চীন-ইতালি সাংস্কৃতিক বিনিময় ফলপ্রসূ হয়েছে: চীনে নিযুক্ত ইতালির দূতাবাস
2022-09-27 15:42:11

চীন-ইতালি সাংস্কৃতিক বিনিময় ফলপ্রসূ হয়েছে: চীনে নিযুক্ত ইতালির দূতাবাস

পূর্ব ও পশ্চিমের সভ্যতার অন্যতম প্রতিনিধি, চীন ও ইতালির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময় প্রাচীনকাল থেকেই শুরু হয়েছিল- যা এখনও চলছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দু’দেশ সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে সাংস্কৃতিক সহযোগিতার একটি ভাল উন্নয়নের প্রবণতা বজায় রাখছে, বিনিময়ের স্তর আরও গভীর হয়েছে, বিনিময়ের বিষয়বস্তু আরও সমৃদ্ধ হয়েছে এবং সহযোগিতার পর্যায় আরও উন্নত হয়েছে। সম্প্রতি চীনে ইতালির দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নতুন পরিচালক ফ্রেডরিক চায়না মিডিয়া গ্রুপের প্রতিবেদকের একান্ত সাক্ষাত্কারে বলেন, চীন ও ইতালির সংস্কৃতি ও পর্যটনবর্ষ দু’পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমৃদ্ধ বিষয়ে পরিণত হয়। ‘ইতালির উত্পত্তি’সহ ধারাবাহিক প্রদর্শনীও চীনা জনগণের ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এটি হলো চীন ও ইতালি সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল অর্জনের আরেকটি উদাহরণ। ফেডারিক প্রদর্শনী, প্রকাশনা এবং চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে বিনিময় ও সহযোগিতার ইতিবাচক প্রবণতার জন্য তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে সাংস্কৃতিক খাতে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা এবং পারস্পরিক শিক্ষা কার্যকরভাবে চীন ও ইতালির রাজনীতি, অর্থনীতি এবং বিভিন্ন খাতের সম্পর্ক গভীর করবে। ফেডারিক সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং সাংস্কৃতিক খাতে পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতায় দু’দেশের মধ্যে ভবিষ্যত সহযোগিতার বিষয়ে তার আস্থা প্রকাশ করেছেন।

 

সাক্ষাত্কারে ফেডারিক বলেন, আমি খুবই খুশি যে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং এতে সাফল্য অর্জিত হয়েছে। আমি মনে করি, সাম্প্রতিক মাসগুলিতে এসব ইভেন্ট ও প্রদর্শনী সফল হয়েছে। এতে দেখা যায় যে চীনা জনগণ ইতালি ও ইউরোপের সংস্কৃতির প্রতি গভীর আগ্রহী। চীন ও ইতালির জনগণও আশা করেন যে সংলাপ ও সমঝোতা জোরদার করা হবে। এটি হলো আর্থ-রাজনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। যা কয়েক বছর ধরে চলা কোভিড মহামারীর পর সাংস্কৃতিক বিনিময় পুনরুদ্ধারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। ইতালিসহ ইউরোপ ও চীনের মধ্যে সাংস্কৃতিক খাতের বিনিময় স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। আমি বলতে চাই- আমি বিশ্বাস করি, দু’দেশের সরকার আশা করে যে, ২০২২ সালে উপরে উল্লেখিত কর্মসূচিগুলো আয়োজন করা যাবে। মহামারীর প্রেক্ষাপটে এটি সহজ কাজ নয়, কিন্তু কিছু বড় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। যা সাংস্কৃতিক খাত এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিকে উত্সাহ দেবে এবং আস্থার সঙ্গে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে দু’দেশের সহযোগিতা এগিয়ে নেবে। চীনে ইতালির দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নতুন পরিচালক হিসেবে, তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে ভবিষ্যতে সাংস্কৃতিক বিনিময়ে বিস্তৃত সহযোগিতার সম্ভাবনা রয়েছে। পাবলিক প্রতিষ্ঠানের উচিত বিভিন্ন বিনিময় ও কার্যক্রমে সুযোগ-সুবিধা ও সমর্থন দেওয়া; যাতে সাংস্কৃতিক বিনিময় আরও উন্নত হয়। আমার মতে আমাদের উচিত দু’দেশের শিল্পী এবং সাংস্কৃতিক জগতের বিখ্যাত ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো। একই সময়ে তাদের ভবিষ্যতের দিকে মনোনিবেশ করা এবং নতুন ক্যারিয়ারের জন্য দুই দেশের ঐতিহ্য ও সভ্যতা উন্নত করা। আমি বিশ্বাস করি, আরও বেশি ইতালির তরুণ চীনের সাংস্কৃতিক শিল্প ব্যবস্থাকে জানার চেষ্টা করবে, তারা হয়তো ইতালি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। তারা অবশ্যই ইতালির সাংস্কৃতিক শিল্প ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত। আমিও আশা করি দু’দেশের তরুণ সমাজ নিজেকে আরও উপযুক্তভাবে গড়ে তুলবে, আরও ভালভাবে বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দেশের ঘনিষ্ঠ সভ্যতার সংলাপ প্রচার করবে।

