ঢাকায় চীনের জাতীয় দিবস উদযাপন: দু’দেশের ঐতিহ্যিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার
2022-09-25 21:19:40

১ অক্টোবর গণচীনের ৭৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীকে সামনে রেখে ঢাকায় জাঁকজমকপূর্ণ উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চীনা দূতাবাস। পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে শনিবার আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের তিন জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূতসহ বাংলাদেশ ও চীনের সংশ্লিষ্ট মহলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, ব্যবসায়ী নেতা, সাংবাদিক, গবেষক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন্।

সন্ধ্যায় মূল অনুষ্ঠানে অতিথিদের স্বাগত জানান ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। স্বাগত বক্তব্যে চলমান পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে চীন ‘নিজস্ব সমাধান’ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। বলেন, শান্তি উন্নয়ন, সমতা, ন্যায্যতা, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ‘মানবতার সার্বজনীন মূল্যবোধকে’ চীন লালন করে। একইসঙ্গে যে কোনো ধরনের ‘স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা’, ‘দলবদ্ধ বিরোধ’ অথবা ‘একতরফা নিষেধাজ্ঞাকে’ চীন প্রত্যাখ্যান করে বলেও উল্লেখ করেন লি জিমিং।

বাংলাদেশকে চীনের পুরনো ও ভালো বন্ধু হিসেবে অভিহিত করেন দেশটির রাষ্ট্রদূত। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে চীনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও আশ্বস্ত করেন লি জিমিং। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের চীনে ফিরিয়ে নিতে চার্টাড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও অভ্যাগতদের জানান চীনা রাষ্ট্রদূত।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান দু’দেশের বন্ধুত্বের দীর্ঘ ইতিহাসের কথা স্মরণ করেন। বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনের অবদান এ দেশের সরকার ও জনগণ গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করে বলে জানান তিনি। ভবিষ্যতেও তথ্য-প্রযুক্তি, অবকাঠামো উন্নয়নসহ নানা ক্ষেত্রে চীনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। একচীন নীতির প্রতি বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থনের কথাও পুনরায় জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।

এর আগে একই ভ্যেনুতে চায়না-বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজেস কো-অপারেশন ফোরাম- ২০২২-এ প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ চীনের প্রতি আহ্বান জানান। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীনকে আরও কম সুদে ঋণ দেওয়ারও আহ্বান জানান ড. শামসুল আলম। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি বাড়ানোর অনুরোধও রাখেন প্রতিমন্ত্রী।

জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক শক্তিশালী, পরিপূরক ও ক্রমবর্ধমান। দু’দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ব্যাপক ও মজবুত। এ সম্পর্কের আরও উন্নয়নে কাজ করে যাবে তার দেশ।

উদযাপনীর একেবারে শুরুতে ‘কালারফুল ইউননান’ বা বর্ণিল ইউননান নামে বর্ণাঢ্য প্রদর্শনী অতিথিদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস ও চীনের ইউননান প্রাদেশিক সরকারের বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগ এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে। প্রদর্শনীতে ইউননানের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট, অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য, খাদ্য সামগ্রী, ফুল ইত্যাদির পরিচয় তুলে ধরা হয়। মজার ব্যাপার ছিল প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত সব প্রাকৃতিক ফুল ইউননান থেকে আনা হয়।

চীনা রাষ্ট্রদূত অতিথের জানান, বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের চীনা প্রদেশ ইউননান। বিমানে যেতে মাত্র দু’ঘন্টা সময় লাগে। ইউননানের ভূ-প্রকৃতি, পাহাড়, নিসর্গ, বৈচিত্যময় খাবার সহজেই পর্যটকদের আকৃষ্ট করে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ ও ইউননানের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য বাড়ানোর অনেক সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন চীনা রাষ্ট্রদূত। বিশেষ করে সাংস্কৃতিক বিনিময়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পর্যটন খাতে সহযোগিতা আরও বাড়ানো যেতে পারে বলে মত তার।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ইউননানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বিষয়ে চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। ইউননানের গভর্নর ওয়াং ইয়োবোও সবাইকে তার প্রদেশে সফরের আমন্ত্রণ জানান।

চীনের জাতীয় দিবসকে সামনে রেখে আয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ এ সব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও চীনের ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটনসহ সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রে এ সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত হবে- এটা দু’দেশের মানুষেরই প্রত্যাশা।

মাহমুদ হাশিম

ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।