সেপ্টেম্বর ২২: ২০২১ সালে আফ্রিকার অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের তীব্র গতি দেখা গেলেও, সাম্প্রতিক কালে এসে অধিকাংশ আফ্রিকান দেশ ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও খাদ্য-সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে।
সম্প্রতি, আফ্রিকান দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি অনেক বেড়েছে, মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক "আফ্রিকান ইকোনমিক আউটলুক রিপোর্ট, ২০২২"-এ বলেছে, আফ্রিকান অঞ্চলের গড় মুদ্রাস্ফীতি চলতি বছর ১৩.৫ শতাংশে পৌঁছাবে।
কেনিয়ার ন্যাশনাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিকসের মহাপরিচালক ম্যাকডোনাল্ড ওবুডো বলেছেন, জুলাই ২০২১ ও জুলাই ২০২২-এর মধ্যে, দেশের মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে প্রধানত খাদ্য এবং অ-অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ের মূল্য ১৫.৩ শতাংশ বৃদ্ধির কারণে। সর্বশেষ তথ্যানুসারে, কেনিয়ার মুদ্রাস্ফীতির হার আগস্টে ৮.৫ শতাংশে পৌঁছেছে, যা পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে বাস করেন চিকু মাইকেল। তিনি বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয় তীব্রভাবে বাড়ছে। "গত মাসে মূল খাদ্যের দাম ভয়ঙ্করভাবে বেড়েছে”—তিনি বলেন।
আফ্রিকার অন্যান্য দেশের মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতিও ভালো নয়। আফ্রিকার বৃহত্তম অর্থনীতি নাইজেরিয়ার মুদ্রাস্ফীতি চলতি বছরের জুলাই মাসে ১৯.৬৪ শতাংশে পৌঁছায়। জুলাই মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার মুদ্রাস্ফীতি পৌঁছায় ৭.৮ শতাংশে, যা ২০০৮ সালের আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকটের পর সর্বোচ্চ।
মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমানোর জন্য, অনেক আফ্রিকান দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়েছে ও তারল্য বাড়িয়েছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে। "আফ্রিকান ইকোনমিক আউটলুক রিপোর্ট" ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, আফ্রিকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০২২ সালে ৪.১ শতাংশ হবে, যা ২০২১ সালের ৬.৯ শতাংশ থেকে অনেক কম।
আফ্রিকা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। অঞ্চলটিকে প্রচুর খাদ্য আমদানি করতে হবে। ইউক্রেন সংকট আফ্রিকার খাদ্য আমদানির ওপর প্রভাব ফেলেছে। আফ্রিকান দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সাথে সাথে এটি খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যাও সৃষ্টি করেছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে, আফ্রিকা রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে ৫.১ বিলিয়ন মেট্রিক টন গম আমদানি করেছে, যা আফ্রিকার মোট গম আমদানির ৪৪ শতাংশ।
ইউক্রেন সংকট সৃষ্টির পর, পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং আফ্রিকার খাদ্য আমদানি কমতে থাকে। বর্তমানে, হর্ন অফ আফ্রিকা অঞ্চল কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ খরার সম্মুখীন হচ্ছে এবং খাদ্য উত্পাদন দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব কেনিয়ায়, কিছু কৃষি অঞ্চলে এই বছর পাঁচ বছরের গড় তুলনায় প্রায় ৮০ শতাংশ কম ভুট্টা সংগ্রহ করা যাবে। কেনিয়ার জাতীয় খরা কর্তৃপক্ষের মতে, বর্তমানে দেশে প্রায় ৪.১ মিলিয়ন মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা চলতি বছরের প্রথমার্ধে এই মর্মে সতর্ক করে দিয়েছিল যে, আফ্রিকার ৩৪৬ মিলিয়ন মানুষ খাদ্য সংকটে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে, ১৪ মিলিয়নেরও বেশি নাইজেরিয়ান একটি গুরুতর খাদ্য ও পুষ্টি সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে এবং এই সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
নাইজেরিয়ার জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য দেখায় যে, নাইজেরিয়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার এই বছরের আগস্টে ২৩.১২ শতাংশে পৌঁছেছে। সমীক্ষা দেখায় যে, অনেক নাইজেরিয়ান এখন তাদের আয়ের ৮৫ শতাংশ খাবার কেনার জন্য ব্যবহার করছেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর প্রেসিডেন্ট জর্জিয়েভা কয়েকদিন আগে বলেছিলেন যে, বর্তমান বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি এবং খাদ্য ও জ্বালানি খাতে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে, যা বিশ্বের প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে সুদের হার বাড়াতে এবং আর্থিক কঠোর নীতি বাস্তবায়নের জন্য প্ররোচিত করছে। এতে আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশকে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও উচ্চ ঋণের দ্বৈত চাপের মুখে ফেলেছে।
আইএমএফের এক হিসেব অনুসারে, ২২টি আফ্রিকান দেশ বর্তমানে ঋণ সংকটে রয়েছে বা ঋণ সংকটে পড়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। মোদ্দাকথা, আফ্রিকার অর্থনীতি এখন মারাত্মক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)