 

ফেডারিক বলেন যে, চীনের সাংস্কৃতিক শিল্প বাজারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতালি ইতিবাচকভাবে অংশগ্রহণ করছে। যেমন প্রদর্শনী, অপেরা, সাহিত্য ও প্রকাশনা। বিশেষ করে শিশু সাহিত্য ইত্যাদি। তা ছাড়া চলচ্চিত্র শিল্পে দু’দেশেরও দীর্ঘদিনের সহযোগিতা বজায় রয়েছে। ইতালি চীনের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ইতালির কিছু চলচ্চিত্র চীনা বাজারেও সফল হয়েছে। তা ছাড়া দু’দেশ সংগীত খাতে সহযোগিতার বিস্তৃত স্থান রয়েছে। বিশেষ করে- তরুণ সংগীত শিল্পীদের বিনিময় ইত্যাদি। ইতালির পপ ও রক সংগীতকর্ম বিশ্বব্যাপী পরিচিত। আমি আশা করি যে, এই খাতে দু’দেশের সহযোগিতার ফলাফল দেখতে পাবো।

 

 


‘চীন-জার্মানি কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের কনসার্ট’ আয়োজন করে জার্মানিতে চীনের দূতাবাস

সম্প্রতি জার্মানিতে চীনের দূতাবাস বার্লিন ওয়ার্ড বাগানের উন্মুক্ত মঞ্চে ‘চীন-জার্মানি কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের কনসার্ট’ আয়োজন করেছে। কনসার্টটি জার্মানির রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন মহলের ব্যক্তি, জার্মানিতে বসবাস করা প্রবাসী চীনা এবং স্থানীয় নাগরিকসহ সহস্রাধিক মানুষকে আকর্ষণ করেছে।

জার্মানিতে চীনের দূতাবাসের ‘চীন-জার্মানি কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত ৫০তম বার্ষিকী উদযাপ’ করার সিরিজ ইভেন্টের একটি হিসেবে, কনসার্টটি চীন ও জার্মানির বিখ্যাত শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এর লক্ষ্য হলো সংগীত মিডিয়া হিসেবে, পারস্পরিক সমঝোতা বাড়ানো এবং উভয়ের মৈত্রী বাড়ানো, যাতে চীন ও জার্মানির সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রচার করা যায়। ১৬টি জার্মান বিখ্যাত অর্কেস্ট্রা এবং থিয়েটারের প্রায় ৪০জন চীন ও জার্মান সংগীত শিল্পী সেদিন বিভিন্ন বিশ্ববিখ্যাত সংগীতকর্ম পরিবেশন করেছেন। এতে রয়েছে চীনা লোকগান, চীনা শাস্ত্রীয় বাদ্যযন্ত্র, জার্মান সুরকার বাখ, বেথোভেনের সংগীতকর্ম ইত্যাদি অনেক কাজ। দর্শকদের তুমুল করতালি কুড়িয়েছে।

 

এবার কনসার্টের আর্ট ও সংগীত পরিচালক এবং জার্মান রেডিও ফিলহারমোনিকের আজীবন প্রধান trumpet শিল্পী এবং বার্লিন একাডেমি অফ পারফর্মিং আর্টসের trumpetঅধ্যাপক হান সিয়াও মিং বলেন, চীন-জার্মানি কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকীর প্রতিবাদ্য হিসেবে, কনসার্টে চীনা ও জার্মান শিল্পীরা নিজ দেশের ক্লাসিক সংগীতকর্ম পার্ফম করেছেন। তিনি বলেছেন,

“ঐতিহ্যবাহী চীনা সংগীত এবং জার্মান ক্লাসিক সংগীত এই ধরনের পূর্ব ও পশ্চিমের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের জন্য খুবই ভাল। যা দু’দেশের শিল্পীদের উচ্চ মান প্রতিফলিত করে। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে এই ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। সিমফনি অর্কেস্ট্রা বা চেম্বার সংগীতের সহযোগিতা তাত্পর্যপূর্ণ। বাণিজ্য ও শৈল্পিক দিক থেকে চীন ও জার্মানির অনেক সহযোগিতা রয়েছে, মিউজিক খাতেও। সংগীত জগতে কোন সীমা নেই, দু’পক্ষের মতভেদ থাকলেও সংগীতের মাধ্যমে বিনিময় করা যায়।”

