পারস্য উপসাগরের তীরে অবস্থিত গ্রীষ্মপ্রধান দেশ কাতার। দেশে পূর্ণাঙ্গ নদী ও স্থায়ী হ্রদ নেই। বছরে গড়পড়তা বৃষ্টির মান মাত্র ১০০ মিলিমিটারের মত। এই দেশে ‘তেলের চেয়ে পানি অনেক বেশি মূল্যবান’। পানীয় জলের মজুদ এবং সরবরাহের ক্ষমতা বাড়ানো এবং ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপকে সামনে রেখে পরিচ্ছন্ন পানীয় জল সরবরাহের জন্য কাতার মরুভূমিতে ১৫টি বিশ্বের বৃহত্তম পানির জলাধার নির্মাণ করছে। এর মধ্যে কিছু অংশ নির্মাণ করছে চীনা প্রতিষ্ঠান।
কাতারের রাজধানী দোহা থেকে দক্ষিণে ৭০ কিলোমিটার দূরের মরুভূমিতে এই জলসেচ প্রকল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। এই প্রকল্পে সমুদ্রের পনির বিশুদ্ধকরণ, মজুদ ও সরবরাহ করা যায়। নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের এপ্রিলে। দেশের ৫টি স্থানে ১৫টি বিশাল বড় আকারের ট্যাংক নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ‘ই’ অংশের নির্মাণ কাজ করছে চীনের ক্য চৌ বা গ্রুপ। এই প্রকল্পের চীনা অংশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ওয়াং শাও হুয়া জানান,
এই ট্যাংক ৩০৫ মিটার লম্বা, ১৫০ মিটার চওড়া এবং ১১.৩ মিটার উঁচু। যা বিশ্বের বৃহত্তম ট্যাংক। এর ধারণক্ষমতা ৫ লাখ ঘনমিটার এবং ২০ লাখ মানুষের এক দিনের পানির চাহিদা পূরণ করতে পারবে। নির্মাণ শেষ হলে কাতারের পানি সরবরাহের সামর্থ্য অনেক বাড়বে। এর কৌশলগত তাত্পর্যও অনেক। বিশেষ অবস্থায়, যদি কাতারের অন্যান্য পানি সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়, এই ট্যাংক কাতারের সাত দিনের পানি চাহিদা মেটাতে পারে।
চীনা প্রতিষ্ঠানের নির্মাণাধীন প্রকল্প দোহা ও উম সায়েদে পানি সরবরাহ করছে। সেই সঙ্গে তা কাতার ফিফা বিশ্বকাপের সময় দেশে ও দশ লাখেরও বেশি পর্যটকের পানির চাহিদা পূরণের গুরুত্বপূর্ণ নিশ্চয়তা। মরুভূমির গভীরে এমন বড় আকারের প্রকল্প নির্মাণ করা অনেক কঠিন কাজ। কাতারের আবহাওয়া বেশ গরম ও শুকনো, বাতাস ও বালিঝড় অনেক, প্রচুর রোদ। বছরের অর্ধেক উচ্চ তাপমাত্রায় থাকে। মরুভূমিতে বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারেরও বেশি। এমন চরম অবস্থায় প্রকল্প নির্মাণ করা বড় একটি চ্যালেঞ্জ।
ওয়াং শাও হুয়া জানান,
চীনা প্রতিষ্ঠানের এই প্রকল্প পাওয়ার কারণ হল মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিষ্ঠানটির এমন ট্যাংক নির্মাণের অভিজ্ঞতা আছে। সেই সঙ্গে তাদের নির্মাণ প্রযুক্তির মান বিশ্বের অত্যাধুনিক মানের। আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ নির্মাণের সময় সাশ্রয় করেছে, নির্মাণের গুণগতমান নিশ্চিত করেছে, খরচ সাশ্রয় হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় প্রকল্পের মানদণ্ড এবং কাজের প্রক্রিয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য চীনা প্রতিষ্ঠান প্রকল্পকে আন্তর্জাতিক মানের করেছে, কাতারের বাজার সম্পর্কে ভালোভাবে জানা কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিদেশি কর্মীদের পেশাদার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর ফলে একটি শ্রেষ্ঠ আন্তর্জাতিক কর্মদল গঠন করা হয়েছে।
অনেক বিদেশি কর্মী এই প্রকল্পে কাজের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করেছে। সেই সঙ্গে এই বড় পরিবারের উষ্ণতা উপভোগ করতে পেরেছে। চীনা কর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে। মিশরের উচ্চপদস্থ প্রকৌশলী হাদি সিদ্দিকী বলেন,
এখানে কাজ করা খুব ভালো একটি অভিজ্ঞতা। আমি অনেক চীনা বন্ধু পেয়েছি। তাদের কাছ থেকে আমি চীনাদের দায়িত্বশীল মনোভাব উপভোগ করেছি। যা চীনের দ্রুত উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাদের সঙ্গে কাজ করে আমি অনেক নতুন সংস্কৃতি ও অভিজ্ঞতার স্বাদ পেয়েছি। আমি শ্রেষ্ঠ কর্মী হিসেবে চীনেও গিয়েছিলাম। চীনের সবকিছু এত সুন্দর, আমি চীন পছন্দ করি।
বর্তমানে চীনা প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ, চূড়ান্ত যাচাইয়ের পর্যায়ে রয়েছে। কাতার কর্তৃপক্ষও বার বার চীনা প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজের প্রশংসা করেছে।
(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)