বন্ধুরা, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আপনার নিত্যদিনের খাবারের দাম বেড়ে যাচ্ছে? নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও বেশি হচ্ছে? নিজ দেশের আবহাওয়া, শস্য চাষের অবস্থা, প্রতিবেশী দেশের অবস্থা, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, দেখতে যেন আমাদের জীবনের কাছে অনেক দূরের বিষয়। কিন্তু, এসব বিষয় খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এ অবস্থায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, খাদ্যের অপব্যয় প্রতিরোধে আমরা কি কি করতে পারি?
করোনাভাইরাস মহামারি, সংঘর্ষ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০১৯ সালের পর বিশ্বজুড়ে তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে সাড়ে ৩৪ কোটি ছাড়িয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্যসহায়তা-সংক্রান্ত শাখা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে।
ডব্লিউএফপির আঞ্চলিক পরিচালক করিন ফ্লেশার বলেন, করোনা মহামারি শুরুর আগে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তা-হীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ছিল সাড়ে ১৩ কোটি। এরপর এ সংখ্যা বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও সংঘর্ষের ফলে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।
পরিবেশগত সমস্যার প্রভাবে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা খাদ্যঘাটতি আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এ ছাড়া জলবায়ু-সংকটের ফলে আরও সংঘাত ও ব্যাপক বাস্তুচ্যুতির ঘটনাও ঘটতে পারে।
ডব্লিউএফপির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষের খাদ্যসহায়তা প্রয়োজন। করোনা মহামারির পর জিনিসপত্রের দাম ৪৫ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দাতারাও বিশাল অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ইরাকের মতো তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে লাভবান হলেও খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধান দুটি খাদ্যশস্য চাল ও গম। নানা কারণে এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ বাজারে এ দুটি পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে এবং দাম ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা তথ্য বলছে, নিকট-ভবিষ্যতে এ দুটি খাদ্যশস্যের সরবরাহ আরো বেশি বিঘ্নিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বৈদেশিক কৃষি সেবা বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে আগামী বছর চাল ও গম মিলিয়ে ৯০ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করতে হতে পারে।
এর মধ্যে চাল আমদানির পরিমাণ হতে পারে সাড়ে ১১ লাখ টন এবং বাকিটা গমের। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের খাদ্যবিষয়ক সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি) নতুন করে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকটের আগাম সতর্কতা জারি করেছে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অক্সফামের প্রতিবেদনেও বৈশ্বিক খাদ্যসংকটের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
এমন কঠোর প্রেক্ষাপটে খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষায় খাদ্যের অপব্যয় প্রতিরোধ করা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই ক্ষেত্রে চীনে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করা যায়। যেমন চীনে বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের মধ্যে খাদ্যের অপব্যয় রোধ করে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কার্যকরভাবে শস্য, ফল ও সবজিসহ বিভিন্ন কৃষিজাত দ্রব্যের মজুদ নিশ্চিত করা যায়। যেমন খাদ্যের ক্ষেত্রে, চীন যথাক্রমে শস্য মজুদের প্রযুক্তিগত সমস্যা সমাধান করেছে। এর ফলে বেশি দিন মজুদ ছিল শস্যের হার আগের ১৫ শতাংশ থেকে নেমে ০ শতাংশ হয়েছে। শস্য মজুদ এবং পরিবহনের দক্ষতা ৪০ শতাংশ বেড়েছে। শস্য সংগ্রহ এবং মজুদে শস্যের ক্ষতির হার ৫ শতাংশে নামিয়েছে।
উত্পাদনের ক্ষেত্রে চীন সুনির্দিষ্ট উত্পাদন এবং বহুমুখী ব্যবহারকে সংযোগ করেছে। এমন পদ্ধতিতে সম্পদের সাশ্রয় হয়েছে। গবেষণা থেকে জানা যায়, সুনির্দিষ্টভাবে উত্পাদনের মাধ্যমে চাল উত্পাদনে ১৫ শতাংশ জ্বালানী সাশ্রয় করা যায়, আর চালের ক্ষতি ১৫ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে।
সেই সঙ্গে প্রতি বছর শস্য উত্পাদনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ ভুট্টার শিষসহ উপজাত দ্রব্য তৈরি হয়। এসব উপজাত দ্রব্য দিয়ে জব ও প্রোটিন উত্পাদনে ব্যবহার করা যায়। যা ব্যাপকভাবে খাদ্যের ক্ষতি এড়ানো যায়। এসবের ভিত্তি হল চীন অব্যাহতভাবে বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন জোরদার করে প্রত্যেকটি শস্য, প্রত্যেক কণা চাল রক্ষা করে, যাতে চীনাদের খাবারের বাটি নিজের হাতে ধরতে পারে।
পাশাপাশি চীনে খাদ্যের অপব্যয় প্রতিরোধে নানাভাবে কার্যক্রম নিচ্ছে। চীন ২০২১ সালে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীন খাদ্য অপব্যয় প্রতিরোধ আইন’ জারি করেছে। চীনে "Clear Your Plate" উদ্যোগ নেয়ার সঙ্গে চীনাদের ভোগের চিন্তাধারাও উন্নত হয়েছে।
খাদ্যকে গুরুত্ব দিয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খাদ্যরক্ষা করা, সাশ্রয়ী চিন্তাধারার আলোকে খাদ্যের ক্ষতি এড়ানো যেতে পারে। এভাবে আমরা প্রত্যেক মানুষ খাদ্যের অপব্যয় প্রতিরোধে কিছু করতে পারি।