আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ৯৩
2022-09-29 18:45:13

কী থাকছে এবারের পর্বে

১. ‘ওয়েল্ডিং মুলান’  ই রান

২. বীমা শিল্পে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের নারী

৩. গান: শিল্পী না ইং

৪. ভেষজ চাষে কর্মসংস্থান হচ্ছে নারীর

৫. কিংবদন্তি বিজ্ঞানী উ চিয়েন শিউং

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি ভালো আছেন। আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আমরা সবসময় কথা বলি নারীর সাফল্য, সংকট, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে।

ওয়েল্ডিং মুলান’  ই রান

চীনের একজন গুণী নারী ওয়েল্ডার ই রান।  অসামান্য দক্ষ এবং সাহসী একজন কর্মকর্তা তিনি। কর্মজীবনের এই পর্যায়ে এরইমধ্যে পারফরম্যান্সের মাধ্যমে রেলওয়ে বিভাগ এবং ওয়েল্ডিং শিল্পে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। নারীরাও পুরুষের মতো চমৎকার কাজ করতে সক্ষম বলে মনে করেন ই রান। বিস্তারিত থাকছে রিপোর্টে। 

 

                                           

জ্যেষ্ঠ নারী ওয়েল্ডার ই রান। ওয়েল্ডিং এর কথা শুনলেই মনে হয় এটা ছেলেদের পেশা।  কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই পেশায় নারীদের অংশ গ্রহণ রয়েছে। মজার ব্যাপার যেটা, চীনে এই পেশায়  নারীরা ভালো করছেন। আর এই পেশায় কাজ করা একজন সফল নারী ই রান। 

মধ্য চীনের হুনান প্রদেশের চুচোও শহরে অবস্থিত চায়না রেলওয়ে রোলিং স্টক কর্পোরেশন (CRRC) চুচোও ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ কোম্পানি। ই রান এই কোম্পানির একজন সফল নারী ওয়েল্ডার কর্মকর্তা।  তিনি ১৮ বছর বয়স থেকে রেলওয়ে মালবাহী গাড়ি উৎপাদনে নিযুক্ত রয়েছেন।

বিশ্ব মানের রেলওয়ে মালবাহী গাড়ি তৈরিতে চীন অনেক এগিয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই শিল্পে চীনের অবস্থান অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ উপরে রয়েছে। কারণ চীনারা একদিকে যেমন তাদের দৃঢ মেধাশক্তিকে কাজে লাগায় অন্যদিকে উচ্চ গতিতে কাজ করতেও তারা সক্ষম।   

 চীনের রেলওয়ে বিভাগে গত ২১ বছর ধরে কাজ করছেন এই নারী। দেশের রেল পণ্য পরিবহনের দ্রুত বিকাশের সুবিধার্থে ৮০ হাজারেরও বেশি রেলওয়ে পণ্যবাহী গাড়ি তৈরি এবং চালু করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা রয়েছে।

একমাত্র নারী অংশগ্রহণকারী হিসেবে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ওয়েল্ডিং প্রতিযোগিতার মঞ্চেও দাঁড়িয়েছিলেন  ই রান। স্থানীয় মিডিয়া তাকে চীনের বৈদ্যুতিক ‘ওয়েল্ডিং মুলান" বলে অভিহিত করে।

 

 

রেলওয়ের মালবাহী গাড়ি তৈরির জন্য অনেক ঢালাই প্রয়োজন হয়।  উচ্চ তাপমাত্রা এবং বৈদ্যুতিক আর্ক লাইট ঢালাই প্রক্রিয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আর এই কাজটি ওয়েল্ডারদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জের। খুব সতর্ক হয়ে এধরনের কাজ করার কথা জানান ই রান। তিনি বলেন,

‘গাড়ির পুরো বডির ওয়েল্ডিংয়ে সর্বোচ্চ গুণগত মান মেনে চলা প্রয়োজন। এর প্রতিটি ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়া উচিত এবং ভিতরে বাইরে থেকে কোনো ত্রুটি থাকা উচিত নয়। আর ওয়েল্ডিং প্রযুক্তি এবং ওয়েল্ডারদের মৌলিক দক্ষতা উভয়ই অত্যন্ত জরুরি।’

