চীনাদের খাবার সমস্যা কীভাবে সমাধান হলো?
2022-09-23 13:15:29

জনগণ দেশের ভিত্তি, খাদ্যশস্য জনগণের প্রাণ। খাদ্য নিরাপত্তার ওপর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং অনেক গুরুত্বারোপ করেছেন। চীনের অষ্টাদশ কংগ্রেসের পর তিনি দেশের প্রায় সব কৃষি উত্পাদন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। লোকজন সবসময় দেখে যে, তিনি ক্ষেতে, কৃষকের বাসায়, শস্যের চাষ পরিদর্শন করেছেন এবং কৃষকের জীবন-জীবিকার খোঁজ-খবর নিয়েছেন। পরিদর্শনের সময় তিনি বার বার খাদ্য নিরাপত্তার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।

২০২১ সালের মে মাসে মধ্য চীনের হ্য নান প্রদেশ পরিদর্শনের সময় সি চিন পিং-এর একটি আকস্মিক কাজ সবার মনে গভীর দাগ কাটে। পরিদর্শনের পথে তিনি হঠাত্ গাড়ি থেকে নেমে পাশের ক্ষেতের গম চাষের অবস্থা পরিদর্শন করেন। গমের ফলন দেখে তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালে খাদ্যের ফলন হলে পুরো দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের নিশ্চয়তা থাকে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে নিশ্চয় বীজকে হাতে ধরে দেখতে হয়।

২০২০ সালের জুলাই মাসে সি চিন পিং উত্তর-পূর্ব চীনের চিলিন প্রদেশ পরিদর্শন করেন। তাঁর প্রথম ধাপই ছিল শস্যের জমি। সেই পরিদর্শনে তিনি বলেন, খাদ্য হল সব কিছুর ভিত্তি, শস্যের কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে হয়। শরত্কালের শস্যের ভালো ফলন নিশ্চিত করতে হয়।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, ‘প্রথম চীনা কৃষকের ফসল কাটার উত্সবের’ পর সি চিন পিং চীনের হেইলুংচিয়াং প্রদেশ পরিদর্শন করেন। তিনি গম ক্ষেতে যান, ধান ক্ষেতে যান, শস্য চাষের অবস্থা দেখেন। তিনি বলেন, চীনাদের খাবারের বাটিকে নিজের হাতে ধরতে হবে এবং এতে নিজের চাষ করা শস্য থাকতে হবে।

চীনের ১৪০ কোটি মানুষের খাবারের সমস্যা সমাধান করা সবসময় দেশের উন্নয়ন এবং জনগণের জীবিকা সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সি চিন পিং বার বার জোর দিয়ে বলেছিলেন, খাদ্য নিরাপত্তা কৌশলগত ব্যাপার।

এমন গুরুত্বারোপের পিছনে হল প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশের উন্নয়ন নিয়ে তাঁর চিন্তাধারা।

তিনি বলেছিলেন, দেখুন, বিশ্বে সত্যি শক্তিশালী দেশগুলো, তারা সবই নিজের খাবারের সমস্যাকে সমাধান করতে পারে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি সর্বযুগের বিষয়। কখনোই তা উপেক্ষা করা যাবে না।

গত ৬ মার্চ চীনের বার্ষিক দুই অধিবেশনের সময় সি চিন পিং কিছু তথ্য দিয়ে বলেন, কঠোর চেষ্টার পর চীন বিশ্বের ৯ শতাংশ আবাদি জমি, ৬ শতাংশ মিঠা পানির সম্পদ দিয়ে বিশ্বের প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ জনসংখ্যা লালন করেছে। অতীতে ৪০ কোটি মানুষ ক্ষুধায় ছিল। এখন ১৪০ কোটিরও বেশি মানুষ যথেষ্ঠ ও ভালো খাবার খেতে পারে। যা হল- ‘কে চীনকে লালন করে’ সে প্রশ্নের উত্তর।

তাহলে কে চীনকে লালন করে? সি চিন পিং দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন, চীনকে আত্মনির্ভরশীল হতে হয়, নিজেই নিজের খাবারের সমস্যা সমাধান করতে হয়।

বীজ হল খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সি চিন পিং বলেন, হাতে চীনারা বীজ ধারণ করলে, চীনা বাটিও ধরতে পারে। খাদ্য নিরাপত্তা বাস্তবায়ন করতে পারে।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোটি কোটি কৃষককে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, কৃষককে শস্য চাষে উত্সাহ দিতে হয়, স্থিতিশীলভাবে কৃষকদের ভর্তুকি দিতে হবে। কৃষকদের শস্য চাষের মুনাফা ও আয় নিশ্চিত করতে হবে।

আর খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আবাদি জমি রক্ষা করতে হয়। চীনে আবাদি জমি রক্ষার সবচেয়ে কঠোর ব্যবস্থা আছে। সেই সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদের প্রয়োগ জোরদার করা হচ্ছে চীনে। মধ্য চীনের হ্য নান প্রদেশের ইয়ু সি জেলা হল দেশের শ্রেষ্ঠ কৃষিজাত দ্রব্য উত্পাদনের এলাকা। জেলাটি চীনের খাদ্য উত্পাদনের শ্রেষ্ঠ জেলা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষির আধুনিকায়নের মাধ্যমে ইয়ু সি জেলা ব্যাপকভাবে উচ্চ মানের ক্ষেত তৈরি করেছে। ভালোভাবে বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কৃষি উন্নত করছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলেও জেলাটি তা মোকাবিলা করতে পারে। যা খাদ্যের টেকসই ও স্থিতিশীল উত্পাদনের জন্য ভিত্তি স্থাপন করেছে।

বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যকর খাবার পেতে পারে। ক্ষুধা ও পুষ্টিহীন মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষুধার্ত মানুষ আরো বেশি হচ্ছে। চীনে খাদ্য নিরাপত্তার নিশ্চিত হওয়া বিশ্বের মহামারি প্রতিরোধ এবং অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখছে।

(শুয়েই/তৌহিদ/সুবর্ণা)