চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং একবার বলেছেন, বিশ্বের বিশাল পরিবর্তন এবং দেশের উন্নয়নের পর্যায়ের পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নয়নের নতুন ধরণ গড়ে তুলতে হবে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ এক কৌশল এবং গ্রামে রয়েছে বড় সম্ভাবনা, সেখানে আমরা অনেক কিছু করতে পারি।
চীনের গ্রামের রাস্তা এখন আরও মসৃণ, ইন্টারনেটর গতি আরও দ্রুত, অবকাঠামো আরও উন্নত হয়েছে। শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে মালামাল সরবরাহ করা যায়, এবং সেখান থেকে কৃষি পণ্য দ্রুত শহরে পাঠানো যায়। গ্রাম ও শহরের ব্যবধান আরও কমেছে।
সিয়ে সি হং চীনের হু নান প্রদেশের ছেং চৌ শহরের পো সুই গ্রামের বাসিন্দা এবং অনলাইন কেনাকাটার অনুরাগী। গ্রামে এক্সপ্রেস স্টেশন চালু হবার পর তিনি প্রায় প্রতিদিন এখানে প্যাকেজ নিয়ে আসেন। আগে গ্রামের বাসিন্দারা যখন অনলাইনে কিছু ক্রয় করত, তখন তাদের পণ্যের প্যাকেটটি ২০ কিলোমিটার দূরে জেলা শহরের এক্সপ্রেস স্টেশনে পাঠাতে হত। এখন গ্রামেই প্যাকেট আসতে পারে। ফলে গ্রামের বাসিন্দাদের অনলাইনে কেনাকাটার ইচ্ছা বেড়েছে।
গ্রামের বাসিন্দাদের অনলাইনে কেনাকাটা আরও সহজ ও সুবিধাজনক হয়েছে। পাশাপাশি, কৃষি পণ্য যেমন: শাকসবজি, ফল, মধুও দ্রুত গ্রামের বাইরে পাঠানো যায়। বাইরে না গিয়ে গ্রামের বাসিন্দারা ক্রয় ও বিক্রয় করতে পারে। তাদের সময় সাশ্রয় হয় এবং বাকি সময়ে তারা আরও উত্পাদন করতে পারে।
পো সুই গ্রামের এক্সপ্রেস স্টেশন চীনের বিশাল এক্সপ্রেস শিল্পের মধ্যে ক্ষুদ্র একটি বিন্দু মাত্র। তবে, এমন অসংখ্য বিন্দু নিয়ে বড় একটি নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠেছে। চলতি বছরের জুন মাসের শেষ দিক পর্যন্ত চীনে গ্রামীণ এক্সপ্রেস স্টেশনের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৬৭ হাজারটি এবং চীনের ৯০ শতাংশ গ্রাম এক্সপ্রেস সেবার আওতায় আসে।
নতুন একটি এক্সপ্রেস স্টেশন স্থাপন করা হলে গ্রামটি বড় একটি নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত হয়। গ্রামের বৈশিষ্ট্যময় কৃষি পণ্যও কোটি কোটি ভোক্তার সঙ্গে যুক্ত হয়। কৃষক ও বিশাল বাজারের মধ্যে ব্যবধান কমে যায়।
কৃষি, গ্রাম ও গ্রামের বাসিন্দা এ তিনটি বিষয়ের উপর সব সময় গুরুত্ব দেয় চীন সরকার। তাই গ্রামাঞ্চলের অবকাঠামো সংকট সমাধান এবং গণ-পরিষেবার উন্নয়ন নিয়ে ভাবেন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, গ্রামের ই-কমার্স ও এক্সপ্রেস ব্যবসাকে উত্সাহিত করা হবে। কৃষি পণ্য বিক্রির চ্যানেল সম্প্রসারিত করতে হবে, কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করতে হবে।
বর্তমানে চীনে জেলা, উপজেলা ও গ্রাম এ তিন পর্যায়ের লজিস্টিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। জেলা ও উপজেলায় গুদামজাত-করণ এবং বিতরণের দক্ষতা জোরদার করা হচ্ছে। বর্তমানে চীনে জেলা পর্যায়ে ই-কমার্স গণ-পরিষেবা কেন্দ্র ও লজিস্টিক বিতরণ কেন্দ্রের সংখ্যা ২৬০০টি। আর গ্রাম পর্যায়ে পোস্ট অফিস, দোকান ও সেবা কেন্দ্র নিয়ে ৪.২ লাখ ই-কমার্স সেবা স্টেশন গঠন করা হয়েছে। প্রতিদিন ১০ কোটি প্যাকেট গ্রাম থেকে দেশের নানা জায়গায় পৌঁছায়।
গ্রামে শুধু লজিস্টিক ব্যবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে- তা নয়। বর্তমানে চীনের সব গ্রামে পাকা রাস্তা, বাস, পোস্টাল সেবা চালু হয়েছে। আর সব গ্রামেই ইন্টারনেট চালু হয়েছে।
পাশাপাশি, চীনে কৃষি পণ্যের গুদামজাত-করণ এবং পণ্য তাজা রাখার কোল্ড চেইন অবকাঠামোর নির্মাণও দ্রুত এগিয়ে চলছে। চীনে ১০০টি গুরুত্বপূর্ণ শাকসবজি ও ফল উৎপাদিত জেলায় কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনা নির্মাণের পরীক্ষা চলছে। চিয়াং সু প্রদেশের সু চৌ শহরের থুং শান এলাকা এমন একটি এলাকা। এ জেলায় নতুন করে ৪১টি হিমাগার নির্মিত হয়েছে।
চীনা লজিস্টিক ও ক্রয় কমিটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের গ্রামে হিমাগার নির্মাণ প্রতিবছর ৪০ শতাংশ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রামে রেফ্রিজারেটেড ট্রাকের সংখ্যা প্রতিবছর গড়ে ৩৫ শতাংশ করে বাড়ছে। ফল ও শাকসবজির কোল্ড চেইন প্রচলনের হারও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
চীনের ৫০ কোটি মানুষ স্থায়ীভাবে গ্রামে বাস করে। তাই গ্রামে লজিস্টিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানোকে চীনের যৌথ বড় একটি বাজার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়।
২০২৫ সালে চীনে চালু হবে জেলা-ভিত্তিক লজিস্টিক কেন্দ্র। উপজেলায় থাকবে তাদের শাখা অফিস, আর গ্রামে পৌঁছাবে লজিস্টিক সেবা; যাতে কৃষি পণ্য বাইরে বের হতে এবং ভোগ্যপণ্য গ্রামে প্রবেশ করতে পারে।(শিশির/এনাম/রুবি)