 এই ধরনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় ই অভিজ্ঞ একজন  শিক্ষক এবং তার পরামর্শদাতা হিসেবে ইয়াং ওয়েইতং নামে একজনকে নিয়োগ দেন। এক পর্যায়ে তং বিভিন্ন পরামিতিসহ দুটি ঢালাই পদ্ধতি অবলম্বন করার সিদ্ধান্ত নেন, যার মধ্যে বৈদ্যুতিক প্রবাহ , ভোল্টেজ, ঢালাইয়ের গতি এবং সুইং পদ্ধতি একে অপরের থেকে আলাদা। এর  পার্থক্য খুবই সূক্ষ্ম, যা ওয়েল্ডারের দক্ষতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করে বলে জানান রান।

ই রান মনে করেন,  নারীরাও পুরুষের মতো চমৎকার কাজ করতে সক্ষম। যেকোনো ক্ষেত্রে নিজেকে যদি কেউ উৎসর্গ করে কাজ করে তবে বিজয়ী হওয়া সহজ এবং সম্ভব। 

বীমা শিল্পে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের নারী

বাংলাদেশের বীমা শিল্পে এখন অনেক নারী এগিয়ে আসছেন। নারীদের জন্য বীমা পেশায় এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আজ আমরা কথা বলবো ন্যাশনাল লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা আফরিন সুলতানা জলির সঙ্গে। তিনি এই কোম্পানির পলিসি সার্ভিস বিভাগে ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।

 

সাক্ষাৎকার:

আফরিন সুলতানা বীমা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন প্রায় বিশ বছর আগে। তখন নারীর সংখ্যা কিছুটা কম থাকলেও বর্তমানে এই পেশায় অনেক নারী কাজ করছেন।  ন্যাশনাল লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানিতেই রয়েছেন ২০ হাজার নারী বীমা কর্মী। বাংলাদেশের অন্যান্য বীমা প্রতিষ্ঠানেও প্রচুর সংখ্যক নারী কাজ করছেন।

আফরিন সুলতানা মনে করেন নারীর জন্য খুব স্বাধীন ও সম্মানজনক পেশা হলো বীমা পেশা। এই পেশায় বাঁধাধরা কর্মঘন্টা না থাকায় অন্য কাজের পাশাপাশি এটা করা সম্ভব।  শিক্ষর্থীরা অনেকে এই পেশায় কাজ করে সাফল্য পাচ্ছেন।  নতুন যারা এই পেশায় আসবেন তাদের জন্য আফরিনের পরামর্শ হলো আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাবার।

 

গান: শিল্পী না ইং

চীনের একজন বিখ্যাত শিল্পী না ইং। ১৯৬৭ সালে লিয়াওনিং প্রদেশে জন্ম নেয়া এই শিল্পী ১৯৭৯ সাল থেকেই একজন কিশোরী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জনপ্রিয়তা পান।

১৯৯৪ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘ড্রিমিং উইথ ইউ’ বা ‘তোমার সঙ্গে স্বপ্ন’ মুক্তি পায়।  ১৯৯৮ সালে তিনি সিসিটিভির স্প্রিং ফেস্টিভ্যাল গালা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। না ইং দেশে বিদেশে অনেক সম্মাননা পেয়েছেন। চলুন শোনা যাক এই শিল্পীর কণ্ঠে একটি গান।

ভেষজ চাষে কর্মসংস্থান হচ্ছে নারীর

 

 

চীনে অনেক ভেষজ উদ্ভিদ রয়েছে। এসব ভেষজ উদ্ভিদের চাষ করেও অনেকে নিজের আয় বৃদ্ধি করছেন। এমন একটি ভেষজ হলো হানি সাকেল।


এই হানি সাকেলের খামারে কাজ করে অনেক গ্রামীণ গৃহবধূ ও প্রবীণ নারী নিজেদের আয় বৃদ্ধির পথ করে নিয়েছেন। বিস্তারিত প্রতিবেদনে।

মধ্য চীনের হ্যনান প্রদেশ। এখানে প্রচুর পরিমাণে হানি সাকেল ফুল জন্মে। সিনসিয়াং সিটির ফংছিউ কাউন্টির চিয়াছুয়াং গ্রামের হানি সাকেল বিখ্যাত। এর চীনা নাম চিনইনহুয়া। যার মানে সোনালি ও রুপালি ফুল।

 

