আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব৯১
2022-09-15 17:30:37

আকাশ ছুঁতে চাই  পর্ব৯১

যা রয়েছে এবারের পর্বে

১. চা নারী শ্রমিকরা অবর্ণনীয় কষ্ট করছেন:  মারজিয়া প্রভা, নারীবাদী অ্যাকটিভিস্ট

২. .মধ্য শরৎ উৎসবের গান

৩ . সংস্কৃতিকে কাজে লাগাচ্ছেন কুইচোওর নারীরা

৪. চা বিশেষজ্ঞ শি সিয়াও

 

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি ভালো আছেন। আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আমরা সবসময় কথা বলি নারীর সাফল্য, সংকট, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে।

চা নারী শ্রমিকরা অবর্ণনীয় কষ্ট করছেন:  মারজিয়া প্রভা, নারীবাদী অ্যাক্টিভিস্ট

আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আমাদের আজকের অতিথি মারজিয়া প্রভা। তিনি একজন নারীবাদী অ্যাকটিভিস্ট। বাংলাদেশে বিভিন্ন চা বাগানে নারী চা শ্রমিকদের অধিকার অর্জনে কাজ করেছেন কয়েক বছর ধরে। তার সঙ্গে আমরা নারী চা শ্রমিকদের প্রসঙ্গে কথা বলবো। আমাদের অনুষ্ঠানে তাকে স্বাগত জানাই।

 

                                           

সাক্ষাৎকার

মারজিয়া প্রভা বেশ কয়েক বছর ধরে চা বাগানগুলোতে নারী শ্রমিকদের অধিকার অর্জনে কাজ করেছেন। তিনি বেশ কয়েকটি চা বাগানে ভিজিট করে সেখান অবস্থা দেখেছেন স্বচক্ষে। চা বাগানগুলো মূলত প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রিটিশ শাসনামলে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ধারা এবং অমানবিক শোষণ প্রথা এখনও কিছু কিছু সেখানে রয়ে গেছে বলে জানালেন তিনি।

প্রভা জানালেন, চা বাগানগুলোতে যেখানে নারী শ্রমিকরা কাজ করেন সেখানে কোন ওয়াশরুম নেই। ফলে নারী শ্রমিকদের বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়। তারা মাতৃত্বকালীন ছুটি পান। তবে প্রসবকালীন সেবার অবস্থা খুবই খারাপ। শ্রমিকদের বাসস্থান থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র অনেক দূরে। প্রশিক্ষিত ধাত্রীর সংখ্যা খুব কম। তাই তাদের মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি। ‘নারী শ্রমিকরা অবর্ণনীয় কষ্ট করছেন’, বললেন প্রভা।

নারী শ্রমিকরা তাদের প্রান্তিক অবস্থানের কারণে  আবার নারী হওয়ার কারণে দ্বিমুখী শোষণের শিকার হচ্ছে। শ্রমিক ইউনিয়নে পুরুষদের আধিপত্য রয়েছে। ফলে নারীর কণ্ঠস্বর সেখানে শোনা যায় না।

মারজিয়া প্রভা মনে করেন নারী শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ হতে হবে। তাদের অধিকারগুলো অর্জনে সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং সচেতনতার বিকল্প নেই।

 

মধ্য শরৎ উৎসবের গান

চীনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো মধ্য শরৎ উৎসব। এটি চীনের অন্যতম বড় সামাজিক উৎসব। এ উপলক্ষে চায়না মিডিয়া গ্রুপ আয়োজন করে গালা অনুষ্ঠানের। জাঁকজমক পূর্ণ এই অনুষ্ঠানে নাচ গান , নাটক পরিবেশিত হয়। এই উৎসবের থিম হচ্ছে চাঁদ। তাই চাঁদকে কেন্দ্র করে পরিবেশিত হয় অনেক গান। এখন শুনবো এমনি একটি গান। চীনের সং রাজবংশের সময়কার বিখ্যাত কবি সু শির লেখা নিয়ান নু চিয়াও কবিতা অবলম্বনে গানটি সৃষ্টি করা হয়েছে। গালা উৎসবে গানটি পরিবেশন করেছেন দুজন বিখ্যাত চীনা কণ্ঠশিল্পী সা তিংতিং এবং আইয়ানগা। চলুন শোনা যাক এই গান।

 

সংস্কৃতিকে কাজে লাগাচ্ছেন কুইচোওর নারীরা

সুপ্রিয় শ্রোতা, চীনের কুইচোও প্রদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় নারীদের আয় বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

 

 

