বন্ধুরা, বর্তমানে চীন অভূতপূর্ব গতিতে বিশ্বকে আলিঙ্গন করছে। সব ক্ষেত্রে নিজেকে আরও উন্মুক্তও করে চলেছে চীন। এতে বিশ্বের সঙ্গে চীনের সবক্ষেত্রে যোগাযোগ ক্রমশ বাড়ছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমি এ বিষয় নিয়ে কথা বলব।
কুয়াংচৌ বন্দর ছেড়ে একটি জাহাজ সমুদ্রে যাত্রা শুরু করে। জাহাজটি পজিশনিং চিপের সাহায্যে উপগ্রহ রিয়েল টাইমে ট্র্যাক করা যায়। এটি যেন সমুদ্রে তার পায়ের ছাপ রেখে যায়। সারা বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় এক বিলিয়ন জাহাজের অবস্থানসংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ ও সেগুলোকে ট্র্যাক করা হয়। আমরা গত এক দশকে বিশ্বব্যাপী শিপিংয়ের ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি।
দশ বছরে চীনের উপকূল বরাবর এগারোটি আন্তর্জাতিক হাবে বন্দরের সংখ্যা ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। নৌপরিবহন পরিষেবা নেটে শতাধিক দেশ ও অঞ্চলের প্রধান বন্দর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। চীন সমুদ্রপথে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংযুক্ত দেশে পরিণত হয়েছে।
ইউরেশিয়া মহাদেশে গত এক দশকে চীন-ইউরোপ রেলপথে চলাচলকারী ট্রেনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৪২টি ট্রেন চীন এবং ১৯০টিরও বেশি ইউরোপীয় শহরের মধ্যে যাওয়া-আসা করছে। এতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জন্য উন্নয়নের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
পশ্চিম দিকে চীন-ইউরোপ মালবাহী রেলপথের লাইনটি সবচেয়ে প্রশস্ত ও দীর্ঘ। জার্মানির ‘পুরানো শিল্প ঘাঁটি’ রুহর (Ruhr) এলাকায় ডুইসবার্গ (duisburg) বন্দর পড়েছে এই লাইনে। কয়লা শিল্পের পতন হওয়ার কারণে রুহর শহরের উন্নয়ন এতোদিন বন্ধ ছিল। তবে, চীন-ইউরোপ রেলপথ চালু হওয়ার পর শহরটি ইউরোপের পরিবহনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
ইউসিন ইউরোপ জার্মান ভাণ্ডারের কর্মী থমাস ক্রাজনিকি বলেন, ‘আমি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এখানে কাজ শুরু করি। তখন থেকে আমার কাজ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষুদ্র ও হালকা শিল্পপণ্য থেকে বড় শিল্পপণ্য এখানে পাওয়া যায়। আমার বয়স ৫৫ বছর হয়েছে। এ বয়সে আমি একটি স্থায়ী নির্দিষ্ট কাজ করছি, যা জার্মানিতে বিরল।’
বর্তমানে চীনের সঙ্গে বিশ্বের পণ্যবাণিজ্য দশ বছর আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রায় ১৩.৫ শতাংশ দখল করে আছে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য। বর্তমান চীন আরও গভীরভাবে বিশ্বের সরবরাহ-চেইনের সঙ্গে মিলেছে। প্রতি মিনিটে গড়ে ৭.২৪৯ কোটি ইউয়ান পণ্য চীন থেকে রপ্তানি ও চীনে আমদানি হয়।
প্রতিবছরের সেপ্টেম্বরে জার্মান হেলিকপ্টার, ইতালির রুটি, ভানুয়াতু কফি ও নিউজিল্যান্ডের মধু নৌ, বিমান ও রেলপথের মধ্য দিয়ে একই গন্তব্যে পৌঁছায়। আর সেটা হলো শাংহাই।
২০১৮ সালের নভেম্বরে যখন বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, তখন চীন সমস্ত বিশ্বের পণ্যের জন্য চীনের বিরাট বাজার খুলে দেয়। মার্কিন ব্যবসায়ী ওয়েন মেসিক (Owen Messick) বলেন, চীনের প্রথম আন্তর্জাতিক আমদানি মেলায় অংশ নেয়ার পর তাঁর কোম্পানির জন্য অনেক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
মার্কিন ডোটেরা কোম্পানির চীনে চেয়ারম্যান (TERRA China) ওয়েন মেসিক বলেন, “আমাদের কোম্পানির মতো ক্ষুদ্র কোম্পানি চীনে অনেক সুযোগ পেয়েছে। চীনের যথেষ্ট বড় বাজার আছে।”
দশ বছরে চীন নিজেকে বিশ্বের জন্য আরও উন্মুক্ত করেছে। চীনে পরীক্ষামূলক অবাধ বাণিজ্যিক এলাকা এক থেকে ২১টিতে পৌঁছেছে। এলাকাগুলোর আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ সমস্ত চীনের ১৭.৩ শতাংশ এবং আকর্ষিত বিদেশী বিনিয়োগ গোটা চীনের ১৮.৫ শতাংশ।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবছর প্রকাশিত ‘ব্যবসা পরিবেশ প্রতিবেদন’-এ বলা হয়েছে, চীনের ব্যবসা পরিবেশ ২০১৫ সালে বিশ্বের ৯০তম থেকে ২০২০ সালে ৩১তম স্থানে উঠে এসেছে। বস্তুত, আজকের চীন বিশ্বের সঙ্গে আরও গভীরভাবে মিলেমিশে আছে। (ছাই/আলিম)