হানি সাকেল ট্র্যাডিশনাল চায়নিজ মেডিসিন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই ফুলের চা ও অন্যান্য পানীয়র চাহিদাও রয়েছে। এর ডাল নতুন চারা তৈরিতে ব্যবহার হয়। হানি সাকেলের পাতা থেকে গবাদি পশুর ঔষধ তৈরি হয়। হানি সাকেলের চাষের ফলে স্থানীয় অধিবাসীরা কাজ পেয়েছে। বিশেষ করে প্রবীণ নারী এবং গৃহবধূরা এই খামারে বেশি কাজ করছেন। গৃহবধূরা তাদের দৈনন্দিন গৃহকর্ম করেও এই খামারে কাজ করতে পারছেন। চিয়াং ছিংমেই এমন একজন নারী।  তিনি বলেন, ‘আমি বাড়ির কাছেই কাজ পেয়েছি। এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত ৫হাজার ইউয়ানের বেশি আয় করেছি। এখান থেকে বছরে  ১০ হাজার ইউয়ানের বেশি আয় করতে পারছি।’

এখানকার ৬হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে হানিসাকেলের চাষ করা হচ্ছে। স্থানীয় গৃহবধূ ও প্রবীন নারীদের কর্মসংস্থান হচ্ছে হানি সাকেলের বাগানে।

এইভাবে ভেষজ উদ্ভিদের বেশ কিছু বাগান সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে গ্রামবাসী নারীদের জীবনে।

 

কিংবদন্তি বিজ্ঞানী উ চিয়েন শিউং

চীনের বিখ্যাত নারী পদার্থবিদ উ চিয়েন শিউং এর জন্মের ১১০তম বার্ষিকী উদযাপন হয় সম্প্রতি। চীন ও মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানীরা এই উদযাপন করেন। চীন মার্কিন বিজ্ঞান গবেষণায় সহযোগিতা অব্যহত রাখার ধারাবাহিকতায় এই উদযাপন হয়। বিখ্যাত এই নারী বিজ্ঞানী সম্পর্কে শুনুন প্রতিবেদনে।

চীনের একজন বিখ্যাত পদার্থবিদ নারী বিজ্ঞানী উ চিয়েন শিউং। তিনি মার্কিন-চীন সহযোগিতামূলক বিজ্ঞান গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

গেল শনিবার উ এর বার্ষিকী উদযাপন সিম্পোজিয়াম চলাকালীন, চীন অ্যাসোসিয়েশন ফর সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সভাপতি ওয়ান কাং একটি চিঠিতে বলেছেন যে পরীক্ষামূলক পদার্থবিজ্ঞানে উ এর অসাধারণ কৃতিত্ব  এ বিষয়ের অগ্রগতিতে যথেষ্ট অবদান রেখেছে।

উ হয়তো বিজ্ঞানী মেরি কুরির মতো বিশ্বব্যাপী খ্যাতি পানি কিন্তু তিনি ছিলেন অসামান্য প্রতিভাধর একজন নারী বিজ্ঞানী। ১৯১২ সালের ৩১ মে চিয়াংসু প্রদেশের থাইসাংয়ের লিউহ্য শহরে জন্ম গ্রহণ করেন।

উ চিয়েন ছিলেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা অনারারি ডাক্তার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেসের প্রথম চীনা আমেরিকান সদস্য এবং আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির প্রথম মহিলা সভাপতি।

আমেরিকান ও চীনা বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীরা উ চিয়েনকে অনেক শ্রদ্ধার আসনে রাখেন।  চীন অ্যাসোসোসিয়েশন ফর সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সভাপতি ওয়ান কাং আরও মনে করেন তিনি সবসময় চীনা এবং আমেরিকান তরুণ বিজ্ঞানীদের প্রজন্মের জন্য একটি রোল মডেল, বিশেষ করে নারী বিজ্ঞানীদের জন্য। উ  চিয়েনের বিজ্ঞান সাধনার ইতিহাস নারীদের বিজ্ঞানের সাধনায় শ্রেষ্ঠত্বের জন্য সংগ্রাম করতে অনুপ্রাণিত করেছে।

আজ আর কথা নয়, আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি আমরা। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন শর্ট ওয়েভ ৯ হাজার ৪শ ৯০ এবং শর্ট ওয়েভ ১১ হাজার ৬শ ১০ কিলোহার্টজে। আরও শুনতে পাবেন সিআরআই বাংলার ওয়েবসাইটে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবং আমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক  সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা,উপস্থাপনা : শান্তা মারিয়া

 ‘ওয়েল্ডিং মুলান’  ই রান প্রতিবেদন, রওজায়ে জাবিদা ঐশী,

ভেষজ চাষে কর্মসংস্থান হচ্ছে নারীর এবং   কিংবদন্তি বিজ্ঞানী উ চিয়েন শিউং , প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী ও শান্তা মারিয়া