্ন সমস্যা হলে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে চীনাদের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। তা হল চীনের সামাজিক নিশ্চয়তা ব্যবস্থা। যা বর্তমান বিশ্বের বৃহত্তম সামাজিক নিশ্চয়তা ব্যবস্থা।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, জনগণ-কেন্দ্রিক উন্নয়নের চিন্তাধারা বিমূর্ত চিন্তাধারা নয়, এটা শুধু মুখের কথা নয়। এটা অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার অংশ। দশ বছরে, জনগণ-কেন্দ্রিক চিন্তাধারা এক একটি নীতি, এক একটি প্রকল্প, এক একটি পরিবর্তন থেকে প্রতিফলিত হয়েছে। যা জনগণের সুখী জীবন গঠন করেছে। ভবিষ্যতে জনগণের জন্য আরো সুন্দর জীবন সৃষ্টি করা চীনের সিপিসি সরকার ও দেশের লক্ষ্য।