টেরেসা স্টুয়ার্ড পড়াশোনা এবং কাজের জন্য চীনে মোট ৬ বছর ধরে বসবাস করেছেন। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, দু’দেশের শিল্পীদের যৌথ পার্ফর্মেন্স তাকে মুগ্ধ করেছে। তিনি বলেন,

“আমি চীনকে ভালবাসি। সেখানে পড়াশোনা ও কাজ করা আমার জন্য একটি সুন্দর অভিজ্ঞতা। চীনে বসবাস করা খুবই আরামদায়ক। জার্মান মিডিয়ায় প্রকাশিত চীনের নতুন ডিজিটাল উন্নয়নের বিষয় চীনে দেখেছি। দশ বছর আগে, যখন চীন ও জার্মানি দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪০তম বার্ষিকী উদযাপন করেছিল, তখন আমি বেইজিংয়ে কাজ করতাম। আমি আশা করি, দশ বছর পর দু’দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা উদযাপন করতে পারবে। জার্মানি-চীন মৈত্রী দীর্ঘদিন ও আরও গভীর হোক, সহযোগিতা আরও বিস্তৃত হোক এবং আরও সুন্দর ভবিষ্যত তৈরি হোক।”

 

ইতালির ভিজেভানো গ্র্যান্ড প্লাজাতে রেনেসাঁর মহিমা অনুভব করুন

ভিজেভানো হলো ইতালির লোম্বার্ডি এলাকার পাভিয়া প্রদেশের একটি গ্রাম। এখানে একটি স্কয়ার আছে। এটি রেনেসাঁর যুগে ইতালি এমনকি সারা ইউরোপে প্রথম স্কয়ার। যা প্রাচীন রোমান ফোরামের অনুপ্রেরণা এবং স্ট্যান্ডার্ডের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে। প্রাচীন রোমান ধারণায় ‘স্কয়ার’ কেমন ছিল? ভিজেভানো গ্র্যান্ড প্লাজা থেকে এর উত্তর পাওয়া যায়।

ভিজেভানো গ্র্যান্ড প্লাজা ১৫ শতকের শেষ দিকে মিলানের গ্র্যান্ড ডিউক লুডোভিকো স্ফোরজার নির্দেশে তৈরি হয়েছিল। স্কয়ারের সাথে সংযুক্ত দুর্গটি একটি রেনেসাঁ-শৈলীর প্রাসাদ যা ফরাসি রাজা এবং অনেক সাম্রাজ্য সম্রাটসহ লোকেদের আতিথেয়তা করেছে। ছোট স্কয়ার রেনেসাঁর জাঁকজমক এবং মহিমা দেখায়। প্রাচীন স্কয়ারটি খোলা আয়তকার স্থান, কেন্দ্রে এবং উভয় পাশে কোন স্থাপত্য নেই, অভিন্ন কলোনেডের মাধ্যমে সংযুক্ত, প্রতিটি পাশে ৩৩টি খিলান রয়েছে। ভিজেভানো গ্র্যান্ড প্লাজা এই মানদণ্ড পূরণকারী প্রথম স্কয়ার ছিল। এটি ১৪৯২ সালে তৈরি হয়েছিল। মিলানের গ্র্যান্ড ডিউক লুডোভিকো স্ফোরজার নির্দেশে এই স্কয়ার নির্মিত হয়েছে। মিলানের প্রিন্সিপালিটি উত্তর ইতালিতে অবস্থিত। ১৪৯২ সালে তা বেশ উন্নত ছিল। লিওনার্দো দা ভিঞ্চিও এখানে এসেছিলেন এবং ধাতব কাজ, উলের প্রক্রিয়াকরণ এবং বিশেষত কৃষি প্রযুক্তি দিয়ে আকৃষ্ট হয়েছিলেন।

স্কয়ারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আপনি স্পষ্টভাবে দেখবেন- এই স্কয়ার যেন একটি মঞ্চের মতো। আসলে ভিজেভানোয় স্কয়ারকেও ‘বড় মিটিং রুম’ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, সাধারণত এর দেয়ালে দেয়ালচিত্র রয়েছে। লুডোভিকো স্ফোরজার সময়ে, স্কয়ারের মাঝখানে একটি র‍্যাম্প টাওয়ারের সঙ্গে সংযুক্ত। আপনি সরাসরি দুর্গে ঘোড়ায় চড়ে যেতে পারেন। অতএব, এটা বলা যেতে পারে যে স্কয়ারটি দুর্গের মহত্ প্রাঙ্গণ। লুডোভিকো স্ফোরজার শাসনকালে, দুর্গটি একটি মনোমুগ্ধকর গেস্টহাউসে পরিণত হয়েছিল, আমরাও বলতে পারি যে এটি একটি রেনেসাঁ-শৈলী প্রাসাদ যা রাজদরবারের কর্মীদের গ্রহণ করেছিল। বছরের বেশিরভাগ সময় তারা এখানে থাকে।