আন্তর্জাতিক শান্তি দিবসে যুদ্ধের বিরোধিতা এবং শান্তির প্রত্যাশা
2022-09-21 10:19:50

সেপ্টেম্বর ২০: গত শুক্রবার ৪১তম আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ তার বার্ষিক শান্তি ঘণ্টা বাজানো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ১৯৮১ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ প্রতিবছর ২১শে সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এই ২৪ ঘণ্টা সহিংসতা ও যুদ্ধ বন্ধ করতে সবদেশকে আহ্বান জানিয়ে বিশ্ব শান্তির দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করা হয়। বৈশ্বিক বিরোধের মাঝেই চলতি বছর জাতিসংঘ তার নির্ধারিত সময়ের আগে ঘণ্টা বাজানো অনুষ্ঠান করেছে।

 

রীতি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের পিস গার্ডেনে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের নতুন সভাপতি এবং হাঙ্গেরীয় কূটনীতিক কাসাবা করোসি শান্তি ঘণ্টা বাজিয়ে ঘটনাস্থলে এক বক্তৃতা করেন। তিনি বলেছিলেন যে সারা বিশ্বে শান্তি বিপদে রয়েছে। স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন বিশ্বে সশস্ত্র সংঘাতের সংখ্যা বেশি।

 

অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও উপস্থিত ছিলেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আজ আমরা অনুষ্ঠান পালন করার সময় হামলার মুখে পড়েছে শান্তি। যুদ্ধের বিষ আমাদের বিশ্বকে দূষিত করছে।’

 

তিনি আরও বলেন, সংঘাত বিশ্বকে একটি অভিন্ন লক্ষ্য থেকে আরও দূরে নিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধক্ষেত্রে একে অপরের সাথে লড়াই করার পরিবর্তে, দারিদ্র্য, ক্ষুধা, বৈষম্য এবং বর্ণবাদের হুমকির পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, জীব-বৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং মহামারীসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য মানবতার ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।

 

বিংশ শতাব্দীর ৯০-এর দশকে, স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তি একটি সম্পূর্ণ নতুন বিশ্ব নিরাপত্তা পরিবেশ গঠন করেছিল। তার পর সূচিত সকল যুদ্ধই ছিল গৃহযুদ্ধ। একবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে নতুন বৈশ্বিক হুমকি আবির্ভূত হয়। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলা স্পষ্ট করেছে যে সন্ত্রাসবাদ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চ্যালেঞ্জ করেছে।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থা ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার ফলে শান্তির প্রতি মানুষের আহ্বান আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠেছে। আমি ভাবছি, প্রতিটি আন্তর্জাতিক শান্তি দিবসে আমাদের ভাবা উচিত যে যুদ্ধ কি একবারের জন্য সব সমস্যার সমাধান করতে পারে, নাকি সীমাহীন কষ্ট সৃষ্টি করতে পারে?

 

২০০১ সালের পর যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাস-বিরোধী’ যুদ্ধের নামে বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে সামরিক অভিযান চালিয়েছে, ৮ লাখেরও বেশি লোককে হত্যা করেছে এবং আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া এবং অন্যান্য দেশের কোটি কোটি মানুষকে গৃহহারা করেছে।

 

সম্প্রতি মার্কিন সাংবাদিক নোটোন সেদেশের কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিসের রিপোর্টের বরাত দিয়ে জানান, স্নায়ুযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের অভিযান ব্যাপক হারে বেড়েছে। বৈশ্বিক আধিপত্য এবং আগ্রাসী বৈদেশিক নীতির উপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের জন্য সীমাহীন সামাজিক অশান্তি এবং ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নিয়ে এসেছে।

 

অন্ধকার অন্ধকারকে দূর করতে পারে না; কেবল আলোই তা করতে পারে। যুদ্ধ নয়-ভালোবাসাই পারে সব সমস্যার সমাধান করতে।

 

শান্তির জন্য প্রয়োজন বাস্তব অভিযান, প্রচেষ্টা ও ত্যাগ। বিশ্ব শান্তি রক্ষায় চীন কখনোই অনুপস্থিত নয়। দক্ষিণ সুদান, লেবানন, ও দারফুরে চীনের শান্তিরক্ষী বাহিনী শান্তির প্রয়োজনে কাজ করছে। চীন ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ শুরু করেছে। গত ৩০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে মোট ১৬ জন চীনা শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালনের সময় মারা গেছেন। চীনা শান্তিরক্ষী সৈন্যদের অংশগ্রহণে এক একটি শান্তিরক্ষার কার্যক্রম দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে চীনের ভাবমূর্তি প্রদর্শন করেছে এবং জনগণের অসংখ্য প্রশংসাও অর্জন করেছে।

 

পৃথিবী রঙিন এবং বৈচিত্র্যময়। প্রত্যেকেরই শান্তির অধিকার রয়েছে। যুদ্ধের নয়, বরং শান্তি ও উন্নয়ন মানব সমাজের চিরন্তন লক্ষ্য হওয়া উচিত। লিলি/এনাম/রুবি