বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাত পর্যটন শিল্প
2022-09-30 20:21:49

আফরিন মিম, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: “পর্যটনে নতুন ভাবনা” প্রতিপাদ্যে বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হলো বিশ্ব পর্‍্যটন দিবস। পর্যটনের ভূমিকা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উপযোগিতাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও পালন করা হয় এই দিনটি।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অতুলনীয় এই বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাময় খাত পর্‍্যটন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের পর্যটন নীতিমালার আলোকে পর্যটনকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় এই খাতের সম্ভাবনা অনেক উজ্জ্বল হয়েছে।

পর্যটকদের অভিমত, যথাযথ বিকাশের মাধ্যমে শুধু পর্যটনশিল্প থেকেই বছরে হাজার কোটি টাকা আয় করতে পারে বাংলাদেশ। অফুরন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত বাংলাদেশে পর্যটনশিল্প খুবই সম্ভাবনাময়। পৃথিবীর যে-কোনো পর্যটককে আকৃষ্ট করার মতো সকল উপাদান বাংলাদেশে আছে। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে মোট ১৬ লাখ ৪০ হাজার পর্যটক আসে। এর মধ্যে ৮০ দশমিক ২৮ শতাংশ অনাবাসী বাংলাদেশি। বাকি ২ লাখ ৯১ হাজার জন বিদেশি পর্যটক।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা অভাবনীয় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রায় ১ দশমিক ৫ কোটির উপরে অভ্যন্তরীণ পর্যটক সারা দেশে ভ্রমণ করে এবং ৪০ লাখের বেশি মানুষ এই শিল্পে কর্মরত রয়েছে।

জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তথ্যের উপর তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিডিপিতে দেশের পর্যটন খাতের অবদান ৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ । স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৭৬ হাজার ৬৯০ কোটি টাকার বেশি।


পর্যটন নিয়ে বিবিএস কর্তৃক প্রথমবারের মতো প্রকাশিত প্রতিবেদন ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট-২০২০ অনুসারে মোট কর্মসংস্থানের ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশের সুযোগ তৈরি করছে এই খাত।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনটিতে মূলত দেশের পর্যটন খাতের আর্থিক পরিমাপ, পর্যটন সম্পর্কিত পণ্য ও পরিষেবার সরবরাহ এবং এর ব্যবহার সংক্রান্ত উপাত্ত একীভূত হয়েছে।

পর্‍্যটন খাতে বিনিয়োগের বর্তম্যান পরিস্থিতি

দিন দিন বাংলাদেশে পর্‍্যটনে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে দারুণ সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে খাতটি। ২০২৫ সালের মধ্যে পর্‍্যটন শিল্পের সর্বোচ্চ বিকাশে স্বল্প,মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।


পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কেমন?

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্‍্যটকের সংখ্যা ১০০ কোটিরও বেশি। ধারণা করা হচ্ছে ২০২৫ সাল নাগাদ এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৬০ কোটি টাকা। পর্‍্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বিপুল সংখ্যক পর্‍্যটকের প্রায় ৭৩ শতাংশ ভ্রমণ করবেন এশিয়ার দেশগুলোয়।   বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বহাল রাখতে পর্যটন খাতকে গুরুত্ব দেওয়া একান্ত প্রয়োজন মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ২০২৫ সাল নাগাদ পর্যটকের সংখ্যা ১৬০ কোটি। এর আগে কোভিড মহামারির সময়ে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যায়। তবে ধীরে ধীরে এই সংখ্যা আবারও বাড়ছে।

বাংলাদেশের পর্যটন খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতে আছেন প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। এর ভেতর সরাসরি জড়িত আছেন ১৫ লাখ আর প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আছে প্রায় ২৩ লাখ। এক হিসাবে দেখা গেছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করছে। এই সংখ্যাটি সন্তোষজনক হলেও এর মাত্র ২ শতাংশ বিদেশি।

পর্‍্যটন খাতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

পর্যটন মাস্টারপ্ল্যান তথা মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইপিই গ্লোবাল লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। ট্যুরিজম মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের পর্যটন নতুন যুগে প্রবেশ করবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দেশের পর্যটন শিল্পের চিত্র বদলে যাবে। বাড়বে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবনে বিশ্ব পর্যটন দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে  বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এমপি জানান, দেশের পর্যটন শিল্পকে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে। এ বছরই ডিসেম্বরে এই মহাপরিকল্পনার কাজ প্রণয়ন শেষ হবে।

ছবি- মো. মাহবুব আলী এমপি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রতিমন্ত্রী

“কোভিড-১৯ মহামারীর অভিজ্ঞতা বিশ্বের পর্যটন শিল্পকে নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ করে দিয়েছে। টেকসই ও ধারাবাহিক পর্যটন উন্নয়নে সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন ও পণ্যের বহুমাত্রিকরণের কোন বিকল্প নেই। দেশের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কার্যকরী কৌশল প্রণয়ন করা হচ্ছে। জেলায় পর্যটনের উন্নয়ন কাজ সমন্বয় করার জন্য একজন এডিসিকে পর্যটনের দায়িত্ব দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে।“ 

সম্পাদনা- সাজিদ রাজু