দক্ষিণ পশ্চিম চীনের কুইচোও প্রদেশ। এখানকার লোকজ সংস্কৃতি অনেক সমৃদ্ধ। এই সংস্কৃতিকে কাজে লাগিয়ে গ্রামীণ নারীদের আয় বৃদ্ধির একটি প্রকল্প সম্প্রতি হাতে নিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। কুইচোও প্রদেশের রাজধানী হলো কুইইয়াং। এখানকার একটি টাউনশিপ ছিংইয়ান। এই টাউনশিপের গ্রাম শানওয়াংমিয়াও। এখানে মিয়াও জাতির এমব্রয়ডারি ও বাটিক বিখ্যাত।

 সম্প্রতি এই এলাকার ২০০০ স্থানীয় গ্রামীণ নারী আয় বৃদ্ধির প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন। তারা বাটিক ও এমব্রয়ডারির মতো লোকজ শিল্পজাত সামগ্রী তৈরি করছেন। এখানে অনেক প্রবীণ নারী আসছেন। আবার অনেক নারী তাদের শিশু সন্তানকে কোলে নিয়েই এসেছেন। এর ফলে যারা শিশু সন্তানের জন্য বাইরে চাকরি করতে পারছেন না বা যারা প্রবীণ নারী অবসর জীবন কাটাচ্ছেন তাদেরকেও আয় বৃদ্ধি প্রকল্পে সংযুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

 

এ ধরনের সৃজনশীল পণ্য তৈরি করে সেগুলোকে বিপণন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের হস্তশিল্পজাত সামগ্রী দেশের অন্যান্য স্থানে বিপণনের ব্যবস্থা করে একদিকে গ্রামীণ নারীদের আয় বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছেন অন্যদিকে স্থানীয় সংস্কৃতির প্রসারেও ভূমিকা রাখছেন।

চা বিশেষজ্ঞ শি সিয়াও

সুপ্রিয় শ্রোতা কারিগরী পেশায় আজকাল অনেক নারী এগিয়ে আসছেন এবং সাফল্য পাচ্ছেন। এমনি একজন সফল নারী শি সিয়াও। তিনি হলেন একজন চা বিশেষজ্ঞ। চলুন শোনা যাক তার গল্প।

চীনে নতুন ধরনের কারিগরী পেশায় নারীরা এগিয়ে আসছেন। আগে কারিগরী শিক্ষার(ভোকেশনাল) প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কম ছিল। বিশেষ করে নারীদের। তারা হাইস্কুল পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণেই বেশি আগ্রহ প্রকাশ করতো। কিন্তু বর্তমানে নানা ধরনের ভোকেশনাল শিক্ষা গ্রহণের প্রতি নারীদের আগ্রহ বাড়ছে। এমনি একজন নারী শি সিয়াও। মাত্র একুশ বছর বয়সেই তিনি ছোংছিংয়ের একটি নামকরা রেস্টুরেন্টের চা বিশেষজ্ঞের কাজ করছেন। স্কুলের সহপাঠীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া চালাচ্ছেন এবং অনেকে তাদের ভবিষ্যতের কর্মজীবন কেমন হবে সেই অনিশ্চয়তায় রয়েছেন সেই সময়ের মধ্যে শি সিয়াও নিজেকে ক্যারিয়ারে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন।

ছোংছিং ইকোনমি অ্যান্ড ট্রেড সেকেন্ডারি ভোকেশনাল ট্রেনিং স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করেন শি সিয়াও।

তার বাবা মায়ের ইচ্ছা ছিল না মেয়ে ভোকেশনাল স্কুলে যাক। তারা চেয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে। কিন্তু শি চেয়েছিলেন চা বিশেষজ্ঞ হতে।২০১৬ সালে যোগ দিয়ে তিন বছর ভোকেশনাল স্কুলে শিক্ষাগ্রহণ করেন শি। হাতে কলমে শিখতে গিয়ে তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়। চা পাতা শুকানোর উত্তাপে তার হাতের ত্বক খসখসেও হয়ে যায়।

শি সিয়াও চা বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রাদেশিক এবং জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার জয় করেছেন। তিনি মনে করেন কারিগরী পেশাগুলোতে অতীতে পুরুষদের আধিপত্য থাকলেও এখন এসব পেশায় নারীরা এগিয়ে আসছেন এবং বেশ উন্নতি করছেন, সম্মানও অর্জন করছেন।

আজ আর কথা নয়, আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি আমরা। আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন শর্ট ওয়েভ ৯ হাজার ৪শ ৯০ এবং শর্ট ওয়েভ ১১ হাজার ৬শ ১০ কিলোহার্টজে। আরও শুনতে পাবেন সিআরআই বাংলার ওয়েবসাইটে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজ facebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবং আমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক  সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা,উপস্থাপনা : শান্তা মারিয়া

সংস্কৃতিকে কাজে লাগাচ্ছেন কুইচোওর নারীরা এবং চা বিশেষজ্ঞ শি সিয়াও, প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী ও শান্তা মারিয়া